হোম /খবর /Explained /
আফগানিস্তানে ৫০ হাজার টন গম পাঠাবে ভারত! বাধা দিচ্ছে পাকিস্তান, মতলব কী?

Afghanistan Crisis: আফগানিস্তানে ৫০ হাজার টন গম পাঠাবে ভারত! বাধা দিচ্ছে পাকিস্তান, মতলব কী?

আফগানিস্তানে তীব্র খাদ্য সঙ্কট। সাহায্য করতে চায় ভারত। কিন্তু বাধা দিচ্ছে পাকিস্তান। কারণটা কী!

  • Share this:

#কলকাতা: তালিবানের (Taliban) দখলে যাওয়ার পর থেকেই আফগানিস্তান (Afghanistan) বিশ্বের যে কোনও জায়গার চেয়ে সব চেয়ে বেশি খারাপ খাদ্য সঙ্কটের (Food Crisis) মুখোমুখি। লাখ লাখ মানুষ অনাহারের মুখে দাঁড়িয়ে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সেখানে ৫০ হাজার টন গম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু, পাকিস্তানের (Pakistan) কারণে সেই গম আদৌ আফগানিস্তানে পৌঁছবে কি না তা নিশ্চিত নয়। আফগানিস্তানে গম (Wheat) নিয়ে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে স্থলপথ ব্যবহারের আবেদন জানিয়েছে নয়াদিল্লি। যদিও সেই আবেদন নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসলামাবাদ। টালবাহানা জারি রয়েছে।

কেন ভারত থেকে গমের সাহায্যের প্রয়োজন আফগানিস্তানের ?

আফগানিস্তানে শীত শুরু হয়েছে। তার সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র খাদ্য সঙ্কট। ২২.৮ মিলিয়ন আফগান নাগরিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (Food and Agriculture Organisation) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme)। বিশেষ করে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩.২ মিলিয়ন শিশু, যারা বছরের শেষ নাগাদ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা না পেলে তীব্র অপুষ্টির কারণে ১ মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি।

আরও পড়ুন- কর্নাটক থেকে মুছল মুম্বই, হায়দরাবাদের নাম; বদলে গেল কয়েকশো বছরের ইতিহাস

কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের ভয়াবহতা বয়ে নিয়ে বেড়ানো আফগানিস্তান খরা, হিংসা, কোভিড ১৯ (Covid-19) এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মিলিত প্রভাবের মুখোমুখি হয়েছে। যার প্রভাব পড়বে নাগরিকদের জীবন, জীবিকাতে। সর্বোপরি মানুষের খাদ্য পাওয়া নিয়ে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সব চেয়ে সমস্যায় পড়বেন সেই এলাকার বাসিন্দারা, যেখানে মারাত্মক ঠাণ্ডা ও বরফ পড়ার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

রাষ্ট্রসংঘের সংস্থাগুলি বলেছে যে বর্তমান সঙ্কটটি দশ বছরের মধ্যে তীব্র। যেখানে মানুষ খাদ্যের তীব্র নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দেশটি এখন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোকের আবাসস্থল, যারা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রাষ্ট্রসংঘ আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে, ইতিমধ্যে বিশ্বের অন্য দেশগুলিকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে সংস্থাটি।

এই বছরের খরা পরিস্থিতি আগামী বছর পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্ক করে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে যে রাষ্ট্রসংঘকে আফগানিস্তানের জন্য অভূতপূর্ব মাত্রায় খাদ্যের সংস্থান করতে হবে। ২৩ মিলিয়ন মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে প্রতি মাসে ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হতে পারে।

কেন পাকিস্তান ল্যান্ড রুটের মাধ্যমে গম নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করছে?

অবিলম্বে এবং জরুরি সাহায্যের জন্য ভারত অক্টোবরের শুরুতে আফগানিস্তানে ৫০ হাজার টন গম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পঞ্জাবের অমৃতসরের কাছে ওয়াঘা-আটারি সীমান্তের (Wagah-Attari Border) মাধ্যমে স্থলপথ ব্যবহার করে চালানটি পাঠানোর জন্য পাকিস্তানের অনুমতি চেয়েছিল নয়াদিল্লি।

পাকিস্তানি কূটনীতিকরা বিদেশি মিডিয়ার কাছে স্বীকার করেছেন যে ভারত তাদের কাছে গম হস্তান্তর করার অনুরোধ নিয়ে যোগাযোগ করেছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ইসলামাবাদ ভারতের এই অনুরাধের বিষয়ে কোনও জবাব দেয়নি।

পাকিস্তানের কাছ থেকে ভারতের অনুরোধের প্রথম জনসমক্ষে উল্লেখ করা হয়েছিল, যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (Imran Khan) নভেম্বরের শুরুতে আফগানিস্তান সংক্রান্ত একটি নিরাপত্তা সম্মেলনের আগে তালিবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিরের (Amir Khan Muttaqi) সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

ইসলামাবাদ এক সরকারি বিবৃতিতে বলেছে, "প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবিক কারণে পাকিস্তানের মাধ্যমে ভারতের গম পরিবহনের বিষয়ে আফগান ভাইদের অনুরোধ পাকিস্তান বিবেচনা করবে।"

পাকিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যম বলেছে যে গোটা বিষয়টি দু'টি ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ। এক, তালিবান সরকার ভারতের সাহায্য গ্রহণ করেছে। দুই, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত এবং সামগ্রিক উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক সত্ত্বেও ওয়াঘার মাধ্যমে গম নিয়ে যাওয়ার অনুমতি ভারতকে দিয়েছে পাকিস্তান।

একই প্রতিবেদন যোগ করা হয়েছে যে আফগান বিদেশ মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভারতকে ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানে গম পাঠানোর অনুমতি দিয়েছেন।

নভেম্বরে আফগানিস্তান সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার জন্য এই অঞ্চলের দেশগুলির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের (National Security Advisers) একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভারত। কিন্তু সেই বৈঠকে পাকিস্তান ও চিন (China) অংশ নেয়নি।

একই দিনে আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিরের সঙ্গে বৈঠক করে পাকিস্তান। পরের দিন চিনা, রাশিয়ান এবং মার্কিন কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে স্থলপথে দ্বিমুখী বাণিজ্যের অনুমতি দেয়নি পাকিস্তান। বদলে, আফগানিস্তান থেকে পণ্য নিজেদের ভূখণ্ডের মাধ্যমে ভারতে স্থানান্তরিত করার অনুমতি দেয়।

তবে, ভারতকে কোনও পণ্য আফগানিস্তানে পাঠানোর অনুমতি দেয়নি। তাই, আফগানিস্তানে গম ও ওষুধের চালান পৌঁছনোর ভারতের গাড়িগুলিকে প্রায় ৬৫০ কিমি ভ্রমণ করতে হবে, যা অন্য বিকল্পগুলির চেয়ে সস্তা এবং দ্রুত।

গম পাঠানোর জন্য অন্য বিকল্প আছে?

গত বছর, ভারত ইরানের (Iran) চাবাহার বন্দর (Chabahar Port) দিয়ে আফগানিস্তানে ৭৫ হাজার টন গম পাঠিয়েছিল। সেই সাহায্য প্যাকেজের কথা উল্লেখ করে, বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S Jaishankar) গত বছরের নভেম্বরে বলেছিলেন যে আফগানিস্তানের বৃদ্ধি আটকে রয়েছে অবরুদ্ধ ভূগোলের কারণে।

যদিও তিনি ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে মালবাহী বিমান করিডরের পক্ষে সওয়াল করেন। কিন্তু জয়শঙ্কর যখন একথা বলেন তখন আফগানিস্তানে ছিল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার। ভারত ছিল আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

এই বছরের অগাস্টে তালিবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পরিস্থিতি অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। যদিও তালিবান নেতৃত্ব বলেছে যে তারা নয়াদিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখতে চায় এবং আফগানিস্তানের মাটিতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সুরক্ষাও তারা দেবে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে পণ্যের ওজনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম করার জন্য ভারত গমের পরিবর্তে উচ্চ-প্রোটিন যুক্ত বিস্কুট (High-Protein Biscuits) পাঠানোর দিকেও মনোনিবেশ করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আকাশপথে পণ্য পাঠানো এখনও ঝুঁকিপূর্ণ।

যদিও, তালিবান বাণিজ্যিক ফ্লাইট পুনরায় চালু করার জন্য নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করেছে। ২০১৭ সালে আফগানিস্তানে ভারত যে গমের চালান পাঠিয়েছিল, সেটি গুজরাতের কান্ডলা বন্দর থেকে চাবাহারে পৌঁছেছিল। প্রায় ৯০০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ কভার করতে প্রায় ২ দিন সময় লেগেছিল। তার পরে চালানটি ট্রাকে বোঝাই করা হয়েছিল এবং সড়কপথে ইরানের সীমান্তবর্তী আফগান প্রদেশ নিমরোজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

Published by:Suman Majumder
First published:

Tags: Afghanistan, India