#কলকাতা: কোভিডের নতুন ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রন (Omicron) নিয়ে ফের বিশ্ব জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সংক্রামকদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ থাকলেও এই নতুন প্রজাতির ভাইরাসটি একের পর এক দেশগুলিতে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ৬৩টি দেশে থাবা বসিয়েছে ওমিক্রন। এমনকী, গ্লোবাল হেলথ অর্গানাইজেশন পরামর্শ দিয়েছে, ওমিক্রন সংক্রমণের দৌড়ে ডেল্টা (Delta) ভ্যারিয়ান্টকে ছাড়িয়ে যাবে (Omicron death)। এরই মধ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গিয়েছে। গত সোমবার বিটেন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘোষণা করে (Omicron death)। B.1.1.529 ভ্যারিয়ান্টকে প্রাথমিকভাবে 'হালকা' বলে মনে করা হলেও ব্রিটেনের প্রথম মৃত্যুর ঘটনায় রীতিমতো চিকিৎসকদের চিন্তায় ফেলেছে। তাই নতুন সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য উদ্বেগ রয়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন:অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে আতঙ্কিত চিকিৎসক-মহল, সামনেই ওঁত পেতে বিপদ
কখন ডাক্তাদের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
নভেল করোনাভাইরাস থেকে শুরু করে দ্বিতীয় টেউতে করোনার ডেল্টা প্রজাতিতে শুধু আক্রান্তই হননি, একইসঙ্গে বিশ্ব জুড়ে বিপুল পরিমাণ মানুষ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছিলেন। তার পর এখন ওমিক্রনের সংক্রমণ নিয়ে বেশ আতঙ্কিত রয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। যার মধ্যে ব্রিটেনের মৃত্যুর খবর নতুন প্রজাতির কোভিড-১৯ নিয়ে যে আরও এক ধাপ আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রথম থেকেই সার্স-কোভ-২ (SARs-COV-2) ভাইরাস যে মানুষের উপর অত্যন্ত অপ্রত্যাশিতভাবে আক্রমণ আনছে তা বলাই বাহুল্য। যদিও এখন পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্ত কিছু মানুষ উপসর্গহীন হয়েছেন বা কারও শরীরে হালকা থেকে মাঝারি সংক্রমণ দেখা গিয়েছে,তবে কিছু মানুষ গুরুতর অসুস্থতারও শিকার হতে পারেন। তাই ওমিক্রনের অগ্রগতি অবশ্যই অনেকের জন্য উদ্বেগের বিষয়। নতুন প্রজাতির ভাইরাসকে প্রাথমিকভাবে হালকা সংক্রমণের মতো মনে হলেও তা যে আরও বিপজ্জনক হতে পারে তা নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। তাই কোনও উপসর্গ দেখা দিলে প্রাথমিকভাবে সতর্ক হওয়া খুবই জরুরি। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের মতে, আক্রান্তের সমস্ত লক্ষণ এবং রোগের অগ্রগতি নজরে রাখতে হবে। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীর হালকা অসুস্থতা থাকলে জ্বর, শুকনো কাশি, ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি হ্রাস পেতে পারে। আবার যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা অনুভব হয় এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় অথবা অক্সিজেনের মাত্রা নেমে যায় তাহলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
আরও পড়ুন: করোনার টিকা নেওয়ার পরে ১৫ মিনিটের পর্যবেক্ষণ কেন সবার জন্য প্রয়োজনীয় নয়?
আগে থেকে শারীরিক অসুস্থতা থাকলে সতর্কতা
আগে থেকে কোনও শারীরিক অসুস্থতা থাকলে কোভিড-১৯ যে কারও শরীরে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ এমনকী সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রকোপ আসার আগেও, দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের নতুন কোনও অসুস্থতার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ছিল। আর কোভিড-১৯ শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা হওয়ায়, দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), পালমোনারি ফাইব্রোসিস, পালমোনারি এমবোলিজম কিংবা হাঁপানির মতো ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গুরুতরভাবে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার যে কোভিড-১৯-এ শুধুমাত্র ফুসফুসের সংক্রমণ হয় না, এই মারণ ভাইরাস রোগীর শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং হার্ট, মস্তিষ্ক, কিডনি, লিভার এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, কারও কোনও কার্ডিওভাসকুলার রোগ কিংবা ডায়াবেটিস বা ফ্যাটি লিভার থাকলে, তাদের অন্যান্য সুস্থ ব্যক্তিদের তুলনায় কোভিডে বেশি জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়।
বয়স্কদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে
বয়সও কোভিড সংক্রণের একটি ঝুঁকির বিষয়। এক্ষেত্রে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীরা কোভিডে বেশি সংবেদনশীল বলে দেখা গিয়েছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (CDC) মতে, কোভিডের কারণে হাসপাতালে প্রাণ হারিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ৪২%-এর বেশি মানুষ হলেন ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী। এবিষয়ে স্পষ্ট কারণও রয়েছে যে বেশিরভাগ প্রবীণ মানুষের কোনও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে কোভিড-১৯- স্বাভাবিকভাবেই তাদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। আবার বয়সের সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বলেও সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায় এবং প্রদাহের ফলে শরীরের অঙ্গগুলির বেশি ক্ষতি হতে পারে৷ সেই জন্যই তরুণ-তরুণীদের তুলনায় বয়স্কদের ভাইরাসের প্রভাব বেশি হওয়ার আশঙ্কায় টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।
দুর্বল ইমিউনিটিও ভয়ের কারণ
প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোনও সংক্রমণের মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইমিউনিটি আমাদের সুস্থ থাকতে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম করে তোলে। তাই দুর্বল ইমিউনিটি কারও জন্যই সুখকর নয়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে তোলে। এই দুর্বল ইমিউনিটির কারণ হতে পারে কোনও জেনেটিক অবস্থা, চিকিৎসাহীন এইচআইভি, দীর্ঘমেয়াদী স্টেরয়েড ব্যবহার, কোনও অঙ্গ বা রক্তের স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট এবং নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার এবং ক্যানসারের বিভিন্ন চিকিৎসা ইত্যাদি। যার ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণেও মারাত্মক আকার নিতে পারে।
স্থূলতাও গুরুতর অসুখ হতে পারে
বয়স কম হোক বা বেশি বিভিন্ন রোগের জন্য স্থূলতা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রেও, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে বডি মাস ইনডেক্স (BMI) যুক্ত রয়েছে৷ সিডিসি ( CDC)-র মতে, স্থূলতা হল সম্ভবত ক্রনিক প্রদাহের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি মেটাবলিক রোগ যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম এবং প্যাথোজেনে থ্রম্বোজেনিক প্রতিক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। একই সঙ্গে ওজন বেশি থাকলে ফুসফুসের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই শুধু ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখলেই চলবে না, সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
টিকা না নিলে ঝুঁকি রয়েছে
বর্তমানে কোভিড-১৯ টিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং আগামী দিনেও ততটাই থাকবে। বিশেষ করে যখন এই ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়ান্ট আসতেই থাকছে সেখানে শারীরিকভাবে দুর্বল মানুষের জন্য ঝুঁকি থাকবে। এর আগে যেভাবে সংক্রমণ হয়েছে সেখানে টিকা নেওয়া থাকলে বা না থাকলে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, কিন্তু টিকা নেওয়া থাকলে ভাইরাসের তীব্রতা কমে যাবে বলে মত চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের। পাশাপাশি ভ্যাকসিন নিলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় এবং রোগের জটিলতা বিশেষ করে মৃত্যুর ঝুঁকি কম করে। তাই বর্তমানে করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে বর্তমানে সতর্কতা এবং টিকা হল দু'টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র যা মারাত্মক সার্স-কোভ-২ (SARs-COV-2) ভাইরাস থেকে নিজেকে এবং প্রিয়জনকে রক্ষা করতে পারে।
বুস্টার ডোজ কি পরবর্তী পদক্ষেপ?
একের পর এক নতুন ভ্যারিয়ান্ট আসতে থাকা এবং ভ্যাকসিনের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় আরও সমস্যা বাড়ায়, বুস্টার শট নিতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে বুস্টার ডোজ এই মারণ ভাইরাসের বিভিন্ন প্রজাতির বিরুদ্ধে আরও ভালো সুরক্ষা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে টিকার আগের ডোজের পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া ইমিউন সিটেমকে পুনরায় বাড়িয়ে দেবে বুস্টার ডোজ। যদিও ভারতে বুস্টার ডোজ নেওয়ার বিষয়টি আলোচনার স্তরে রয়েছে। তবে অনেক দেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করে দিয়েছে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Omicron