ভাড়াটে উঠছে না? পাচ্ছেন না ভাড়া বাড়ি ! মালিক-ভাড়াটে চুক্তিতে সবুজ সঙ্কেত কেন্দ্রের!
- Published by:Piya Banerjee
Last Updated:
এই আইনের আওতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় ভাড়াটে ও মালিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশেষ কর্তৃপক্ষ, আদালত ও ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে।
#নয়াদিল্লি: বর্তমান দিনে নানা কারণে বাড়িভাড়া পাওয়া হয়ে উঠেছে বেশ মুশকিল। কোনও বাড়িওয়ালা চড়া দামে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন। কোথাও অবার ভাড়াটের উৎপাতে বাড়ি ভাড়া দেওয়া থেকেই বিরত থাকছেন বাড়িওয়ালা। দেশজুড়ে ফাকা পড়ে থাকছে কয়েক লক্ষ ফ্ল্যাট। সুতরাং বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে দু’দিক থেকেই নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যাঁরা প্রকৃতই বাড়ি ভাঁড়া খুঁজছেন, অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের ভাড়া পেতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তাই এই সমস্ত সমস্যার সমাধানের স্বার্থে এবার মডেল বাড়িভাড়া আইনের (Model Tenancy Act) সবুজ সংঙ্কেত দিল কেন্দ্রের মোদী সরকার (Narendra Modi Govt)। আগেই এই আইনের বড়সড় সংস্কার করা হয়েছিল। এবার এই আইনের আওতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় ভাড়াটে ও মালিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশেষ কর্তৃপক্ষ, আদালত ও ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে।
কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরির কথায়, “এই পদক্ষেপটি সারা দেশে আবাসিক ভাড়া আইনি কাঠামোকে আরও নিয়মবদ্ধ ও সুনিয়ন্ত্রিত করবে। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি নতুন আইন তৈরি করে বা বর্তমান বিধি সংশোধন করে মডেল টেন্যান্সি আইনটি প্রয়োগ করতে পারে।”
মডেল টেনেন্সি আইন ২০২০ কী?
advertisement
মডেল ভাড়াটে আইন বা টেনেন্স আইন হল ভাড়াটে (tenant) ও বাড়িওয়ালা (owner) উভয়কেই সুবিধা প্রদানের জন্য কেন্দ্র সরকারের তরফে নেওয়া এক পদক্ষেপ। এই মডেল অনুসারে, পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভাড়াটে যদি বাড়ি ছাড়তে না পারেন সেক্ষেত্রে তাঁকে প্রথম দু’মাস দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হবে। এর পরেও যদি ভাড়াটে সেই ঘর না ছাড়তে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে তাঁকে প্রতিমাসে চারগুণ করে ভাড়া দিতে হবে বাড়িওয়ালাকে।
advertisement
এছাড়া কোনও ব্যক্তি যদি ব্যক্তিগত কারণে বাড়ি ভাড়া নেন সেক্ষেত্রে তাঁকে ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ হিসাবে দু’মাসের ভাড়া অগ্রিম দিতে হবে। ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে ভাড়া নেওয়া হলে জমা রাখতে হবে ছ’মাসের ভাড়া। ভাড়া নেওয়া বাড়ির কোনও অংশই ভাড়াটে অন্য কাউকে ভাড়া দিতে পারবেন না। তবে ভাড়া নিয়ে কোনও সমস্যা হলে তার জন্য জল সরবরাহ বা বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।
advertisement
এই গেল বাড়িওয়ালার পক্ষে নানান ব্যবস্থা। তবে এই আইনে বাড়িওয়ালার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ভাড়াটেদের সুরক্ষার বিষয়টিতেও। এই আইন আনুযায়ী, ভাড়াটেকে যদি বাড়িওয়ালা সময়ের মধ্যে সিকিউরিটি ডিপোজিট ফিরিয়ে না দেন, সেক্ষেত্রে বাড়িওয়ালাকে সেই টাকার উপর সুদ গুণতে হবে। বাড়ি ভাড়া বাড়াতে হলে তিন মাস আগে নোটিশ দিতে হবে। উভয় পক্ষের মধ্যে লিখিত সম্মতি থাকলে জোর করে বা নিয়ম বহির্ভূতভাবে কোনও ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। বাড়ির মেরামতি থেকে শুরু করে রঙ, কাঠামোগত মেরামত, নলকূপের প্রতিস্থাপন এবং নলকূপের পাইপ বদলানো, ঘরে বা বাইরে ইলেকট্রিক মেরামত করার দায়িত্ব বাড়িওয়ালার উপরেই বর্তাবে।
advertisement
বাড়িভাড়া সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে, ভাড়াটে এবং বাড়িওয়ালা সকলেই যেতে পারেন রেন্ট অথরিটির কাছে। যদি সেখানে সমস্যার সমাধান না হয়, বা সমাধান মনোমতো না হয়, সেক্ষেত্রে রেন্ট অথোরটির আদেশকে রেন্ট ট্রাইবুনালের কাছে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে তারা।
কেন্দ্রের তরফে আশা প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে, বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত এই আইন প্রবর্তনের ফলে ফাঁকা পড়ে থাকা বাড়িগুলিতে ফের ভাড়াটে আসবে। ভাড়া দেওয়া নিয়ে বাড়ি মালিকপক্ষ উৎসাহিত হবে। বাড়ি মালিক ও ভাড়াটেদের মধ্যে সেভাবে কোনও দ্বন্দ্ব বিবাদ থাকবে না।
advertisement
এই আইন প্রবর্তনের পরে ভাড়া দেওয়া নিয়ে বাড়ি মালিকরা উৎসাহিত হবে। মালিকপক্ষ ও ভাড়াটেদের মধ্যে কোনও বচসা, দখল করে নেওয়ার ঘটনা আগামীদিনে ঘটবে না। যার ফলে সর্বিক উন্নতি হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন এবং মডেল ভাড়াটে আইন
ভারতে ভাড়াটে এবং ইজারা দেওয়ার কাজগুলি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন দ্বারা নিবিড়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় যা সমস্ত রাজ্যে বিভিন্ন রূপে প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মহারাষ্ট্রের ‘ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯৯’ রয়েছে, দিল্লির রয়েছে ‘ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৮’ এবং চেন্নাইতে রয়েছে ‘তামিলনাড়ু বিল্ডিংস (ইজারা ও ভাড়া নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৬০’। প্রত্যেকটি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের উদ্দেশ্য হল ভাড়াটেদেরকে অন্যায় উচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা করা, বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটেদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করা।
advertisement
যাই হোক, এই আইনগুলির একটি গুরুতর অসুবিধা হল যে, এগুলির বেশিরভাগ দুই দশকেরও বেশি সময়ে সংশোধন করা হয়নি। এটি অবশ্যই মালিকদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করেছে এবং স্বল্প মূলধনের রিটার্নের কারণে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ক্ষুধাও কমিয়ে দিয়েছে।
Location :
First Published :
June 04, 2021 11:10 PM IST