Rupee Fall: ভারতীয় মুদ্রার রেকর্ড পতন! মুদ্রাস্ফীতি কীভাবে মধ্যবিত্তকে প্রভাবিত করবে?
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
Rupee Fall: এক ধাক্কায় ভারতীয় মুদ্রার দাম সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। মধ্যবিত্তের পকেটে চাপ পড়বে কীভাবে!
#নয়াদিল্লি: বেশ কিছু দিন হয়ে গেল দেশে নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। নানা রকমের খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্য তেল, এমনকী প্রসাধনীও এই মূল্যবৃদ্ধির তালিকাভুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে, সাধারণ মানুষ বেশ সমস্যার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছিলেন। আশা ছিল পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার, কিন্তু এরই মধ্যে এক ধাক্কায় কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হয়েছে ভারতীয় অর্থনীতি।
সোমবার ভারতীয় মুদ্রা মার্কিন ডলার প্রতি ৫৪ পয়সা কমে ৭৭.৪৪ টাকায় পৌঁছয় যার ফলে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। বিদেশি তহবিলের অবারিত বহির্প্রবাহ এবং অন্যান্য বিশেষ কিছু কারণে প্রায় এক ধাক্কায় ভারতীয় মুদ্রার দাম সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।
স্বভাবতই ভারতীয় মুদ্রার ক্ষতিতে লাভের মুখ দেখছে মার্কিন ডলার। বছরের শুরু থেকে এখনও অবধি প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে মার্কিন মুদ্রা। কিন্তু ডলারের এই ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি ভারতীয় মুদ্রার জন্য অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
advertisement
advertisement
বছরের শুরু থেকে রুপির যে দরপতন হতে শুরু করেছিল, এখনও পর্যন্ত তা প্রায় ৮ শতাংশ কমেছে। গত সপ্তাহে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (Reserve Bank of India) মুদ্রানীতি কমিটি (MPC) দ্বারা দর বৃদ্ধি করার পরেও ভারতীয় মুদ্রার পতনকে থামানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
মুদ্রার ক্ষতি রোধ করার জন্য আরবিআই (RBI) ফরেক্স রিজার্ভ ব্যবহার করছে। RBI-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফরেক্স রিজার্ভও এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে।
advertisement
ডলার প্রতি ভারতীয় মুদ্রার দাম হ্রাস পাশাপাশি অন্যান্য দেশের মুদ্রাতেও একই প্রভাব দেখা গিয়েছে। উল্লেখযোগ্য দেশগুলির মধ্যে জাপানি মুদ্রা ইয়েনে সবচেয়ে বেশি পতন দেখা গিয়েছে। ডলার প্রতি ইয়েনের মূল্য ১১.৯ শতাংশ কমেছে। অন্য দিকে, পাউন্ডের মূল্য প্রতি ডলারে ৮.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
ভারতীয় মুদ্রার মূল্য কমে যাওয়ার পেছনে কী কী কারণ রয়েছে? নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
advertisement
ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি
বিশ্বব্যাপী অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি রুপির দুর্বলতার অন্যতম প্রধান কারণ। প্রকৃতপক্ষে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির গোলমালের পর থেকেই ভারতীয় মুদ্রার সূচক নিম্নমুখী হয়।
বেশিরভাগ প্রধান পশ্চিমা অর্থনীতির দেশগুলি রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যার ফলে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী এই সংকট মূল্যস্ফীতির ভয়কে বাড়িয়ে তুলেছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছে।
advertisement
সরবরাহ বিধিনিষেধের প্রেক্ষিতে অপরিশোধিত তেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় বেড়ে যাওয়ার ফলে আমদানির খরচ থেকে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশে, স্বাভাবিকভাবেই অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।
বন্ডের ক্রমবর্ধমান ফলন
সোমবার ভারতের ১০ বছরের বেঞ্চমার্ক বন্ড ৯৩.৬৯ টাকার উচ্চতায় বন্ধ হয়েছে। এদিন বন্ডের মূল্য ৭.৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এর আগে এই বন্ডের মূল্য ৭.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল যার ফলে বন্ডের দাম দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি সরকার বন্ডগুলিকে কেনার বা উন্মুক্ত বাজারে ছেড়ে দেওয়া নির্দেশ দিয়েছে ভারতয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে।
advertisement
মুদ্রাস্ফীতি উদ্বেগ
চিনে নতুন করে কোভিড-১৯ লকডাউনের এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন (Russia Ukraine War) মুদ্রাস্ফীতির চাপকে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফেড (Fed) নীতি কমিটি গত সপ্তাহে সুদের হার অর্ধেক পয়েন্ট বাড়িয়েছে যা ২০০০ সালের পর থেকে সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এর থেকেও বড় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী সরবরাহের ঘাটতি ঘটায় স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা বেড়েছে। ১৯৮০-এর দশকের পর থেকে এই প্রথম মুদ্রাস্ফীতির এই হার বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে হাউজিং এবং অটো সেক্টর মুদ্রাস্ফীতির ফলে গুরুতর প্রভাবিত হয়েছে।
advertisement
একদিকে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেড সুদের হার বৃদ্ধি করেছে, একই দিনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতিগত হার ৪০ বেসিস পয়েন্টে বাড়িয়ে ৪.৪০ শতাংশ করে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি কারণে প্রায় অর্ধেক ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) বাস্কেটের জন্য দায়ী। মুদ্রাস্ফীতি মার্চ মাসে অবিশ্বাস্য শিখরে পৌঁছানোর পরে বিশ্বব্যাপী উদ্ভিজ্জ এবং রান্নার তেলের মূল্য বেশিই থাকবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ (Federal Reserve System) ডলারকে ২ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও ডলারের মূল্য আরও বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।
ফরেক্স রিজার্ভে পতন
ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় এক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৬০০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাপ্তাহিক পরিসংখ্যানগত পরিপূরক অনুসারে, ২৯ এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২.৬৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে ৫৯৭.৭২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এটি ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টানা অষ্টম সাপ্তাহিক পতন। প্রায় এক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মার্কের নিচে নেমেছে।
এর আগে ২০২১ সালের ২৮ মে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার স্তরের নিচে নামে। আরবিআই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা সম্পদ, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সবচেয়ে বড় উপাদান, ১.১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে ৫৩২.৮২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এফআইআই (FII) দ্বারা ক্রমাগত বিনিয়োগ প্রত্যাহার
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা (FII) গত ৭ মাস ধরের ভারতীয় ইক্যুইটি মার্কেট থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দ্বারা লগ্নি তুলে নেওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতি এবং মুদ্রার ওপর প্রভাব ফেলছে। ফলস্বরূপ, রুপি ডলারের বিপরীতে দুর্বল হতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন- শেষ হতে চলেছে রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ, এরপর কী হবে?
এই মাসে এখনও পর্যন্ত ৬টি ট্রেডিং সেশন হয়েছে। এই কয়েকটি সেশনেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় স্টক মার্কেট থেকে ২০,০০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের লগ্নি তুলে নিয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে এফআইআইগুলি ভারতীয় বাজার থেকে মোট ২.৯২ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে। গত ৮ মাস ধরে বিদেশি লগ্নিকারীরা ভারতীয় বাজার থেকে তাদের লগ্নি তুলে নিচ্ছে।
অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা
গত ২০টি ট্রেডিং সেশনে মার্কিন ডলারের ক্রমবর্ধমান হারের ফলে রুপি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে। যদিও, যুক্তরাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরো এবং জাপানের ইয়েনের থেকে ভারতীয় মুদ্রার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
গত কয়েকটি কয়েক সেশনে পাউন্ডের মূল্য ১০০ টাকার কাছাকাছি থেকে নেমে ৯৫.৫ টাকায়। অন্য দিকে, ইউরো এবং ইয়েন সামান্য হ্রাস পেয়ে যথাক্রমে ৮১.৭ এবং ৫৯.৩২ টাকায় নেমে এসেছে।
মার্কিন ডলার সূচক ছয়টি প্রধান মুদ্রার বিপরীতে মূল্য নির্ধারণ করে। সোমবার এই ডলারের সূচক পূর্বের ১০৪ স্তরের উচ্চতা অতিক্রম করে ২০ বছরের সর্বাধিক ১০৪.০৭ উচ্চতায় পৌঁছয়। ২০২২ সালে এই সূচকটি ৮ শতাংশ বেড়ে আকাশছোঁয়া ১০৩.৭৯ স্তরে পৌঁছয়। ডলার সূচক ০.০২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১০৩.৯০০ স্তরে পৌঁছয় এবং ইউরোর মূল্য ০.২৪ শতাংশ কমে ১.০৫৩ মার্কিন ডলার হয়।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপ
সম্প্রতি ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ভারতীয় মুদ্রার সুরক্ষার জন্য আরবিআই সমস্ত বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপ করছে।
দুর্বল ইয়ান এবং শক্তিশালী ডলারের কারণে ভারতীয় মুদ্রার ওপর চাপ দেখছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আরবিআই-এর হস্তক্ষেপের ফলে বুধবার রুপি দ্বিতীয় দিনে বেড়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৭৭.২৫ টাকায় স্থগিত হয়।
মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব
ভারতীয় মুদ্রার পতন দরিদ্র থেকে শুরু করে ধনী, সকলকেই প্রভাবিত করবে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে পণ্যের দাম বাড়তে যার চাপ সাধারণ মানুষের পকেটে পড়বে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। পলিসি রেপো রেট আরও বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা সুদের খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে। ব্যাঙ্কগুলি তাদের ঋণের হার বাড়াতে শুরু করবে যার ফলে গ্রাহকদের পরিশোধের সময় অনেক বেশি EMI দিতে হবে।
আরও পড়ুন- নজর দেশের সম্পদে, কেন যুদ্ধভূমির রেল নেটওয়ার্কের উপর হামলা প্রতিবেশী দেশের?
ডলারের দাম রুপির তুলনায় অনেক বেশি হওয়ার ফলে যাঁরা বিদেশে পড়াশোনা করতে চান তাঁদের ওপর এর প্রভাব পড়বে। পড়াশোনার খরচ এবং কলেজ ফি অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। যাঁরা নতুন করে বিদেশে যেতে চান বা যাঁরা বর্তমানে বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন তাঁদের ব্যয় অনেক বেশি বেড়ে যাবে। বিদেশ থেকে ভারতে টাকা পাঠানোর খরচও অনেক বেশি বেড়ে যাবে।
অন্য দিকে, ভারত থেকে রফতানি সস্তা হবে। গত মাসে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী পীযূষ গয়াল (Piyush Goyal) বলেন, যদিও রফতানি সস্তা হবে, তবে তা দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থে হবে না। তিনি আরও বলেন, মুদ্রাস্ফীতি দেশের উন্নতির ওপর চরম প্রভাব ফেলবে।
view commentsLocation :
First Published :
May 12, 2022 2:35 PM IST