Mumbai-Karnataka: কর্নাটক থেকে মুছল মুম্বই, হায়দরাবাদের নাম; বদলে গেল কয়েকশো বছরের ইতিহাস
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
কিন্তু কেন মুম্বই-কর্নাটক ও হায়দরাবাদ-কর্নাটকের (Hyderabad-Karnataka) মতো নাম রয়েছে?
#হায়দরাবাদ: সম্প্রতি কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী (Karnataka Chief Minister) বাসবভরাজ বোমাই (Basavaraj Bommai) রাজ্যের মুম্বই-কর্নাটক (Mumbai-Karnataka) অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করে কিট্টুর-কর্নাটক (Kittur-Karnataka) করার ঘোষণা করেছেন। কিন্তু কেন মুম্বই-কর্নাটক ও হায়দরাবাদ-কর্নাটকের (Hyderabad-Karnataka) মতো নাম রয়েছে? উত্তর জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে কয়েকশো বছর আগে।
মুম্বই-কর্নাটক, হায়দরাবাদ-কর্নাটক অঞ্চল কোথায় অবস্থিত?
মুম্বই ও হায়দরাবাদ-কর্নাটক অঞ্চলগুলি রাজ্যের উত্তর অংশ নিয়ে গঠিত। যথাক্রমে মহারাষ্ট্র (Maharashtra), তেলেঙ্গানা (Telangana) এবং অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করে৷ মুম্বই-কর্নাটক অঞ্চলটি উত্তর কন্নড়, বেলাগাভি, ধারওয়াড়, বিজয়পুরা, বাগালকোট, গদাগ এবং হাভেরি, এই সাতটি জেলা নিয়ে গঠিত। এখন এটির নামকরণ করা হয়েছে কিট্টুর কর্নাটক।
advertisement
advertisement
কিট্টুর নামটি বেলগাভি জেলার (Belagavi District) একটি ঐতিহাসিক রাজ পরিবারের সঙ্গে জড়িত। লিঙ্গায়ত (Lingayat) সম্প্রদায়ের কিংবদন্তি রানি চেন্নাম্মার (Rani Chennamma) ১৭৭৮-১৮২৯ সালের মেয়াদে তাঁর জীবদ্দশায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- সর্বনিম্ন দর দিয়ে সরকারি কাজের টেন্ডার পাওয়ার যুগ শেষ, বদল আসছে নিয়মে!
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি কিট্টুর রাজ্য দখল করতে চাইলে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। প্রথম দু'টি যুদ্ধে কম্পানি ব্যর্থ হলেও তৃতীয় যুদ্ধে কিট্টুরের চেন্নাম্মা পরাজিত হন ও তাঁকে বন্দি করা হয়। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী প্রথম দিককার নারী শাসকদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
advertisement
তাঁকে এখনও কর্নাটক রাজ্যে বীরের মর্যাদা দেওয়া হয়। লিঙ্গায়ত যোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপকে প্রভাবশালী সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট করার পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রানি চেন্নাম্মা যে সম্প্রদায়ের ছিলেন, সেই লিঙ্গায়ত উপ-সম্প্রদায় সংরক্ষণ চাইছে।
মুম্বই-কর্নাটকের নাম পরিবর্তন করে কিট্টুর নামকরণের উদ্দেশ্য হল এই সম্প্রদায় এবং বিজেপি সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক নিবিড় করা।
advertisement
২০১৯ সালে কর্নাটকের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা (BS Yediyurappa) হায়দরাবাদ-কর্নাটক অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করেছিলেন।
বিদার, কালাবুর্গি, ইয়াদগির, রাইচুর, কোপ্পাল এবং বাল্লারির, এই ছয়টি উত্তর-পূর্ব জেলা নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলের নতুন নাম রাখা হয় কল্যাণ কর্নাটক (Kalyana Karnataka)। হায়দরাবাদ-কর্নাটকের নাম পরিবর্তন করে ঐতিহাসিক কল্যাণ রাজ্যের নামে রাখা হয়।
১১ ও ১২ শতকে কল্যাণে শরানা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। এটি বচন সাহিত্যের উত্থানকে অনুপ্রাণিত করেছিল, যা প্রধান লিঙ্গায়ত সাধক ও কবি বাসভন্নের সঙ্গে যুক্ত।
advertisement
কেন এই অঞ্চলগুলি মুম্বই, কর্নাটকের সঙ্গে যুক্ত?
কেন প্রতিবেশী রাজ্যের নামানুসারে কর্নাটকের এই অঞ্চলগুলির নাম রাখা হয় তা বোঝার জন্য ব্রিটিশ আমলে ফিরে যেতে হবে। হায়দার আলির (Hyder Ali) অধীনে মহীশূর রাজ্যের বিশাল বিস্তার ঘটেছিল।
অন্ধ্রপ্রদেশ (বর্তমান তেলঙ্গনা) এবং তামিলনাড়ুর বেশ খানিকটা এলাকায় হায়দার আলির অধীনে চলে আসে। কিন্তু হায়দার আলির পুত্র টিপু সুলতান (Tipu Sultan) ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর মহীশূর রাজ্য ভেঙে দেওয়া হয়। কিছু অংশ চলে যায় হায়দরাবাদের নিজামের অধীনে এবং কিছু অংশ যায় মরাঠাদের দখলে।
advertisement
ভারতের স্বাধীনতার পরে, আধুনিক কর্নাটক রাজ্য তৈরি হয়েছিল এই অংশগুলিকে পুরনো মহীশূর (Mysore) রাজ্যের মূল অংশের সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে। কিন্তু মুম্বই-কর্নাটক এবং হায়দরাবাদ-কর্নাটকের নাম থেকেই যায়, যার কারণে নতুন রাজ্যের অংশ হিসাবে এই অংশগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ দেখা দেয়।
যদিও বেলগাভি এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির কিছু অংশকে মহারাষ্ট্রের অন্তর্গত বলে দাবি করে এমন সংগঠন রয়েছে। ব্রিটিশ আমলের দেওয়া নাম মুছে ফেলার দাবি ওঠে কর্নাটক থেকেও।
advertisement
বাসভরাজ বোমাই মুম্বই-কর্নাটকের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলার সময় বলেছিলেন, “যখন সীমান্ত বিরোধ প্রায়ই উত্থাপিত হয়, তখন পুরনো নাম ধরে রাখার কোনও মানে নেই। কর্নাটকের রাজ্য গঠনের পরে সীমান্ত বিরোধ শুরু হয়েছিল।
যদিও সেই বিরোধগুলি এখন মীমাংসা হয়ে গেছে, তবে, সময়ে সময়ে বিবাদ শুরু হয়।" বোমাই বলেছিলেন, রাজ্যের কন্নড়পন্থী সংগঠনগুলি দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের নাম পরিবর্তনের দাবি তুলেছিল। যেটি স্বাধীনতার আগে পূর্বের বম্বে প্রেসিডেন্সির অধীনে ছিল।
তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে ১৯৫৬ সালে যখন রাজ্য পুনর্গঠন আইন কার্যকর হয়েছিল, তখনই এই অঞ্চলের নাম পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল।
মহারাষ্ট্রের আঞ্চলিক দাবি:
মহারাষ্ট্রের সঙ্গে যে কোনও সম্পর্ক থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যও নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রতি বছর ১ নভেম্বর কন্নড় রাজ্যোৎসব উদযাপনের সময় মহারাষ্ট্র একীকরণ সমিতি (Maharashtra Ekikaran Samiti) মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি বেলাগাভিতে কালোদিন পালন করে।
কারণ তারা দাবি করে যে ভাষাগত ভাবে রাজ্যগুলির পুনর্গঠনের সময় বেলগাভির কিছু অংশ মহারাষ্ট্র থেকে জোরপূর্বক আলাদা করা হয়েছিল। কর্নাটকের সীমানা লাগোয়া ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা দাবি করে মহারাষ্ট্র, যার মধ্যে বেলগাভি, উত্তর কন্নড়, বিদার এবং গুলবর্গা জেলার ৮১৪টি গ্রাম এবং বেলাগাভি, কারওয়ার এবং নিপ্পানি শহর রয়েছে।
মহারাষ্ট্র এই সমস্ত এলাকা তাদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চায়। পূর্ববর্তী বেম্বে প্রেসিডেন্সি বর্তমান কর্নাটকের বিজয়পুরা, বেলাগাভি, ধারওয়াড় এবং উত্তর কন্নড় জেলাগুলিকে নিয়ে ছিল।
১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন বেলাগাভি এবং বম্বে প্রেসিডেন্সির ১০টি তালুক নিয়ে তৎকালীন মহীশূর রাজ্য গঠন হয়। ১৯৭৩ সালে রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে কর্নাটক নামকরণ করা হয়েছিল।
এই অঞ্চলগুলো কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?
কর্নাটকের উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলগুলি হল দক্ষিণ অংশগুলির চেয়ে অনুন্নত এলাকা। দক্ষিণ অংশে বেঙ্গালুরু, মহীশূরে বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও আইটি সংস্থাগুলির অফিস রয়েছে।
উত্তরের শুষ্ক অঞ্চলটি কৃষি বা শিল্পের দিক থেকে বড় নয় এবং দক্ষিণাঞ্চলের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই মাঝে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি উঠেছিল। এই দাবির মধ্যে রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ রয়েছে, কারণ এটি প্রভাবশালী লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের ঘাঁটি।
২০১২ সালে হায়দরাবাদ-কর্নাটক অঞ্চলকে সংবিধানে ৩৭১ (জে) অনুচ্ছেদ সংবিধানে ঢুকিয়ে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে। যা অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে উন্নতির পথ প্রশস্ত করেছিল। সেগুলি হল শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে স্থানীয়দের সংরক্ষণ, সরকারি চাকরিতে ওই এলাকার বেকার যুবকদের সংরক্ষণ ইত্যাদি।
কল্যাণ কর্নাটকের নাম পরিবর্তনের সময় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "শুধু নাম পরিবর্তন করে লাভ হবে না। এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আসতে হবে।"
২০১২ সালেই কর্নাটক সরকার বেঙ্গালুরুর বিধান সৌধের মতো বেলাগাভিতেও সুবর্ণ বিধান সৌধের (Suvarna Vidhana Soudha) নির্মাণ ও উদ্বোধন করে। রাজ্য সরকার প্রতি বছর সুবর্ণ বিধান সৌধে রাজ্য বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের আয়োজন করে মহারাষ্ট্রের কোনও আঞ্চলিক দাবি প্রত্যাখ্যান করতে।
view commentsLocation :
First Published :
November 16, 2021 1:35 PM IST