কলকাতা : একদিকে শিল্পী ৷ অন্যদিকে সাহিত্যিক৷ দু’জনকে দুই বিন্দুতে মিলিয়ে দিল সৃষ্টি ৷ শিল্পী মীর (Mir Afsar Ali) ৷ সঞ্চালক তথা ‘সানডে সাসপেন্স’-এর অন্যতম প্রধান কারিগর ৷ সাহিত্যিক দেবারতি মুখোপাধ্যায় (Debaratai Mukhopadhyay)৷ দু’জনেই জড়িয়ে আছেন ‘নীলাম্বরের খিদে’-এর সঙ্গে ৷
রবিবার দুপুরে সানডে সাসপেন্সের আসরে পাঠ করা হয় দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘নীলাম্বরের খিদে’ ৷ গল্পপাঠের সময়ে কেমন ছিল অভিজ্ঞতা? জানিয়েছেন মীর ৷ লিখেছেন, তিনি গত সপ্তাহে পাঠ করেছেন গল্পটি ৷ নির্দেশনায় ছিলেন দীপ ৷ রেকর্ড করতে মীরের সময় লেগেছে সাড়ে চার ঘণ্টা ৷ মাঝে বেশ কয়েক বার ব্রেক নিতে হয়েছে তাঁকে ৷ ধূমপান করেছেন ৷ চুমুক দিয়েছেন চায়ে ৷ একটানা গল্প পড়ে যেতে পারছিলেন না অভিজ্ঞ সঞ্চালক তথা রেডিয়ো জকি ৷ কারণ জানিয়েছেন নিজেই-‘‘গলা ধরে এসেছে কষ্টে কান্নায় অসহায়তায়। ’’
কিন্তু কেন এত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন মীর? জানতে হলে ঢুকে পড়তে হবে গল্পে ৷ দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের লেখা এই কাহিনির প্রেক্ষাপট বরেন্দ্রভূমি ৷ এ পারের নয়, ও পার বাংলার ৷ বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলের এক প্রত্যন্ত অংশ ৷
সেই প্রত্যন্ত অংশে পুরাতাত্ত্বিক খননকাজে গিয়েছেন গল্পের কথক তথা প্রধান চরিত্র ৷ সঙ্গে তার আট বছরের মূক কন্যা, ‘নূপুর’ ৷ এই শিশু ছাড়া বিপত্নীক কথকের আর কেউ নেই ৷ কিন্তু প্রত্যন্ত অংশে কাজে গিয়ে অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখে পড়লেন তিনি এবং তাঁর সন্তান ৷ যাতে তাঁর যু্ক্তিবাদী শহুরে সত্তা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় ৷
যে রাজত্বের ধ্বংসাবশেষ খনন করতে গিয়েছিলেন কথক, সেই বংশের শেষ রাজা ছিলেন নীলাম্বর ৷ জীবদ্দশায় তিনি মেনে নিতে পারেননি একমাত্র মেয়ের আট বছর বয়সে অকালমৃত্যু ৷ আজও, ৫০০ বছরের বেশি সময় পরে রাজা নীলাম্বরের বিদেহী আত্মা ঘুরে বেড়ায় সেখানে ৷ আট বছর বয়সি কোনও বালিকাকে পেলেই কন্যা হিসেবে নিজের কাছে, নিজের প্রেত জগতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ৷ রাজাই নাকি অশরীরী হয়ে মহামারি দেবীর পুজো করে আসছেন পাঁচ শতক ধরে ৷ সে পুজোয় বিঘ্ন ঘটলেই দেবী কুপিতা হন ৷ চারদিকে মহামারি দেখা দেয় ৷ অশরীরী রাজা নীলাম্বরের হাত থেকে কি নূপুরকে বাঁচাতে পারবেন তার বাবা? সেই নিয়েই টানটান উত্তেজনায় এগিয়ে যায় কাহিনি ৷
২০১৯-এ শারদীয় শুকতারায় প্রথম প্রকাশিত এই গল্প পাঠ করার সময় পেশাদারিত্ব ছাপিয়ে মীরের পিতৃসত্তা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ নিজের মেয়ের কথা ভেবে এতটাই একাত্ম হয়ে পড়েছিলেন, লিখেছেন, ‘‘একেক সময় মনে হয়েছে আর পারছি না, বাড়ী চলে যাই। গভীর ছাপ ফেলেছে মনে দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের লেখা। ’’
মীরের পোস্টের প্রেক্ষিতে উচ্ছ্বসিত লেখিকাও ৷ মন্তব্য বাক্সে লিখেছেন, ‘‘আমার কাজ ছিল প্রতিমা গড়া, সে আমি মনপ্রাণ ঢেলে গড়েছিলাম। কিন্তু সেই প্রতিমাকে সালংকারা করে চক্ষুদান করেছেন আপনি। মৃন্ময়ীকে চিন্ময়ী রূপও দিয়েছেন আপনি। আজ আমি নিজেই নিজের গল্প শুনতে শুনতে কখনো কেঁদেছি, কখনো আবেগে গলা ধরে গিয়েছে।’’ মীরের অভিব্যক্তি নিজে প্রোফাইলেও শেয়ার করেছেন লেখিকা ৷
অপূর্বপঠিত গল্পটি ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ডিং ৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।