আগরতলা: রাত পোহালেই ত্রিপুরায় ভোট৷ উত্তর পূর্বের এই ছোট্ট রাজ্যের ভোট নিয়ে অবশ্য গোটা দেশেই কৌতূহল রয়েছে৷ ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান করে ত্রিপুরা দখল করা বিজেপি কি দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসতে পারবে? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে৷
বলার অপেক্ষা রাখে না, পাঁচ বছর আগে ৬০টির মধ্যে ৩৬টি আসন দখল করলেও ত্রিপুরায় এবার কঠিন লড়াইয়ের মুখেই পড়তে চলেছে বিজেপি৷ তার অবশ্য একাধিক কারণও রয়েছে৷
আরও পড়ুন: হাতের রং এবার লাল, গেরুয়া হঠাতে জোটের জোর কত? ক্ষোভ নিভিয়ে জয় খুঁজছে 'বামগ্রেস'
প্রথমবার ত্রিপুরা দখলের পরই বিজেপি-র অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷ আলটপকা মন্তব্য, ঔদ্ধত্য, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব- সবমিলিয়ে দলের মধ্যেই অসন্তোষ বাড়ছিল বিপ্লব দেবকে নিয়ে৷ ভাঙন ধরছিল দলের রাজ্য সংগঠনে৷
বিপ্লব দেবকে না সরালে যে ত্রিপুরাই তাদের হাতছাড়া হতে পারে, তা বুঝতে ভুল করেননি বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতারা৷ গত বছরের মাঝামাঝি সময় তাই তড়িঘড়ি বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসানো হয়৷
মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ত্রিপুরা বিজেপি-র অভ্যন্তরে ডামাডোল কমে৷ ধীরে ধীরে ত্রিপুরায় নতুন করে ঘর গুছিয়ে নিচ্ছিল গেরুয়া বাহিনী৷ এক্ষেত্রে বিজেপি-র সবথেকে বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনমুখী সামাজিক প্রক্যল্পগুলি৷
আরও পড়ুন: কন্যাসন্তান জন্মালেই ৫০ হাজার টাকা! মেয়েদের মন পেতে মরিয়া বিজেপি
সবকিছু যখন বিজেপি-র জন্য মসৃন ভাবে এগোচ্ছে, তখনই আদিবাসী আবেগকে কাজে লাগিয়ে উঠে আসে ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যোৎ মাণিক্য দেব বর্মণের তিপ্রামোথার নাম৷ অন্যদিকে ভোটের আগেই আসন সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেয় বাম-কংগ্রেস৷ ফলে ত্রিপুরায় এবার বিজেপি-র কাজটা সহজ নয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷
ত্রিপুরায় বিজেপি-র পক্ষে যদি যায় বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প, তার পাশাপাশি বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগও উঠছে৷ বিজেপি নেতারা মুখে বিপুল কর্মসংস্থানের কথা বললও সেই দাবিতে মন ভিজছে না যুব সমাজের৷ এর পাশাপাশি চাকরি হারানো দশ হাজারের বেশি সরকরারি স্কুল শিক্ষকের আন্দোলন তো রয়েইছে৷ যে ক্ষোভকে হাতিয়ার করছে ত্রিপুরার বিরোধী দলগুলি৷
সাংগঠনিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হলেও আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কও চিন্তায় রাখছে বিজেপি-কে৷ কারণ রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রই আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত৷ গতবার বিজেপি-কে ভরসা দিয়েছিল জোটসঙ্গী আউপিএফটি৷ কিন্তু এবার তাদের প্রভাব অনেকটাই স্তিমিত৷ বরং আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্কের উপরে উত্থান ঘটেছে তিপ্রামোথার৷ আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবিকে সমর্থন করে ক্ষমতায় এলে পৃথক রাজ্যের ইস্যু নিয়েওসরব হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রদ্যোৎ মাণিক্য৷
আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক হাতছাড়া হলে তার পাল্টা বাঙালি ভোটকে নিজেদের পক্ষে একজোট করাই এখন তাই বিজেপি-র লক্ষ্য৷ আদিবাসী প্রভাবিত কেন্দ্রগুলিতে যাতে সংখ্যালঘু বাঙালিদের সমর্থন তাঁদের দিকেই থাকে, সেটাই নিশ্চিত করার চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি৷ কারণ সত্যিই রাজ্যভাগের দাবি বিয়ে সক্রিয়তা বাড়লে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়েও আশঙ্কায় থাকবেন বাঙালিরা৷ বিজেপ ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা রাজ্যভাগের বিরুদ্ধে৷ যদিও বাঙালি ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনই বেশি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷ বলা ভাল, আদিবাসী ভোটের উপরেই ত্রিপুরার ভোটের ফলাফল এবং রাজ্যে বিজেপি-র ভবিষ্যতের অনেকটা নির্ভর করছে৷
এত কিছুর পরেও অবশ্য সাংগঠনিক শক্তির বিচারে বিজেপি-কে এগিয়ে রাখছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এর অন্যতম কারণ দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে শাসন করা বামপন্থীদের উপরে ক্ষোভ এবং সেই সময়ের অনুন্নয়ন৷ কংগ্রেস বামেদের সঙ্গে হাত মেলালেও ভাল কিছু করতে তাদের নিজেদের কতটা উৎসাহ রয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ কারণ কংগ্রেসের কোনও শীর্ষ নেতাই ত্রিপুরায় যাওয়ার প্রয়োজন বধ করেননি৷ অন্যদিকে বিজেপি-র হয়ে প্রচারে এসেছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা৷ মূল দুই বিরোধী শক্তির এই ছন্নছাড়া অবস্থাই হয়তো বিজেপি নেতাদের দ্বিতীয় বার ত্রিপুরা দখলের বিষয়ে ভরসা জোগাচ্ছে৷
সব সর্বশেষ পড়ুন ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন 2023 এখানে খবরনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: BJP, Tripura, Tripura Assembly Election 2023