বুক ভরা অভিমান? শেষযাত্রায় অভিনেতাকে স্টুডিওপাড়ায় নিয়ে যেতে আপত্তি পরিবারের

Last Updated:

শেষ যাত্রায় সেই স্টুডিও পড়াতে এলেন তাপস পাল। নিথর শবদেহ হয়ে। অনেকেই বলছেন, সিনেমার অভিনয়ে সুপারহিট হিরো আসলে রাজনীতির অভিনয়ে হেরে গেলেন ৷

VENKATESWAR  LAHIRI 
#কলকাতা :  প্রথমে কথা ছিল তাঁর বাড়ি থেকে প্রথমে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রবীন্দ্রসদনে এবং সেখান থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশান। শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল। স্টুডিওপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হল তাপস পালের নিথর দেহ। যে স্টুডিওপাড়া তাঁকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল, আবার কেড়েও নিয়েছিল সব কিছু ৷
তবে ঘড়ির কাঁটা ধরে মাত্র পাঁচ মিনিট স্টুডিওপাড়ার জন্য বরাদ্দ হয়।তেত্রিশ বছরের অভিনয় জীবনে তিনশ'রও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এইরকম অভিনেতা উত্তম পরবর্তী সময়ে পায়নি বাংলা সিনেমা। উত্তমকুমারের মৃত্যুর পর স্টুডিও পাড়ায় কার্যত তালা পড়ে যায় ।হাহাকার পড়ে যায় বাংলা সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে। সেই সময় একজনের কালপুরুষ হয়ে আবির্ভাব হয়। তিনি তাপস পাল।
advertisement
advertisement
তিনি যদি না আসতেন তখন, তাহলে মনে হয় বাংলা সিনেমার জগৎ  উজ্জীবিত হত না। প্রখ্যাত পরিচালক অশোক বিশ্বনাথন বলেন, "তাপস পালের মত এরকম অভিনেতা উত্তম পরবর্তী সময় পায়নি টলিপাড়া। সেই সময় তাপস পালের প্রত্যাবর্তন বাংলা সিনেমায় ফুসফুসের মতো কাজ করেছে"। টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ার প্রোডাকশন ম্যানেজার অলোক মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দু’মাস আগে তাপসদা  আমাকে ফোন করে বলেছিলেন অভিনয়ের কাজে ফিরতে চাই। খারাপ লাগছে তাপসদার ইচ্ছেপূরণ না হওয়ায়।’’ টলিপাড়ার অন্যান্য কলাকুশলীদের প্রত্যেকেই মানছেন, মহানায়ক উত্তম পরবর্তী সময়ে বাংলা সিনেমা জগতে হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। সে সময় তাপস পাল নতুন করে সিনেমাপ্রেমী করে তুলেছিলেন বাঙালিকে ।
advertisement
কিন্তু এত বড় মাপের একজন অভিনেতাকে তাঁর নিজের পুরনো পাড়া স্টুডিওপাড়ায় কার্যত শেষ যাত্রায় ব্রাত্য হয়েই থাকতে হল। মঙ্গলবার মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, স্টুডিওপাড়ায় যাবে না তাপস পালের মরদেহ। টালিগঞ্জের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা রবীন্দ্রসদন এবং সেখান থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে যাবে। মন্ত্রীর এই ঘোষণার পরপরই টালিগঞ্জ স্টুডিওপাড়ায় গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস কে  স্টুডিওপাড়ার অনেকেই তাপস পালের পুরনো জায়গায় একবার অন্তত নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
advertisement
তবে বুধবার তাঁর বাড়ি থেকে রবীন্দ্রসদনে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে চিত্রটা বদলে যায়। গলফ ক্লাব রোডে তাঁর বাড়িতে যখন তাপস পালের নিথর দেহ শায়িত রয়েছে, সাধারণ মানুষজনের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তখনই আচমকা দেখা যায় ঘরের এক প্রান্তে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস  তাপস পালের স্ত্রী এবং কন্যার  সঙ্গে একান্তে কথা বলছেন। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, টালিগঞ্জ স্টুডিওপাড়ায় একবার অন্তত কিছুক্ষণের জন্য নায়কের মরদেহ নিয়ে যেতে পরিবারের অনুমতি আদায়ের জন্যই মন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে একান্তে কথা বলছিলেন। প্রথমে রাজি না হলেও শেষমেষ সিদ্ধান্ত বদল করে বাড়ি থেকে রবীন্দ্রসদন যাওয়ার মধ্যে টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়া "ছুঁয়ে" যাওয়ার অনুমতি দেয় পরিবার।
advertisement
শোকার্ত পরিবার এ ব্যাপারে মুখ না খুললেও কয়েকদিন আগে পর্যন্ত টলি পাড়াই শুধু নয়, তাপস পালের বিপদের সময় দু-একজন ছাড়া সবাই যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ায়  তাঁর স্ত্রী  যে বেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন  সে কথা তাপস পালের ঘনিষ্ঠমহলে কান পাতলেই শোনা যায় । মাত্র পাঁচ মিনিট কেন সময় বরাদ্দ হল স্টুডিওপাড়ায়? তাঁর মরদেহ যখন এল তখনও কেন অগোছালো স্টুডিওপাড়া? বর্তমান সময়ের টলিতারকা দিগন্ত বাগচী এ প্রসঙ্গে বলেন, পরিবারের লোক সেভাবে চাননি স্টুডিওপাড়ায় মরদেহ আনতে। পরে আমাদের অনেক অনুরোধে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল করে পরিবার। কম সময়ে পাওয়াতেই কিছুটা ছন্দপতন হয়েছে"। আর্টিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের অভিমানের কথা মানতে চাননি। তাঁর যুক্তি, "স্টুডিও পাড়ায় অনেক কম সময় ছিল ঠিকই। তবে যেহেতু রবীন্দ্রসদনে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মূল ব্যবস্থাপনা করা হয়েছিল সে কারণেই স্টুডিওপাড়ায় বেশি সময় খরচ করা হয়নি "।
advertisement
অভিনয় থেকে রাজনীতি, ক্ষমতা, গ্ল্যামার, সেইসঙ্গে বিতর্কও। রাজনীতি থেকে কার্যত সন্ন্যাস নিয়ে ফের অভিনয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন তাপস পাল। কিন্তু শেষ  ইচ্ছেপূরণ হল না সাহেবের। অভিনেতা কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় কিম্বা  ইন্দ্রানী দত্তের  কথায়, "শেষের দিকে তাপসদার জীবনে হতাশা চলে এসেছিল। এত বড় মাপের একজন অভিনেতার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না । সব সময় বলত, আমি কাজে ফিরতে চাই। তবে ওঁর আর ফেরা হল না"। ভাল না লাগার সেই দুনিয়া থেকে বেরতে চাইছিলেন তাপস পাল । আবার আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলেন অভিনয়। কিন্তু টলিপাড়া তাকে শেষ জীবনে  ব্রাত্য করে রেখেছিল । সেই হতাশা থেকেই  কি পরিবারের অভিমান ? আর সে কারণেই কি শেষ যাত্রায় তাপস পালকে স্টুডিও পাড়ায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানায় তাঁর পরিবার?
advertisement
প্রশ্ন আছে। তবে  হয়ত বা  প্রকাশ্যে উত্তরও  মিলবে আগামী দিনে। নেতা থেকে অভিনেতা হওয়ার আর্জি শোনেনি স্টুডিও পাড়া। যদিও শেষ যাত্রায় সেই স্টুডিও পড়াতে এলেন তাপস পাল। নিথর শবদেহ হয়ে। অনেকেই বলছেন , সিনেমার অভিনয়ে সুপারহিট হিরো আসলে রাজনীতির অভিনয়ে হেরে গেলেন। অনেক জমানো ব্যথা, বেদনা নিয়েই অশ্রুজলে চিরঘুমে  চলে গেলেন তাপস পাল।
বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
বুক ভরা অভিমান? শেষযাত্রায় অভিনেতাকে স্টুডিওপাড়ায় নিয়ে যেতে আপত্তি পরিবারের
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement