Kalika Prasad Bhattacharya: পড়ে আছে তবলা! অসমের বাড়ি! নেই কালিকাপ্রসাদ! বোন ইন্দ্রাণীর চোখে ভেসে উঠল দাদার ছেলেবেলা!
- Published by:Piya Banerjee
- local18
Last Updated:
Kalika Prasad Bhattacharya: অসমে পড়ে রয়েছে বিশাল বাড়ি! কালিকাপ্রসাদের গোটা জীবন জুড়েই ছিল গান! জানুন কিছু অজানা তথ্য!
শিলচর: এক সময়ে পুরো বাড়িটার আনাচ কানাচে গমগম করত নাচে – গানে -রেওয়াজে -সংগীত চর্চায়। বরাক উপত্যকার একটা সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান ছিল শিলচর সেন্ট্রাল রোডের ভট্টাচার্য বাড়ি। কিন্তু সঙ্গীত পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা সেই বাড়িটা আজ আর পাঁচটা বাড়ির সঙ্গে এখন কোন ফারাক নেই। কারণ গত দুই দশকে সেই পরিবারের সঙ্গীত পাগল মানুষগুলো অনন্ত কুমার ভট্টাচার্য, আনন্দময়ী ভট্টাচার্য , মৃণালিনী ভট্টাচার্য, কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন।সুর , তাল , ছন্দে বেড়ে উঠা এই পরিবারের বর্তমান প্রজন্মরা আজকের দিনে পারিপার্শ্বিক কার্যকারণে সেই সঙ্গীতকেই পেশা করে বেঁচে রয়েছেন তেমনটাও কিন্তু নয়। ফলে সেই সুর – তাল – লয়ের বিষয়টি হারিয়ে গেছে যার শেষ প্রদীপ ছিল কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য।
আজ আর নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা হয় না এই বাড়িতে। তবে পরিবারিক সূত্রে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কালিকার ভাই -বোন- আত্মীয়স্বজন পারিবারিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে মিলিত হলেই একটা গানের আসর তৈরি হয়ে যায়। ১১ ই সেপ্টেম্বর ১৯৭০ সালে শিলচরের সেন্ট্রাল রোডে জন্মগ্রহণ করেন দেশের একজন জনপ্রিয় লোকসংগীত শিল্পী, লোক গবেষক এবং বাংলা ব্যান্ড দোহারের প্রাণপুরুষ কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য।তাঁর জন্মদিনেও এই বাড়িটি চর্চায় আসে। কারণ বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান, কালিকাপ্রসাদের জন্ম ও মৃত্যুর দিনে পরিবারের মানুষগুলো আর পেশায় আটকে রাখতে পারেন না। তারা হয়ে উঠে গানমুখর। অনেকেই গানের মাধ্যমে আজকের দিনটি কালিকাপ্রসাদের স্মৃতিচারণা করেন।
advertisement

advertisement
কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের জন্মদিনে স্মৃতিচারণায় তাঁর ছোট বোন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য সঙ্গীত দুনিয়ার নানা কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ‘শিলচর সেন্ট্রাল রোডের বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আমাদের ঠাকুরদা কালীজয় ভট্টাচার্য। তিনি ছিলেন কবিরাজ চিকিৎসক। বাড়িতেই গড়ে উঠেছিল আয়ুর্বেদ আশ্রম। তবে তিনি একজন কবিরাজ চিকিৎসক হলেও ছিলেন একজন সঙ্গীত শিল্পীও। ফলে তাঁর ছেলে মেয়ে অর্থাৎ আমাদের বাবা – জেঠু – কাকু – পিসি সবাইকে গান বাজনা শেখান। বাড়িতে প্রতিদিনই চলত গানের চর্চা। পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও নিয়মিত গান বাজনা হত এই বাড়িতে। বলতে গেলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই বাড়ির পরিবেশে শুধুই গান আর গান। কালীজয় ভট্টাচার্যের পুত্র রামচন্দ্র ভট্টাচার্য অর্থাৎ কালিকার বাবা ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রচার ও প্রসারক। ছিলেন ক্রীড়া সংগঠক। মা গীতাঞ্জলি ভট্টাচার্য খুব ভাল গান গাইতেন। সেই বাড়ির আরেক পুত্র আমাদের জেঠু মুকুন্দদাস ভট্টাচার্য ছিলেন নৃত্যগুরু।
advertisement

‘ আমাদের গোড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে আনাচে-কানাচে শুধুই ছিল সঙ্গীত চর্চা। আমাদের দাদু কালীজয় ভট্টাচার্য বাড়িতে যেসব পুজো হতো সব পুজো তিনি করতেন। আর আমাদের কড়া নির্দেশ ছিল পুজো চলাকালীন তাঁর কানে শুধু গান বাজনা ছাড়া আর যাতে কোনও শব্দ না আসে। বাবা – জেঠুদের কাছ থেকেই শুনেছি আমাদের বাড়িতে এসেছেন পারভীন সুলতানা, আলাউদ্দিন খাঁ, আয়াত আলী খাঁ, উদয় শংকর , বাহাদুর খাঁ-রা। এসেছেন গায়ক, গীতিকার, সুরকার হেমাঙ্গ বিশ্বাস, ভারত রত্ন ভূপেন হাজারিকাও।
advertisement

যেহেতু সুর , লয়, ছন্দে বেড়ে উঠেছিলেন আমাদের দাদাভাই কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য তাই জন্ম থেকেই এই সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। বাজাতেন তবলা। আমাদের ছোটকাকু অনন্তকুমার ভট্টাচার্যের হাত ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন পীর-ফকির, বাউল সঙ্গীতের আসরে যেতেন তিনি। ফলে ধীরে ধীরে এই গানের প্রতি আকর্ষিত হতে থাকেন কালিকা। ছোটকাকু অনন্তকুমার ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি লোকগানের দল গড়ে উঠেছিল, যার নাম ছিল ‘লোকবিচিত্রা’। এই লোকবিচিত্রার দলের ফলেই বহু অজানা হারিয়ে যাওয়া গান মঞ্চের মর্যাদা পায়, বহু গ্রাম্য লোকশিল্পী পেয়েছিল তাদের যোগ্য সম্মান। এই লোকবিচিত্রার গানের চর্চা হত এই বাড়িতে। ছোট্ট কালিকাপ্রসাদ তখন থেকেই লোকবিচিত্রার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। গানের আসর থেকে কিছুতেই তাকে সরানো যেত না। অনন্ত কুমার ভট্টাচার্য কালিকাকে সঙ্গীত জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
advertisement

কালিকা অর্থাৎ দাদাভাই ছিলেন বহু প্রতিভার অধিকারী। ছিলেন সংগঠক – লেখক – নাট্য শিল্পী। সুলেখক ছিলেন তিনি। লিখতেন কবিতাও। ডিবেট প্রতিযোগিতায় তাকে হারানো ছিল কঠিন ব্যাপার। প্রাথমিক স্কুল ছিল শিলচরের শিশুতীর্থ, মাধ্যমিক – উচ্চ মাধ্যমিক নরসিং হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল এবং স্নাতক জিসি কলেজ থেকে। ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। যার ফলে কম্পারাটিভ লিটারেচার নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পান গোল্ড মেডাল। গোটা পরিবারের মধ্যমণি ছিলেন কালিকা। বাড়ির গানের আসরের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তিনি। আমাদের ছোট পিসি সঙ্গীত শিল্পী আনন্দময়ী ভট্টাচার্যের কোলে বড় হয়ে উঠেন। পিসিই ছিলেন সবচেয়ে আদরের।
advertisement

আমাদের বাড়ির দুর্গাপুজো দেড়শো বছর পুরোনো। এছাড়াও কালীপুজো, বিপদনাশিনী পুজো, মনসা পুজো সব পুজোতেই আমাদের ভাই বোনদের একটা গানে আসর বসত।’ আমাদের দাদাভাইয়ের মিষ্টি হাসিতেই মুগ্ধ হয়ে যেতেন সবাই। তিনি ছিলেন মাটির মানুষ।১৯৪০ সালে শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয় গড়ে উঠার নেপথ্যে একটা বড় অবদান এই ভট্টাচার্য পরিবার এছাড়াও মুক্তি যোদ্ধা, বরাক উপত্যকার ভাষা শহিদ আন্দোলন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনেও এই ভট্টাচার্য পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের অবদান ছিল অপরিসীম। শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ে গান বাজনা হত ঠিকই কিন্তু সেখানে ভিতরে ভিতরে বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তোলার একটা বড়সড় চর্চা হত। এই ভট্টাচার্য বাড়িতে তখনকার সময়ে অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর আসা যাওয়া চলত।’
advertisement
১৯৯৮ সালে ছোট কাকু অনন্তকুমার ভট্টাচার্যের প্রয়াণের পর লোকগান নিয়ে কাজ শুরু করেন কালিকাপ্রসাদ। পরে ১৯৯৯ সালে বাংলা ব্যান্ড ‘ দোহার’ গড়ে তাঁর খোঁজ চলে লুপ্তপ্রায় লোকগান ও বাদ্যযন্ত্রের। তখন সেই লুপ্ত হতে শুরু করা লোকগানকে নতুনভাবে চিনতে শুরু করেন শ্রোতারা।
শুধু লোকগানই নয়, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর গানে বরাবরই প্রাধান্য পেয়েছে লোকায়ত বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার। বিভিন্ন ধরনের গান নিয়ে ধারাবাহিক চর্চার পাশাপাশি সেগুলোকে সংগ্রহ করতে শুরু করেন কালিকাপ্রসাদ। বেশ কয়েকটি সিনেমার গানে সুর করছিলেন তিনি। লোকসঙ্গীতকে নতুন আঙ্গিকে মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য গবেষণা করতেন তিনি।
২০১৭ সালেই ভারত – বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ‘ভুবনমাঝি’ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালকের ভূমিকায় কাজও করেছিলেন কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। সেটিই ছিল তাঁর শেষ কাজ।২০১৭ সালের ৭ মার্চ মাত্র ৪৬ বছর বয়সে পশ্চিম বঙ্গের হুগলির গুড়াপের কাছে পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কালিকা ভট্টাচার্য। ২০১৭ সালের পর থেকে অসম সরকার লোক সঙ্গীত শিল্পী, লোক গবেষক কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্যের জন্মদিনকে লোক সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে।
আঁখি দাস
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
September 13, 2023 11:30 PM IST