Nadia News:থাকতে হয় মা-বাবাকে ছেড়ে, একা, চিঁড়ে-মুড়ি খেয়েই মাধ্যমিকে স্কুলের 'টপার' নিলয়
- Published by:Rukmini Mazumder
- hyperlocal
- Reported by:Mainak Debnath
Last Updated:
দারিদ্রতা কোনও প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না, জ্বলন্ত উদাহরণ শান্তিপুরের নিলয়
নদিয়া: সংগ্রাম করতে করতে সংযমী ! ছোটবেলা থেকেই অভিভাবক ছাড়া বড় হয়েছে। একা থেকে, গৃহস্থলীর সমস্ত কাজ সেরে, রেঁধে-বেড়েও বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক নিলয়! আগামীতে সে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে চায়, হতে চায় লোকো পাইলট।
নিলয়ের বাবা কর্মসূত্রে থাকে পুণেতে, বাবাকে সাহায্য করতে মা-ও থাকে তাঁর কাছে। একমাত্র সন্তান শান্তিপুরের বাথনাতে পৈত্রিক বাড়িতে একা থেকেই মাধ্যমিকে বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে। জানা যায় শান্তিপুর বাথনা স্টেশন রোডের কাছে বাড়ি নিলয় বিশ্বাসের।
সাত আট বছর আগেই বাবা প্রসেন বিশ্বাস অভাবের কারণে মাকে নিয়ে হোটেলের কাজে চলে যায় পুণেতে। এর পর কিছুদিন শান্তিপুরে মামার বাড়িতে ছিল নিলয়। সেখান থেকে একাই থাকতে শুরু করেন শান্তিপুর বাথনা স্টেশনের কাছে খাবরাডাঙ্গা এলাকায়, পৈত্রিক ভিটেতে। মাঝেমধ্যে তার এক মাসি বনগাঁর মাঝেরগ্রাম থেকে এসে তার কাছে থাকে। সম্পূর্ণ বাড়িতে একাই রান্না থেকে শুরু করে বাড়ির যাবতীয় কাজ করে পড়াশোনা করে নিলয়। রয়েছে বিপথে চালিত হওয়ার নানান প্রলোভন, কিন্তু তাতে বিচলিত না হয়ে নিলয় তার লক্ষ্যে অবিচল, হতে হবে লোকো পাইলট।
advertisement
advertisement
সাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে মালঞ্চ উচ্চ বিদ্যালয় পড়তে যায় নিলয়। তিন বছর ধরে আপাতত একাই থাকছে সে বাড়িতে। মায়ের সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও বাবার সঙ্গে কথা হয় না তেমন। তবে বাবা ,ছেলের থাকা খাওয়া এবং পড়াশোনার খরচ বাবদ সামান্য টাকা পাঠিয়ে থাকেন তাঁর স্বল্প উপার্জন থেকে । তাতেই কোনও মতে দিন গুজরান হয় তার।
advertisement
এ’বছর নিলয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বার হতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন বাবা-মা থেকে শুরু করে আত্মীয়-পরিজনেরা। স্কুলের মধ্যে ৫২২ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে নিলয়। ভূগোল ও ইতিহাসে সব থেকে বেশি পেয়েছে, দুটো বিষয়তেই তার নম্বর ৮২। এছাড়া অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞানেও লেটার মার্কস। ইতিমধ্যেই বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে নিলয়ের। কষ্ট হলেও তারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াবেন তাদের ছেলেকে।
advertisement
মাসি সন্ধ্যা বিশ্বাস রায় জানান, ” কখনও এক বেলা রেঁধে তিন বেলা খায়, আলু সেদ্ধ ভাত কিংবা শুধু ডাল। কখনও চিড়ে-মুড়ি খেয়েই কাটিয়ে দেয়। ভাবলে খুব কষ্ট হয়, কিন্তু আমার বাড়ি বনগাঁ। সেখান থেকে নিয়মিত আসা সম্ভব হয় না। তাই মাঝেমধ্যে এসে রান্না করে ঘর গুছিয়ে দিয়ে যাই।”
নিলয় জানায়, গত তিন বছর ধরে সে একাই থাকে বাড়িতে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে পড়াশোনায়। তাদের সাহায্যের জন্যই আজকে তার এই সাফল্য। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীলাভ প্রামাণিক জানান, সংগ্রাম করতে করতে সংযমী হয়ে উঠেছে, অর্থের প্রাচুর্য কিংবা বাবা-মার নিয়মিত তত্ত্বাবধানে থেকেও অনেকে বিপথে চালিত হচ্ছে। সেখানে নিলয় সকলের অনুপ্রাণযোগ্য।
advertisement
বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা তার পাশে আছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিলয়ের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
Mainak Debnath
view commentsLocation :
Kolkata,West Bengal
First Published :
May 05, 2025 3:53 PM IST