এখন থেকে আর ‘এই’ ধরণের বিজ্ঞাপনে কাজ করবেন না অমিতাভ বচ্চন, সারোগেট অ্যাডভারটাইজিং আদতে কী?

Last Updated:

আইন অনুযায়ী প্রচার করা নিষিদ্ধ, যদিও আমরা টিভি খুললেই অনেক সারোগেট বিজ্ঞাপন দেখতে পাই।

How Amitabh Bacchan found out and what you should know about surrogate advertising- Photo- File
How Amitabh Bacchan found out and what you should know about surrogate advertising- Photo- File
#কলকাতা: পান মশলার (Pan Masala) বিজ্ঞাপনে আর দেখা যাবে না তাঁকে। নিজের ৭৯তম জন্মদিন এই ঘোষণা করে ভক্তদের চমকে দিয়েছেন বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan)। পান মশলা পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের জন্য নেওয়া অর্থও ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, পান মশলার বিজ্ঞাপন করার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন বিগ বি। অমিতাভ জানিয়েছেন যে তিনি জানতেনই না যে এটা সারোগেট বিজ্ঞাপনের (Surrogate Advertising) আওতায় পড়ে। যা আইন অনুযায়ী প্রচার করা নিষিদ্ধ, যদিও আমরা টিভি খুললেই অনেক সারোগেট বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে বিস্তারিত।
সারোগেট বিজ্ঞাপন কী?
সারোগেট মানে একজন বিকল্প বা কারও পরিবর্তে থাকা বা অন্যের জন্য কোনও কিছু। আমরা 'সারোগেট মাদার' (Surrogate Mother) শব্দের সঙ্গে বেশ পরিচিত। যেখানে একজন মহিলা অন্যের সন্তান ধারণ করেন। সারোগেট বিজ্ঞাপন হল এমন একটি ধারণা যেখানে একটি পণ্যের সরাসরি বিজ্ঞাপন দেওয়া যায় না, অথচ অন্য পণ্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে তা তুলে ধরা হয়। ভারতে এই ধরনের বিজ্ঞাপনের উদাহরণ ঝুরি ঝুরি রয়েছে। পোশাকের ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে ক্রিকেট দল, তামাকজাত বা অ্যালকোহলজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারকরা ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য সারোগেট বিজ্ঞাপনকে হাতিয়ার করেন।
advertisement
advertisement
অমিতাভ বচ্চনের অফিসের তরফে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়, "পান মশলার বিজ্ঞাপন সম্প্রচারিত হওয়ার দিন কয়েক পরই বচ্চন ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তি থেকে সরে আসেন। ওই গুটখা ব্র্যান্ডের সঙ্গে যখন যোগাযোগ হয়েছিল, তখন তিনি জানতেই না যে, এমন বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধের আওতায় পড়ে। তবে সেটা জানার পরই ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ করেন। শুধু তাই নয়, সমস্ত টাকাও ফেরত দিয়ে দেন।" একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে এক তামাক-বিরোধী সংস্থা অমিতাভের কাছে পান মশলার প্রচারের বিজ্ঞাপনের অংশ না হওয়ার আবেদন জানিয়েছিল। তার পরই অমিতাভ বিজ্ঞাপন থেকে সরিয়ে নেন নিজেকে। কারণ, তামাক ক্যানসারের কারণ।
advertisement
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, তামাক ব্যবহার ভারতে মৃত্যু ও রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতি বছর প্রায় ১.৩৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কারণ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্থা আরও বলেছে যে ভারত তামাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা এবং উৎপাদনকারী। ভারতে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রায় ২৬৭ মিলিয়ন মানুষ তামাক জাতীয় পণ্য (Tobacco-Based Products) ব্যবহার করে। ভারতে তামাক ব্যবহারের সবচেয়ে প্রচলিত রূপ হল ধোঁয়াহীন তামাক, যেমন- খৈনি, গুটখা, তামাক ও জর্দার সঙ্গে সুপারি ইত্যাদি।
advertisement
কেন কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপন ভারতে করা যায় না?
১৯৯৫ সালের কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (রেগুলেশন) অ্যাক্ট (Cable Television Networks Regulation Act) ও ১৯৯৪ সালের কেবল টেলিভিশন রুলস (Cable Television Rules) অনুযায়ী অ্যালকোহল, সিগারেট এবং অন্যান্য তামাক-জাত পণ্যের বিজ্ঞাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তার পরই সারোগেট বিজ্ঞাপনের উদ্ভব হয়। এছাড়াও রয়েছে ২০০৩ সালের সিগারেট এবং অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য আইন। এই আইনের ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে যে কোন ব্যক্তি এমন কোনও বিজ্ঞাপনে অংশ নিতে পারবে না, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সিগারেট বা অন্য কোন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বা সেবনের পরামর্শ দেয় বা প্রচার করে।
advertisement
কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক রুলস অনুযায়ী, এমন কোনও বিজ্ঞাপনের অনুমতি দেওয়া হবে না, যা সিগারেট, তামাকজাত দ্রব্য, মদ, অ্যালকোহল বা অন্যান্য নেশা দ্রব্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎপাদন, বিক্রয় বা সেবনকে উৎসাহিত করে। তবে, আইন যেমন থাকে, তেমনই কিছুটা ফাঁকও থাকে। সিগারেট, তামাকজাত দ্রব্য, মদ, অ্যালকোহলের সরাসরি বিজ্ঞান না দেওয়া গেলেও একটি নিয়ম রয়েছে। যদি কোনও পণ্যের ব্র্যান্ড নাম বা লোগো সিগারেট, তামাকজাত দ্রব্য, মদ, অ্যালকোহল বা অন্যান্য নেশা দ্রব্যের জন্যও ব্যবহৃত হয়, তবে সেটির বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে শর্তাবলী হল- বিজ্ঞাপনের স্টোরি বোর্ড বা ভিজ্যুয়ালেই শুধুমাত্র এমন পণ্যকেই দেখাতে হবে, যা নিষিদ্ধ নয়। বিজ্ঞাপনে নিষিদ্ধ পণ্যের কোনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উল্লেখ করলে হবে না।
advertisement
এই নিয়মেই মদ বা তামাক-জাত পণ্য প্রস্তুতকারকরা ব্র্যান্ড এক্সটেনশন চালু করে ও সারোগেট বিজ্ঞাপন দেয়। ব্র্যান্ড এক্সটেনশন হল অভ্যাস, ব্যবসায়িক জগতে এটা বেশ চলতিই বলা যায়। যেখানে একটি কম্পানি একটি সাধারণ ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে বিভিন্ন পণ্য চালু করে। এটি কোনও কম্পানিকে বিশ্বাসের সুবিধা নিতে এবং একটি সফল পণ্যের ব্যান্ডের নিচে অন্য আরও নতুন পণ্য বাজারে আনতে উৎসাহিত করে। যাই হোক, এটি এমন একটি মাধ্যম, যার সাহায্যে নিষিদ্ধ পণ্যের ব্র্যান্ড নামেই বোতলজাত পানীয় জল, সিডি ক্যাসেট, পোশাক, এয়ারলাইন, এমনকী একটি ক্রিকেট দলেরও প্রচার করা হয়।
advertisement
এই ধরনের বিজ্ঞাপনের জন্য কি কোনও নিয়ম আছে?
অ্যাডভারটাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (Advertising Standards Council of India) হল ভারতে বিজ্ঞাপনের স্ব-নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাদের কোডে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে সব পণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, তাদের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ নয় এমন অন্যান্য পণ্যের বিজ্ঞাপন হওয়ার কথা বলে, এমন নিষেধাজ্ঞা এড়ানো উচিত নয়। কিন্তু এটি কেবল টেলিভিশন রুলসে নির্ধারিত বিজ্ঞাপন ব্র্যান্ড এক্সটেনশনের ক্ষেত্রেও একই বিধান রাখে।
অনেক কম্পানি আছে যারা ব্র্যান্ড এক্সটেনশন চালু করে শুধুমাত্র নিষিদ্ধ পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্যই। যার মানে হল- ধরা যাক একটি পানীয় জল বা তাসের ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন দিয়েছে টেলিভিশনে, অথচ সেই ব্র্যান্ডের পানীয় জল বা তাস বাজারে কিনতে গেলে পাওয়া যাবে না। কিন্তু, ওই ব্র্যান্ডের নামেই সংশ্লিষ্ট কম্পানির তামাক বা অ্যালকোহলভিত্তিক পণ্য বাজারে কিনতে পারা যাবে। কেবল টেলিভিশন রুলস আরও বলে যে এই ধরনের বিজ্ঞাপনদাতাকে অবশ্যই দেখাতে হবে যে সিগারেট, তামাকজাত দ্রব্য, ওয়াইন, অ্যালকোহল, মদ বা অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্যের একই নাম বহনকারী অন্য পণ্যগুলিকে সঠিক পরিমাণেই বাজারে বিতরণ করা হয় এবং যথেষ্ট সংখ্যক আউটলেটেই পাওয়া যায়, যেখানে একই বিভাগের অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায়। রুলস আরও বলে যে এই জাতীয় ব্র্যান্ড এক্সটেনশন পণ্যগুলির বিজ্ঞাপনে ব্যয় পণ্যের প্রকৃত বিক্রয় লেনদেনের সঙ্গে অমিল থাকলে হবে না।
অ্যাডভারটাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে ব্র্যান্ড এক্সটেনশনের (Brand Extensions) বিজ্ঞাপন দিতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যকে একই বিভাগের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ইন-স্টোর প্রাপ্যতার কমপক্ষে ১০ শতাংশ হতে হবে, অথবা পণ্যের বার্ষিক লেনদেন ৫ কোটি টাকার বেশি হতে হবে। অথবা যে রাজ্যে পাওয়া যায়, সেই রাজ্যে বার্ষিক লেনদেন ১ কোটি টাকা হতে হবে। কেবল টেলিভিশন রুলস আরও বলে যে নিষিদ্ধ পণ্যের ব্র্যান্ড এক্সটেনশনের প্রচারমূলক বিজ্ঞাপন টেলিকাস্টের আগে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র নিতে হবে।
বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
এখন থেকে আর ‘এই’ ধরণের বিজ্ঞাপনে কাজ করবেন না অমিতাভ বচ্চন, সারোগেট অ্যাডভারটাইজিং আদতে কী?
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement