Explained: কোভিড সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরও নানা উপসর্গ? কী ভাবে কাটিয়ে উঠবেন জটিলতা?
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
Last Updated:
কোভিড পরবর্তী উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি (Tiredness), শ্বাস নিতে অসুবিধা (Difficulty in Breathing), বুকে ব্যথা (Chest Pain), জয়েন্টে ব্যথা (Joints Pain) এবং গন্ধ এবং স্বাদ না পাওয়া (Loss of Smell and Taste)
#কলকাতা: ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্বে প্রায় ২৩৬ মিলিয়ন মানুষ করোনাভাইরাসের (Coronavirus) সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ কোভিড-পরবর্তী নানা জটিলতা ও উপসর্গে (Symptoms) ভুগছেন। মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে যারা কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন তাঁদের কোভিড পরবর্তী নানা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। ৫০-৭০ শতাংশ রোগী ৩-৬ মাস পর্যন্ত ছোটখাটো বা বড় ধরণের সমস্যায় ভুগছে। যে সমস্ত রোগীর কোভিড সংক্রমণ বেশি হয়েছিল তাদের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। এই উপসর্গ কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার ৬ মাস পর্যন্ত চলতে পারে বলে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে। কোভিড পরবর্তী উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি (Tiredness), শ্বাস নিতে অসুবিধা (Difficulty in Breathing), বুকে ব্যথা (Chest Pain), জয়েন্টে ব্যথা (Joints Pain) এবং গন্ধ এবং স্বাদ না পাওয়া (Loss of Smell and Taste)।
গবেষণায় কী বলা হয়েছে:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভ্যানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির (Pennsylvania State University) একটি গবেষণা দল এই রিসার্চটি করে। গবেষকরা ৫৭ টি গ্লোবাল স্টাডি পরীক্ষা করেছেন, যাতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ২ লাখ ৫০ হাজার ৩৫১ জন কোভিডজয়ী জড়িত।
advertisement
ফলাফল:
গবেষণার ফলাফল দেখিয়েছে যে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু, প্রত্যেকেই কোভিড সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর ছয় মাস বা তারও বেশি সময় ধরে শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। কোভিড পরবর্তী উপসর্গ রোগীর সাধারণ সুস্থতা, হাঁটাচলা বা অর্গান সিস্টেমকে (Organ Systems) প্রভাবিত করে। সামগ্রিকভাবে, সুস্থ হয়ে ওঠা দু'জনের মধ্যে একজন দীর্ঘ-কোভিড সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন বলে জানাচ্ছে এই গবেষণার ফলাফল।
advertisement
আরও পড়ুন : টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নিয়েও কোভিডে আক্রান্ত, কাদের সংক্রমণের সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশি?
দীর্ঘ কোভিড উপসর্গ (Long Covid Problems):
গবেষণায় উঠে এসেছে যে, কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর অনেকেরই ওজন কমে যায়। ক্লান্তি, জ্বর, গা ব্যথা হয়। সেরে ওঠা পাঁচজনের মধ্যে একজনের হাঁটাচলার গতি কমে গিয়েছে বলেও দেখা গিয়েছে।
advertisement
সেরে ওঠা দশজনের মধ্যে ছ'জনের বুকের ইমেজিং অস্বাভাবিকতা দেখা গিয়েছে এবং এক চতুর্থাংশ রোগীর শ্বাসকষ্ট ছিল। বুকে ব্যথা এবং ধড়ফড়ানিও অনেকের মধ্যে ছিল। এবং পাঁচজন রোগীর ফুসকুড়ি বা চুল পড়ার সমস্যা শুরু হয়। খিদে কমে যাওয়া, পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া ও হজমের সমস্যা ছিল।
আরও পড়ুন : প্রতিনিয়ত কী ভাবে বাড়ছে বায়ু দূষণ? কেন নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?
তীব্র সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরেও কোভিডের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হয় না। তাই কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরও টিকা নেওয়া হল সব থেকে কাজের কাজ।
advertisement
কেন কোভিড থেকে সেরে ওঠার পরেও এই সব উপসর্গ দেখা দিচ্ছে:
এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলির পিছনে কারণগুলি এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে ভাইরাসের কারণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষতি, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ, পুনরায় সংক্রমণ বা অ্যান্টিবডির উৎপাদন বৃদ্ধি ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কাজ করা এর কারণ হতে পারে।
advertisement
প্রাথমিক ভাবে বলা হচ্ছে যে কোভিড মানুষের জীবনযাপনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। আগামীদিনে সম্ভবত বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, স্ট্রেসের সমস্যায় ভোগা রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, যারা সংক্রমণের আগে একেবারেই সুস্থ ছিল।
দীর্ঘ কোভিড সমস্যাগুলির মোকাবিলার উপায় তাহলে কী?
ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করা (Managing Fatigue and Breathlessness):
প্রচুর পরিশ্রম করা যাবে না। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে আসতে হবে। ভারী কাজ কাজ করা যাবে না। দিনের যে সময়ে সবচেয়ে বেশি এনার্জি থাকছে সেই সময়ে কাজ করতে হবে। ফুসফুসকে শক্তিশালী করতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং যোগাসন করতে হবে। এমন কোনও কাজ করা যাবে না, যা ক্লান্ত করে তোলে। কোভিড মুক্তির পর অনেক সময় পালমোনারি ফাইব্রোসিস হয়। এর জন্য রোগীকে দীর্ঘদিন ধরে অক্সিজেন নিতে হয়। অনেক সংক্রমিতের ৭০ শতাংশ ফুসফুস ক্ষতি হওয়ার কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। তবে মোট সংক্রমিতের মাত্র ১ শতাংশের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা নজরে আসে। যাদের সংক্রমণের সময় অক্সিজেন থেরাপি করতে হয়েছে তাদের সুস্থ হওয়ার এক মাস পর ফুসফুসের ক্ষমতার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
advertisement
ব্যথা ও যন্ত্রণার উপশম (Aches and Pain): ভাইরাসের কারণে হওয়া প্রদাহ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। গরম/ঠাণ্ডা জলের সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যাবে।
মাথা ঘোরা ও স্মৃতির সমস্যা (Brain Fog and Memory Issues):
বলা হয় যে ভাইরাল সংক্রমণ মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। ভাইরাস স্মৃতিশক্তির সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। তবে, এগুলি সাময়িক। এটা কাটিয়ে উঠতে নানা ব্যাপার নোট করা শুরু করা যেতে পারে। তাহলে, যা গুরুত্বপূর্ণ তা মিস হবে না। সমস্ত কাজ একসঙ্গে করলে হবে না। সময় ভাগ করে কাজ করতে হবে।
advertisement
গন্ধ ও স্বাদ ফিরে পেতে যা যা করতে হবে:
কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর বেশিরভাগ মানুষ ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে স্বাদ এবং গন্ধের অনুভূতি ফিরে পায়। গন্ধের অনুভূতি ফিরে পেতে গন্ধ প্রশিক্ষণ এবং অ্যারোমাথেরাপি চেষ্টা করা যেতে পারে।
কোভিড পরবর্তী সময়ে খাদ্যাভ্যাস (Eating Habit):
কোভিড সংক্রমণে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৯৪ শতাংশেরই বিভিন্ন জটিল অসুখ ছিল। এ ক্ষেত্রে সঠিক খাবার খেলে আমাদের শরীরকে সুস্থ রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বজায় রাখতে হবে। কোভিড সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর খাবারের মধ্যে প্রোটিন জাতীয় উপাদান বেশি থাকা প্রয়োজন। তবে শাক-সবজিও থাকতে হবে, যাতে খাবার যথাযথভাবে হজম হয়। জিঙ্ক, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এই সময় জরুরি হলেও বেশি বেশি খাওয়া উচিত নয়। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফাইবারযুক্ত খাবার এবং পুষ্টিকর শাক-সবজি খাওয়া প্রয়োজন। আমাদের শরীরে যে সমস্ত উপকারী মাইক্রোব থাকে, সেগুলি যাতে ঠিকঠাক ভাবে কাজ করতে পারে তার জন্য ফাইবারজাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন রঙের খাবার খেতে হবে যা আমাদের শরীরে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের চাহিদা মেটায়। এর জন্য হলুদ, আদা, চা ইত্যাদি খাওয়া প্রয়োজন। প্রচুর পরিমাণ জল খেতে হবে যাতে শরীরে জলের পরিমাণ যথাযথ থাকে।
এই সময় মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখাও অত্যন্ত জরুরি। আমারা যে খাবার খাই তা যদি শরীরের পক্ষে ভাল না হয় তাহলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন কমে যায়, একই সঙ্গে মনের উপরেও চাপ পড়ে। আর তাই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং মরসুমি ফলমূল, শাক-সবজি খাওয়া জরুরি।
Location :
First Published :
October 19, 2021 9:23 PM IST