রাকেশ মাইতি, হাওড়া: কলম ধরা হাতে প্রয়োজনে জরির কাজে সূচ ধরতে হয়েছে। অভাব অনটনকে সঙ্গী করেই উচ্চ মাধ্যমিকে সফল অনন্যা। দুবেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করাই একপ্রকার দায় সংসারে। তবুও সে স্বপ্ন দেখতে ভোলেনি। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে এবার ইংরাজিতে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার ইচ্ছা। সেই ইচ্ছা পূরণ হবে কি, তা এখনও অজানা। স্বপ্ন পূরণেও বাধা অর্থনৈতিক সমস্যা। একচিলতে ঘরে তিন মেয়েকে নিয়ে দিন কাটান মা। জরির কাজ করে কোনও রকমে সংসার চলে।
লেখাপড়ার পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে জরির কাজে সঙ্গে দেয় প্রিয়া ও অনন্যা। সংসারের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বয়স্ক ঠাকুমা দাদু’কে নিয়ে ছয় জনের সংসার। এই চড়া মূল্যের বাজারে সংসারে এক প্রকার অচল অবস্থা। মাথার উপর বাবা থাকলে হয়তো এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হত না, মনে হয় প্রিয়া অনন্যার।
অভাব-অনটনের মাঝেও স্বপ্ন দেখতে ভোলেনি। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। অনন্যা জানায়, ফল আরও ভাল হওয়ার আশা ছিল। তবে যা হয়েছে তাতে খুশি। এই সফলতার পিছনে রয়েছে স্কুল শিক্ষকের অবদান এবং সর্বোপরি টিউশন শিক্ষক তরুণ সাঁতারার অবদান যা অনস্বীকার্য।
আরও পড়ুন : প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় প্রত্যন্ত পরিবারের দুই ছাত্র, খুশির জোয়ার নামখানায়
রাতের পর রাত জেগে কঠোর অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়েই নিজেকে প্রস্তুত করে তুলেছিল অনন্যা। পরিশ্রম আর ধৈর্যের ফসল হিসাবে এবার উচ্চমাধ্যমিকে কৃতিত্বের ছাপ রাখল উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের জোয়ারগড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের জগরামপুর গ্রামের অনন্যা কাঁজি। এবার সে উচ্চমাধ্যমিকে শিবেরহানা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪৬০ নম্বর পেয়েছে। বাংলায় ৮০, ইংরেজিতে ৯০, ইতিহাসে ৯৫, ভূগোলে ৯৩, শিক্ষাবিজ্ঞানে ৯০ ও সংস্কৃতে ৯২ পেয়েছে। ছোট থেকেই প্রবল আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে অনন্যার এগিয়ে চলা। ২০১০ সালে অনন্যার বাবা মারা যান। তিন মেয়েকে নিয়ে অথৈজলে পড়েন সরস্বতী কাঁজি। শুরু হয় জীবনযুদ্ধের এক অন্য লড়াই। জরির কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি তিন মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।