#নয়াদিল্লি: সম্প্রতি ১০০ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করল ভারত। গোটা বিশ্বে চিনের পরেই ভারতেই স্থান রয়েছে, যারা মাত্র ৯ মাসে ১০০ কোটি ভ্যাকসিন (1-Bn Shots) দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৮ বছর বয়সের বেশি সকলকে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে যাবে। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে জানা গিয়েছে যে, অর্ধেকের বেশি ভারতবাসী ইতিমধ্যে কোভিডের টিকা পেয়ে গিয়েছেন। সেই সঙ্গে যাঁরা কোভিড টিকা পেয়েছেন, তাঁর মধ্যে ২০ শতাংশের দু’টি ডোজও নেওয়া হয়ে গিয়েছে।
১০০ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে কোভিড ১৯-এর ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া শুরু করে ভারত। ওই দিন সারা দেশে প্রায় ২ লক্ষ ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। এর পর ধীরে ধীরে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনেশনের গতি বাড়িয়ে ৯ মাসের মধ্যে ১০০ কোটিতে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে ভারত। ২১ অক্টোবর সকাল ৯.৩০ পর্যন্ত যে তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দেওয়া হয়েছে, তাতে জানা গিয়েছে যে, টিকাকরণে ১০০ কোটির মাত্রা ছুঁতে পেরেছে ভারত। দৈনিক গড়ে প্রায় ৩৫.৯ লক্ষ করে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। covid19india.org থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৭ দিনের গড় হিসেব অনুযায়ী ১৯ অক্টোবর ৪৫.১ লক্ষ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন: সম্পূর্ণ হয়েছে ১০০ কোটির টিকাকরণ; প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে-প্রেরণায় হাত মিলিয়েছে দেশ
তবে এই সব কিছুর মধ্যে বিশেষ কিছু দিনে ব্যাপক হারে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ অগাস্ট, ৩১ অগাস্ট, ৬ সেপ্টেম্বর এবং ২৭ সেপ্টম্বর তারিখে ১ কোটিরও বেশি মানুষকে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও গত ১৭ সেপ্টেম্বর মোট ২.২৮ কোটিরও বেশি ভারতীয়কে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
ভ্যাকসিন তালিকা থেকে কী জানা গিয়েছে?
১২ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে একটি ট্যুইট করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মনশুক মান্ডব্যর তরফে করা ওই ট্যুইটে জানানো হয়, মোট ৬টি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে ১৮ বছর বয়সের বেশি সকলের কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই ৬টি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল ১০০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। সেগুলি হল- হিমাচল প্রদেশ ( Himachal Pradesh), গোয়া (Goa), সিকিম (Sikkim), লাদাখ (Ladakh), দাদরা ও নগর হাভেলি (Dadra & Nagar Haveli) এবং লাক্ষাদ্বীপ (Lakshadweep)। যদিও এই রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম। তবে যে সব রাজ্যের জনসংখ্যা বেশি, সেই সব রাজ্যগুলিও কিন্তু খুব একটা পিছিয়ে নেই।
এই তালিকায় সব থেকে উপরে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। গত ২১ অক্টোবরের হিসেব অনুযায়ী, ওই দিন পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের প্রায় ১২.২ কোটি বাসিন্দা কোভিড ভ্যাকসিন পেয়েছেন। এর পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র। যেখানে ভ্যাকসিন দেওয়ার সংখ্যা ৯.৩ কোটি। এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে তৃতীয় স্থানে। ইতিমধ্যেই এই রাজ্যের ৬. ৯ কোটি মানুষ কোভিড ভ্যাকসিন পেয়েছেন। চতুর্থ স্থানে রয়েছে গুজরাত। এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। যেকানে কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন যথাক্রমে ৬.৮ কোটি মানুষ এবং ৬.৭ কোটি মানুষ।
প্রাপ্ত ভ্যাকসিনগুলির তালিকায় এগিয়ে রয়েছে কোভিশিল্ড (Covishield)। গত ২০ অক্টোবর কোউইন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মোট ৮৮ কোটি ভারতবাসী কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এ ছাড়াও ১১ কোটি মানুষকে দেওয়া হয়েছে কোভ্যাকসিন টিকা (Covaxin) এবং ১০ লক্ষেরও কিছু বেশি মানুষ স্পুটনিক ভি (Sputnik V) টিকা পেয়েছেন।
কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে টিকার প্রভাব?
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)-এর তরফে জানানো হয়েছে, কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়া হলে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৯৬.৬ শতাংশ কমে এবং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া সম্পন্ন হলে মৃত্যুর হার ৯৭.৫ শতাংশ কমে।
বিশেষজ্ঞরাও এই বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন যে, কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো সম্ভব। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে। তবে ভ্যাকসিন নিয়ে কোভিডে আক্রান্ত হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো গুরুতর অবস্থা তৈরি হয় না।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিনের ককটেল নিরাপদ, কোভিশিল্ড-কোভ্যাকসিন মেশানো নিয়ে ঠিক বলছে ICMR?
ভারতে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এবং দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে মার্চের শেষের দিক থেকে। যার ফলে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া বেশ খানিকটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। কারণ হাসপাতাল ও বিভিন্ন টিকাকরণ কেন্দ্রগুলিতে ভিড় বাড়ছিল কোভিড আক্রান্ত রোগীর। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ কেটে যাওয়ার পর টিকাকরণে ফের গতি আসে। তবে তারই মাঝে যে চিত্রটি উঠে আসে, তা বেশ সন্তোষজনক। দেখা যায়, মৃত্যুর হার দিন দিন কমছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, গত ২০ অক্টোবর কোভিড মুক্তির হার ৯৮.১৫ শতাংশে পৌঁছেছিল। যা ছিল সর্বাধিক।
ভারতের কোভিড টিকাকরণে মাইলস্টোন হিসেবে কোন বিষয়কে ধরা হয়?
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গত ৩ জানুয়ারি থেকে ভ্যাকসিন ব্যবহারে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আর সেই সময় দুটি ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। যেগুলির মধ্যে প্রথমটি হল, অক্সফোর্ডের তৈরি অ্যাস্ট্রোজেনেকা বা কোভিশিল্ড এবং দ্বিতীয়টি ছিল কোভ্যাক্সিন। কোভ্যাক্সিনের প্রস্তুতকারক সংস্থা ভারত বায়োটেক। ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়ার শুরু থেকেই সর্বপ্রথম করোনার প্রথম সারির যোদ্ধাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ওই তালিকায় ছিলেন-- ডাক্তার, নার্স-সহ প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধারা। এর পর কোভিড ভ্যাকসিন পেয়েছিলেন ৬০ বছরের বেশি বয়সিরা। আবার গত ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ বছরের বেশি যাঁদের বয়স, তাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছিল। এর পর ১৮ বছরের উপর যাঁদের বয়স, তাঁরা গত ১ মে থেকে তাঁদের ভ্যাকসিন পেয়ে আসছেন।
ভ্যাকসিন দেওয়া শুরুর ৮৫ দিনের মধ্যে ১০ কোটির লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে। এবং তার পর ৪৫ দিনের মধ্যে ২০ কোটি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭৫ কোটির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে ভারত।
ভারত কত পরিমাণ ভ্যাকসিন রফতানি করেছে?
ভারত যে শুধুমাত্র সব থেকে বেশি মাত্রায় ভ্যাকসিন দিয়েছে, তা নয়। বিশ্বের সব থেকে বেশি টিকা তৈরি করাও সম্ভব হয়েছে। ফলে বিভিন্ন দেশের প্রয়োজনে ভারত ভ্যাকসিন রফতানিও করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর ভারত সরকার ভ্যাকসিন রফতানি বন্ধ করে দেয়। তবে সেপ্টেম্বর থেকে ফের ভ্যাকসিন রফতানি শুরু হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৬৬ মিলিয়ন ভ্যাকসিন রফতানি করেছিল ভারত।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক পর্যকদের জন্য নয়া গাইডলাইন সরকারের, বাধ্যতামূলক RT-PCR নেগেটিভ রিপোর্ট
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Corona vacccine, Coronavirus, Covid, India coronavirus