‘ডিপ্রেশন হলে ছাদে গিয়ে একা একা বেবির সঙ্গে কথা বলতাম’, ন’মাসের অনুভূতি শেয়ার করলেন অঙ্কিতা
- Published by:Simli Raha
- news18 bangla
Last Updated:
‘‘মা হওয়ার এই সময়টা মা’কে কাছে পেলাম না । ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম । ভাবতাম সৌমিত্রও আমাকে ভালবাসে না...... কেউ ভালবাসে না আমাকে।’’
এই সময়টা প্রতিটা মেয়ের কাছেই খুব স্পেশ্যাল, খুব আলাদা হয় । যেন মনে হয় গোটা পৃথিবী একদিকে, আর আমার সন্তান একদিকে । নিজের ভিতরে যে প্রাণটা একটু একটু করে গড়ে উঠছে, কখন যেন সেই হয়ে ওঠে মায়ের অস্তিত্ব, মায়ের প্রাণ ভোমরা । তার উপর প্রথম সন্তান, মায়ের কাছে সবসময়ই বিশেষ হয় । একজন নারী’কে প্রথমবার পূর্ণতা দেয় সে । তবে করোনা পরিস্থিতিতে প্রেগন্যান্সি, সাধারণ সময়ের থেকে অনেক আলাদা । সব মিলিয়ে এই সময়টা কেমন কাটল ‘জড়োয়ার ঝুমকো’, ‘ভূমিকন্যা’-খ্যাত নায়িকা অঙ্কিতা মজুমদারের । কেমন অভিজ্ঞতা হল এই ন’মাসের... সেই গল্পই ভাগ করে নিলেন তিনি । শেয়ার করলেন প্রেগন্যান্সির কিছু অদেখা ছবিও ।
#গুয়াহাটি: প্রথমেই বলব খুব টেন্সড লাগছে । কারণ সময় এগিয়ে আসছে দ্রুত । বুঝতে পারছি আমাদের জীবনে খুব শীঘ্রই এক ছোট্ট প্রাণের আগমণ ঘটবে, যে কোনও দিন, যে কোনও সময় । আর তার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি মনে মনে । মা হিসাবে নিজেকে আরও পরিপূর্ণরূপে তৈরি করার চেষ্টা করছি আমি । ও হাসলে কী করব, কাঁদলে কী করব...ও তো বলতে পারবে না...কী করব তখন । শুধু এ সবই মনে হচ্ছে ।
advertisement
কারণ ডেট একেবারে এগিয়ে এসেছে । শরীরটাও আজকাল খুব আনচান করছে, খানিকটা অস্বস্তিবোধ হচ্ছে । আজই ডাক্তারবাবু বাড়ি এসে দেখে গিয়েছেন আমাকে । বলছেন, বেবি একেবারে ম্যাচিওর করে গিয়েছে । যে কোনও সময় ডেলিভারি হতে পারে আমার। আমার এখন যা যা লক্ষণ দেখা দিচ্ছে, সবই অ্যাডভান্স ডেলিভারির সিম্পটম । সাধের (২৮ অগাস্ট) পর থেকেই আমার শরীরটা একটু একটু খারাপ হতে শুরু করেছে । মাঝেমধ্যেই পেটে ব্যথা, মাথা ঘোরা বা আরও নানারকম সমস্যা হচ্ছে । শেষ মুহূর্তের কিছু টেস্ট দিয়েছিলেন ডাক্তারবাবু । আশার বিষয়, সেগুলো সব ঠিকই আছে । কিন্তু এখন একটু নার্ভাস লাগছে । ১০ সেপ্টেম্বর ডেট ফাইনাল করা হয়েছে । দেখা যাক কী হয়...
advertisement
advertisement

সাধের দিন গুয়াহাটিতে শ্বশুরবাড়িতে আঙ্কিতা ।
গোটা প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা বলতে বসলে হয়তো শেষ হবে না । আমি কনসিভ করেছি, সেটা প্রথম জানতে পারি জানুয়ারিতে । ব্যাস শুরু হয়ে যায় প্ল্যান করা । তখন তো পরিস্থিতি সব স্বাভাবিক ছিল । আগে ডায়েটের জন্য খাওয়া-দাওয়ায় বাধানিষেধ ছিল । প্রথম প্রেগন্যান্সিতে খুব খুশি হয়েছিলাম । প্ল্যান করলাম এ বার অনেক কিছু খেতে পারব, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় গিয়ে হুল্লোড় করব । এর মধ্যে সবচেয়ে স্পেশ্যাল ছিল আমাদের বেবিমুনের প্ল্যান । ৪-৫ মাসে আমি আর সৌমিত্র ঘুরতে যাব ঠিক করেছিলাম । সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল করোনার জন্য।
advertisement

আমরা গৌহাটি এসেছিলাম আমার শ্বশুরমশাই আর শাশুড়ি মা’কে সুখবরটা দিতে । সেখানেই আটকে গেলাম আমরা । লকডাউন শুরু হয়ে গেল। আমার প্রেগন্যান্সির জন্য এত সুন্দর গৌহাটিটাও একটু ঘুরে দেখতে পারিনি । এই সময়টা আস্তে আস্তে খুব ডিপ্রেসড হয়ে গেলাম আমি । কিছুই ভাল লাগত না। ঘরবন্দী জীবন, সমস্ত পরিকল্পনাগুলো আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে । মনে হত সৌমিত্রও আমাকে ভালবাসে না । আমার শ্বশুরবাড়ির ছাদ থেকেই পাহাড় দেখা যায় । অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য । মন খারাপ হলে একা একাই চলে যেতাম ছাদে । বেবির সঙ্গে কথা বলতাম আমি । তখন আস্তে আস্তে মনটা ভাল হয়ে যেত । কিন্তু ২৫ সপ্তাহ পর থেকে একটু একটু করে সবকিছু বদলাতে থাকে । যখন থেকে বেবির মুভমেন্টগুলো বুঝতে শুরু করি, সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে গেলাম ।
advertisement

চকোলেট খেতে খেতে ওয়েব সিরিজে মগ্ন ।
কিন্তু করোনার কারণে শুরু থেকেই সবকিছুতে খুব সাবধনতা অবলম্বন করতে হয়েছে । এই অবস্থাতে বাড়িতে যাঁরা কাজে আমাদের সাহায্য করতেন সবাইকে ছুটি দিয়ে দিতে হয় । আমার সুরক্ষার কথা ভেবেই শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এটা করেছিলেন । তবে ভাল ব্যাপর হল নতুন মা-বাবার সঙ্গে এই ক’টা দিনে দারুণ একটা বন্ডিং তৈরি হয়ে গিয়েছে । আগে এই সুযোগটা হয়নি খুব একটা ।
advertisement
তবে ইচ্ছা আছে খুব শীঘ্রই কলকাতা ফেরার । এ বছর না ফিরলেও পরের বছরের শুরুতেই হয়তো ফিরে যাব । কাজেও যোগ দেব খুব শীঘ্রই । কারণ কাজটা’কে ভীষণ মিস করছি । এখন শুধু চাই ভালয় ভালয় সে চলে আসুক আমাদের কাছে । ছেলে হোক বা মেয়ে, কোনও কিছুই চাহিদা নেই আমার । শুধু যেন সে ভাল মানুষ হয়... আর যেন তার মনে জীবনকে জানার কৌতূহলটা থাকে । আমাদের দেশ, বিশ্ব, পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে চিনতে যেন আগ্রহী হয় সে । আর সত্যি বলতে আমি একদম চাই না সে অভিনয়ে আসুক, সৌমিত্রও চায় না ওঁর প্রফেশনে যাক । চাই শুধু বুদ্ধিদীপ্ত হোক সে ।
advertisement

বিয়ের দিন আঙ্কিতা-সৌমিত্র ।
আর সৌমিত্র’র কথা আর কী বলব । সবাই বলে আমরা নাকি খুব তাড়াতাড়ি বাবা-মা হচ্ছি । বিয়ের এক বছরের মধ্যেই আমি কনসিভ করেছি । আগে ভীষণ ভয় পেত এসব নিয়ে । অত ছোট একটা মানুষকে কীভাবে কোলে নেবে বুঝে পারত না । কাঁদলে কী করবে, আমাকে জিজ্ঞাসা করত । ওঁর মধ্যে অনেক প্রশ্ন । আর এ সব খুব এনজয় করেছি আমি । এখন শুধু দু’জনে মিলে নতুন অতিথির অপেক্ষায় ।

উকুলেলে বাজিয়ে মন ভাল রাখার চেষ্টা ।
সে দিন সৌমিত্র’কে মজা করে বলছিলাম, আর তো বেশিদিন নেই । চলো আরও একটু প্রেমটা করেনি। এরপর তো আমাদের মধ্যে আর একজন এসে যাবে, তখন হয়তো সুযোগ পাব না । এখন শুধু নতুন অতিথি আসার অপেক্ষায় দিন গুণছি আমরা ।
(ছবি সৌজন্যে: অঙ্কিতা মজুমদার পাল)
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
September 02, 2020 1:17 PM IST