Omicron: ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে কি শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা থাকে? কী বলছেন চিকিৎসকরা?
Last Updated:
Omicron: ওমিক্রনের (Omicron Variant) সংক্রমণে শ্বাসকষ্ট না-ও হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
#কলকাতা: প্রায় ২ বছর আগে করোনাভাইরাসের (Coronavirus) প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে ভাইরাল রোগটি ও তার উপসর্গ সম্পর্কে কয়েকটি সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের আছে। এমনকী সময়ে সময়ে ভাইরাসের নানা প্রজাতি ও তাদের উপসর্গের বিষয়েও আমরা কম-বেশি জানি। কোভিডের সাধারণ কয়েকটি গুরুতর উপসর্গগুলির মধ্যে শ্বাসকষ্ট (Breathlessness) একটি। কিন্তু, কোভিডের নতুন প্রজাতি ওমিক্রনের (Omicron Variant) সংক্রমণে শ্বাসকষ্ট না-ও হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে ওমিক্রন প্রজাতিতে আক্রান্ত হলে উপসর্গগুলি ভিন্ন এবং অস্বাভাবিক হতে পারে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কেন শ্বাসকষ্ট হয়?
কোভিড শ্বাসযন্ত্রের (Respiratory System) একটি রোগ এবং ফুসফুসে (Lungs) বৃদ্ধি পায়। অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসটি শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুসে প্রবেশ করে। সরাসরি ফুসফুস এবং অ্যালভিওলি (Alveoli )-র (ক্ষুদ্র বায়ু থলি) ক্ষতি করে। ভাইরাসটি অ্যালভিওলাস (Alveolus) এবং কৈশিকগুলির (Capillaries) পাতলা প্রাচীরের ক্ষতি করে। ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু অ্যালভিওলাস প্রাচীরে জমা হতে শুরু করে, যার ফলে আস্তরণ মোটা হয়। যাত্রাপথ সংকুচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশে লোহিত রক্তকণিকার (Red Blood Cells) চলাচল সীমাবদ্ধ হয়, যা শেষ পর্যন্ত শ্বাসকষ্টের দিকে পরিচালিত করে।
advertisement
advertisement
ওমিক্রনের সংক্রমণে কেন শ্বাসকষ্টের সমস্যা হবে না?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস ফুসফুসে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। কিন্তু ওমিক্রনের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব যে ভাইরাস গলায় বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এইমস (AIIMS)-র কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক পুণিত মুসরা বলেছেন যে ওমিক্রন প্রজাতিতে আক্রান্ত হলে উপসর্গগুলি মূল প্রজাতির থেকে ভিন্ন এবং অস্বাভাবিক হতে পারে। করোনাভাইরাসের এই নতুন প্রজাতি অন্যান্য প্রজাতির মতো শ্বাসকষ্টের কারণ হচ্ছে বা হবে না, কারণ সম্ভবত এটি ফুসফুসে সংখ্যাবৃদ্ধি করছে না। এ কারণে ফুসফুসে ওমিক্রন সংক্রমণের প্রভাব কম পড়ে। এছাড়াও, বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গা থেকে যে রিপোর্ট আসছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে ওমিক্রনের সংক্রমণে গলা প্রভাবিত হচ্ছে, যা প্রমাণ করে যে প্রজাতিটি সেখানে সংখ্যাবৃদ্ধি করছে।
advertisement
ওমিক্রন প্রজাতি একেবারেই নতুন প্রজাতি। গবেষকরা এখনও এটিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এই প্রজাতি কী ভাবে বৃদ্ধি পায়, উপসর্গগুলি কী ও টিকা কতটা কার্যকর হবে তা বোঝার জন্য। যাই হোক, প্রাথমিক গবেষণায় এটি পরিষ্কার করা হয়েছে যে ওমিক্রন সংক্রমণে ডেল্টা (Delta) প্রজাতির তুলনায় হালকা উপসর্গ দেখা যায়। চিকিৎসক মুসরা ব্যাখ্যা করেছেন যে যেহেতু ওমিক্রন গলায় বহুগুণ বেড়ে যায়, তাই এটি গুরুতর নিউমোনিয়া সৃষ্টি করবে না। ওমিক্রনের উপসর্গগুলি ডেল্টার তুলনায় হালকা, তবে তুলনায় ৭ গুণ সংক্রমণযোগ্য। এর অর্থ এটি সম্ভবত বেশি লোককে সংক্রমিত করতে পারে, তবে গুরুতর সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে না। তবে, এই বিষয়ে আরও জানতে অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
advertisement
ওমিক্রনের উপসর্গ কী কী?
গলা ব্যথা ছাড়াও ওমিক্রনের অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা এবং গায়ে ব্যথা। এই তিনটিকে করোনাভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়। অন্যান্য প্রজাতির থেকে ভিন্ন এই নতুন প্রজাতি শ্বাসকষ্ট, দারুন জ্বর বা গন্ধ বা স্বাদ হারানোর কারণ হয় না।
আরও পড়ুন: Over Weight, Hairfall,রয়েছে লুকনো উপসর্গও, ভয়ঙ্কর এই রোগ নয় তো
ওমিক্রনের উপসর্গগুলি কি অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় তাড়াতাড়ি দেখা যায়?
advertisement
ওমিক্রনের সংক্রমণ অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে। নতুন প্রজাতির উপসর্গগুলি কিছুটা আলাদা বলেও বলা হচ্ছে। কিন্তু এর মানে কি নতুন প্রজাতির ইনকিউবেশন পিরিয়ড স্বাভাবিকের চেয়ে কম? এই বিষয়ে জানতে গবেষণা এখনও চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে ওমিক্রনের উপসর্গগুলি আগের প্রজাতিগুলির তুলনায় তাড়াতাড়ি দেখা যেতে পারে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সচিব সাজিদ জাভিদের মতে, "স্বাস্থ্য সংস্থাগুলির সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে ডেল্টা প্রজাতির তুলনায় ওমিক্রন প্রজাতির সংক্রমণ এবং সংক্রামকতার মধ্যে সময় কম হতে পারে।" অর্থাৎ ওমিক্রন ছোট ইনকিউবেশন পিরিয়ডের সম্ভাবনাকে উচ্চতর সংক্রমণ হারের পিছনে একটি কারণ বলা হয়। কোভিড সংক্রমিত একজন ব্যক্তি উপসর্গ দেখা দেওয়ার প্রায় ২ দিন আগে এবং উপসর্গ দেখা দেওয়ার ১০ দিন পর্যন্ত সংক্রামক থাকেন। যার অর্থ এই সংক্রামক উইন্ডো চলাকালীন সংক্রমিত ব্যক্তি অন্য যে কাউকে সংক্রমিত করতে পারে। তাই যদিও কোনও কোভিড-সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে কেউ আসে, তাহলে অবশ্যই কোয়ারান্টিন করতে হবে ও টেস্ট করাতে হবে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কারও সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না। রিপোর্ট পজিটিভ আসলে আইসোলেশনে যেতে হবে। এই সময়ে উপসর্গগুলির প্রতি নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, অক্সিজেন লেভেল কম থাকলে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
advertisement
ওমিক্রন কি সত্যিই টিকার কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করবে?
বর্তমানে, নতুন প্রজাতির একাধিক মিউটেশন রয়েছে, স্পাইক প্রোটিনেই রয়েছে তিরিশের বেশি মিউটেশন। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, তা শুধুমাত্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে নয়, টিকার কার্যকারিতার ক্ষেত্রেও। টিকা নির্মাতারা এখন ইতিমধ্যেই চালু থাকা তাদের টিকার কার্যকারিতা জানার জন্য ওই প্রজাতিকে নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। আইসিএমআর (ICMR)-র প্রধান চিকিৎসক সমীরণ পাণ্ডা (Samiran Panda) সম্প্রতি জানিয়েছেন যে বর্তমানে উপলব্ধ কোভিড টিকাগুলি নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে ততটা কার্যকর প্রমাণিত নাও হতে পারে যতটা হওয়া উচিত। তবে, তিনি আরও বলেছেন যে টিকা কার্যকর হবে কি না তা শুধুমাত্র সময়ই বলবে। নতুন প্রজাতি সম্পর্কে আরও তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: WHO- এর ছাড়পত্র পেল 'কোভোভ্যাক্স', কেন এই ভ্যাক্সিন কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাইলফলক? জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা
ওমিক্রন প্রজাতি কি করোনার অন্যান্য প্রজাতিগুলির চেয়ে বেশি মারাত্মক?
বর্তমানে, নতুন প্রজাতির একাধিক মিউটেশন (Mutations) রয়েছে, স্পাইক প্রোটিনেই রয়েছে তিরিশের বেশি মিউটেশন। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, তা শুধুমাত্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে নয়, টিকার (Vaccine) কার্যকারিতার ক্ষেত্রেও। বর্তমানে উপলব্ধ কোভিড টিকাগুলি নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে ততটা কার্যকর প্রমাণিত না-ও হতে পারে যতটা হওয়া উচিত। তবে, টিকা কার্যকর হবে কি না তা শুধুমাত্র সময়ই বলবে। নতুন প্রজাতি সম্পর্কে আরও তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে। তবে, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ডেল্টা প্রজাতির তুলনায় আরও তিনগুণ বেশি সংক্রামক করোনার নতুন স্ট্রেন ওমিক্রন। এক বিবৃতিতে মন্ত্রক জানিয়েছে, "বর্তমান বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণের উপরে ভিত্তি করে বলা যায়, ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা ডেল্টার তুলনায় তিনগুণ বেশি। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও ডেল্টা আক্রান্তের সন্ধান রয়েছে। সেকারণেই রাজ্য স্তর, জেলা স্তর ও স্থানীয়ভাবে এই প্রজাতির মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিয়ম আরোপ করুক প্রশাসন।" তাই পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সচেতন হোক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি এমনটাই চাইছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক!
view commentsLocation :
First Published :
December 23, 2021 11:03 AM IST