‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজে’ তাঁর বদলে গাইলেন লতা মঙ্গেশকর, কিন্তু সুমিত্রার মনে কোনও তিক্ততা ছিল না

Last Updated:

Sumitra Sen Obituary: শিল্পীজীবনের প্রথম দিকে নানা ধারার বাংলা গান গাইলেও পরবর্তীতে রবীন্দ্রসঙ্গীতই ছিল সুমিত্রা সেনের বিচরণক্ষেত্র

সুমিত্রা সেন
সুমিত্রা সেন
প্রথম গান শিখেছিলেন মায়ের কাছে। পরবর্তীতে সপ্তসুর তাঁর থেকে সঞ্চারিত হয়েছে দুই কন্যার মননে ও যাপনে। বাংলা সঙ্গীতের সকল ধারায় পারদর্শিতার পরও তাঁর শরণ ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীতেই। সেই আশ্রয়ই কি সমাপতনের অনুঘটক হয়ে রইল? মঙ্গলবার সুমিত্রা সেনের প্রয়াণসংবাদে অনুরাগীদের মনে ফিরে আসছে ১২ বছর আগের এক ৩ জানুয়ারির স্মৃতি। এক যুগ আগে কলকাতায় সেই শীতসকালে চলে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের আর এক মহীরুহ, সুচিত্রা মিত্র।
এই দুই মহীরুহের কাছে বটবৃক্ষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিল্পীজীবনের প্রথম দিকে নানা ধারার বাংলা গান গাইলেও পরবর্তীতে রবীন্দ্রসঙ্গীতই ছিল সুমিত্রা সেনের বিচরণক্ষেত্র। নিজেই জানিয়েছেন, কবিগুরুর সৃষ্টির মায়াজাল থেকে আর বার হতে পারেননি তিনি। বা, বলা ভাল বেরিয়ে আসতে চাননি৷ তবে জীবনে যে তিনি একদিন শিল্পী হবেন, সে স্বপ্ন কোনও দিন ছিল না শৈশব বা কৈশোরে। দুই মেয়ে, আদরের বাবলি এবং রুপুকেও যে নিয়মিত সামনে বসিয়ে প্রথাগত তালিম দিয়েছেন, সেরকমও নয়। তবুও তাঁদের প্রথম এবং অন্যতম সঙ্গীতগুরু তিনিই। তাঁর কাছ থেকে আবহমানের ধারা কীভাবে দুই বোনের মধ্যে প্রবহমান হয়েছে, তা উঠে এসেছিল কলকাতা দূরদর্শনে মা সুমিত্রা সেন ও তাঁর দুই যোগ্য উত্তরসুরির একান্ত আলাপচারিতায়।
advertisement
সঙ্গীতশিল্পীর পাশাপাশি মাতৃত্বের পরিচয়ও মহার্ঘ্য ছিল সুমিত্রা সেনের কাছে। সাংসারিক বৃত্ত এবং দুই সন্তানের পড়াশোনা, গানবাজনা সব কিছুর ছন্দ বজায় রেখেই তিনি মগ্ন হতেন সঙ্গীতসাধনায়। মায়ের নিষ্ঠার মর্যাদা রেখেছেন দুই কন্যাই। সুমিত্রার বড় মেয়ে ইন্দ্রাণী সেন শুধু প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীই নন। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ইন্দ্রাণী অর্থনীতিতে অধ্যাপনা করেছেন। ছোট মেয়ে শ্রাবণী আজ রবীন্দ্রসঙ্গীতে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। তবে দু’জনেই জানিয়েছেন তাঁরা মায়ের গান শুনে শুনে শিখেছেন। সুমিত্রা সেন যখন ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিতেন, তখন বাড়ির অন্য ঘর থেকে শুনতেন ইন্দ্রাণী ও শ্রাবণী। শুনে শুনেই শিখেছেন, গান তুলে নিয়েছেন গুনগুনিয়ে। তবে কোনও অনুষ্ঠান বা ইন্টার স্কুল কম্পিটিশন থাকলে মা তাঁর গানের খাতা খুলে শিখিয়ে এবং তুলিয়ে দিতেন। জানিয়েছেন ইন্দ্রাণী। শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীতই নয়, ছোট থেকে সব ধরনের গানই শুনতেন দুই বোন৷
advertisement
advertisement
আরও পড়ুন :  প্রয়াত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুমিত্রা সেন, ৮৯ বছর বয়সে জীবনাবসান শ্রাবণী-ইন্দ্রাণীর মায়ের
গানের পাশাপাশি নাচেও আগ্রহ ছিল ইন্দ্রাণীর। তিনি নৃত্যচর্চা করেছেন দীর্ঘ দিন। অন্যদিকে, শ্রাবণী শিল্পীজীবন শুরু করেছেন তুলনামূলক ভাবে অনেক পরে। মায়ের মতো তাঁরও শিল্পী হওয়ার ইচ্ছে ছিল না সেভাবে। কিন্তু জীবন বোধহয় তাঁদের দুই বোনকেই কিন্নরদলের শরিক করবে বলে ঠিক করে রেখেছিল। জীবনপথের সেরকম অন্যগতি এসেছিল সুমিত্রা সেনের জীবনেও। পাঁচের দশকের শুরুতে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম রেকর্ড। নজরুলগীতি ‘গোঠের রাখাল বলে দে রে কোথায় বৃন্দাবন’ এবং ‘বেদনার বেদী তলে গেয়ে’ শিল্পীজীবনে পা রাখেন সুমিত্রা। বাংলা সঙ্গীতের আরও নানা শাখার গান তিনি রেকর্ড করেছেন। তবে প্রথম প্লেব্যাক রবীন্দ্রসঙ্গীতেই। ‘শুন বরনারী’ ছবিতে তিনি গেয়েছিলেন ‘ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে’।
advertisement
প্রথম প্লেব্যাকের সুযোগ এসেওছিল চমকপ্রদভাবে। দূরদর্শনে আলাপচারিতায় সেই স্মৃতির ঝাঁপি উজাড় করে দিয়েছেন সুমিত্রা। রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচার অনুষ্ঠানে তাঁর কণ্ঠে ‘আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে’ শুনেছিলেন স্বয়ং উত্তমকুমার৷ তাঁর এত ভাল লেগেছিল, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের সূত্রে তিনি যোগাযোগ করেন শিল্পী সুমিত্রা সেনের সঙ্গে৷ মহানায়কের ফোন পেয়ে সুমিত্রার হাত থেকে তো রিসিভার প্রায় পড়ে যায় আর কী! যাঁর অভিনয়ের গুণমুগ্ধ, তিনি-ই কি না ফোন করে তাঁর পরের ছবিতে গান গাইতে বলছেন! এ যে অভাবনীয়!
advertisement
আরও পড়ুন :  সুমিত্রা সেনের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক ছিল, গায়িকার প্রয়াণে শোকবার্তা মমতার
ফোনের ওপারে মহানায়ক পরিচয় দিয়েছিলেন অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় বলে৷ কিন্তু তাঁর কণ্ঠস্বর প্রথম থেকেই বেশ চেনা লাগছিল সুমিত্রার৷ পরমুহূর্তেই শোনেন সেই কণ্ঠ বলছে ‘আমি তোমাদের উত্তমকুমার গো, দিদিভাই’৷ তাঁর অমায়িক ব্যবহার ও ঔদার্যে মুগ্ধ হয়ে যান সুমিত্রা৷ উত্তমকুমারের ছবি ‘শুন বরনারী’ দিয়েই সুমিত্রা প্লেব্যাক শুরু৷ মহানায়কের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় ছিল বরাবর৷ উত্তমকুমারের ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে সুমিত্রা গিয়েছেন নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে৷ সুমিত্রার বড় মেয়ে ইন্দ্রাণীর বিয়েতে আমন্ত্রিত ছিলেন উত্তমকুমার৷
advertisement
পাওয়ার মাঝে আছে না পাওয়ার পর্বও৷ সুপারহিট বাংলা ছবি ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এ ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে, সখী যাতনা কাহারে বলে’ গানটি প্রথমে সুমিত্রা সেনেরই গাওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু প্রযোজকের ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত পরিচালক তরুণ মজুমদার এবং সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গানটি গাওয়ান লতা মঙ্গেশকরকে দিয়ে৷ সঙ্গে দ্বৈত শিল্পী কবিতা কৃষ্ণমূর্তি৷ কিন্তু এই নিয়ে কোনও আক্ষেপ বা খেদ ছিল না সুমিত্রা সেনের মনে৷ তাঁর কাছে দুঃখপ্রকাশও করেন পরিচালক তরুণ মজুমদার৷ বরং সুমিত্রা অকপটে বলেছেন, ‘যেখানে লতাজী গাইছেন, সেখানে কোনও কথাই হবে না৷’ পরে এই গানটি বেসিক হিসেবে প্রকাশ করেন শিল্পী৷ তাঁর কণ্ঠেও এই রবীন্দ্রসঙ্গীত অসম্ভব জনপ্রিয় হয়৷
advertisement
ব্যক্তিজীবনেও এরকমই ছিলেন শিল্পী৷ তাঁর নামের সমার্থক ছিল জীবন ও যাপন৷ সবক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ নয়, নিজের মনটাকে পরিষ্কার রাখতেই ভালবাসতেন সুমিত্রা৷ জটিলতার আবর্ত এড়িয়ে তাই হয়তো বলতে পেরেছেন, তিনি যা করেছেন, তাতে তিনি তৃপ্ত৷ তাঁর অগণিত গানের পাশাপাশি অমূল্য উপহার দুই কন্যা৷ তাঁর মতো একজন মা তথা দ্রোণাচার্যই পারেন সন্তান তথা শিষ্যাদের সার্থকরূপে গড়ে তুলতে৷ যত দিন বাংলা গান থাকবে, সুমিত্রার কণ্ঠে সইয়ের দল খুঁজবে ভাবনা আর ভালবাসা কাকে বলে, সেই প্রশ্নের উত্তর৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজে’ তাঁর বদলে গাইলেন লতা মঙ্গেশকর, কিন্তু সুমিত্রার মনে কোনও তিক্ততা ছিল না
Next Article
advertisement
Rhino rescue: বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
  • ১৩ দিনের অপারেশন রাইনোতে ১০টি গন্ডার উদ্ধার করেছেন বনকর্মীরা

  • বিপর্যয়ের সময় জলদাপাড়া থেকে ভেসে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি গন্ডার

  • অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বনকর্মীরা গন্ডারগুলোকে জঙ্গলে ফেরাতে সক্ষম হন

VIEW MORE
advertisement
advertisement