অনুমতি থাকা সত্ত্বেও ভিনরাজ্য থেকে ফেরার পথে রোগীর গাড়ি আটকাল পুলিশ, কিন্তু কেন!

Last Updated:

যে এলাকায় বর্তমানে আটকে রয়েছেন অসহায় পরিবারগুলো তার অদূরেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন এলাকা। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে নিরুপায় মানুষদের আর্জি, নিরাপদে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থার উদ্যোগ নিক রাজ্য সরকার বা মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।

#কলকাতাঃ ওঁরা সবাই চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন ভেলোর। ১২ মার্চ দুর্গাপুর  এবং এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও দশটি পরিবার পরিবারের চিকিৎসার জন্য  পৌঁছন দক্ষিণ ভারতের সিএমসি হাসপাতাল ভেলোরে। চিকিৎসা শেষ করার পর প্রত্যেকেই আটকে পড়েন সেখানে। ট্রেনে ফেরার টিকিট থাকলেও লক ডাউনের  কারণে বাতিল হয় সফর। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বাড়ি ফেরা। দিনের-পর-দিন চিকিৎসা হয়ে যাবার পরেও বাড়ি ফিরতে না পারায় চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েন এ রাজ্য থেকে যাওয়ার রোগী এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন। থাকা, খাওয়া-দাওয়া সবেতেই রোগীদের নিয়ে চূড়ান্ত নাকাল হতে হয়। টাকা পয়সাও ফুরিয়ে আসছিল। এই দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনের কাছে  পশ্চিমবঙ্গে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়ার আবেদন-নিবেদন করলেও প্রথমে কিছুতেই রাজি না হলেও শেষমেশ তামিলনাড়ুর ভেলোরে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন নিদারুণ সমস্যায় পড়া রোগী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
খোদ জেলা শাসকের কাছে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমস্ত মেডিকেল রিপোর্ট-সহ দরবার করে রোগীর পরিবারগুলিকে বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে আর্জি জানান।  শেষমেষ মেলে  অনুমতি। তবে সেই অনুমতি মেলার পর বর্তমানে আবারও চরম সমস্যার সম্মুখীন হন রোগী এবং তাঁদের পরিবার। জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত অনুমতিপত্র মেলার পর মঙ্গলবার দক্ষিণ ভারতের ভেলোর থেকে গাড়ি ভাড়া করে রওনা দেয় দশটি পরিবার। ঠিক হয় ভেলোর থেকে দুর্গাপুর, মুর্শিদাবাদ এবং পশ্চিমবঙ্গে যার যেখানে বাড়ি কিলোমিটার প্রতি সেই গাড়ি চব্বিশ টাকা করে নেবে। বিপুল টাকার ব্যাপার থাকলেও অসহায় ও নিরুপায় মানুষগুলো তাতেই রাজি হন। শুরু হয় সড়কপথে যাত্রা। কিন্তু বিপত্তি  দেখা যায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে। এক এক করে অনুমতি পত্র পাওয়া দশটি গাড়ি বাংলা উড়িষ্যা সীমানায় পৌছতেই আটকায়  পুলিশ।
advertisement
advertisement
জলেশ্বরের  সোনাকোনিয়া  চেকপোস্টের কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা গাড়ির চালক এবং আরোহীদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নেন। গাড়ি চলাচলের প্রয়োজনীয় অনুমতি পত্র, হাসপাতালে  কাগজ দেখানোর পরেও পুলিশকর্মীরা জানিয়ে দেন বাংলায় ঢোকা যাবে না। গাড়িতে চিকিৎসা ফেরত রোগীরা রয়েছেন। পাশাপাশি ভেলোর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়ার সরকারি অনুমতি পত্রও রয়েছে। তাহলে কেন যেতে দেওয়া হবে না? রোগী এবং তাঁদের পরিবারের এই প্রশ্নের উত্তরে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা সাফ জানিয়ে দেন, করোনা সংক্রমণ তথা লক ডাউনের কারণে অন্য রাজ্য থেকে বাংলায় কোন যানবাহন ঢোকার অনুমতি নেই'। ফাঁপড়ে পড়েন রাজ্যে ফেরত বাসিন্দারা। পুলিশের বিরুদ্ধে অমানবিকতার অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন সবাই। তাঁদেরই একজন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বাবার কিডনির সমস্যা রয়েছে। ওদের কত অনুরোধ করলাম। অনুমতিপত্র থাকা সত্বেও পুলিশকর্মীরা  গাড়ি থেকে প্রত্যেককে নামিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে চালকদের যেখান থেকে এসেছেন সেখানে ফিরে যেতে বললেন।" এরপর সওয়ারিদের নামিয়ে রেখেই মাঝপথেই চালকরা নিজেদের প্রাপ্য নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যান ভেলোরের  উদ্দেশ্যে। বর্তমানে যে  এলাকায় অসহায় পরিবারগুলো আটকে রয়েছে, তার অদূরেই পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে নিরুপায় মানুষদের আর্জি, নিরাপদে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থার করুক রাজ্য সরকার।
advertisement
দুর্গাপুর এ জোনের  ৭২ বছরের প্রবীণ দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের  অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রঞ্জিতকুমার চট্টোপাধ্যায় কিংবা দুর্গাপুরের বি জোনের বাসিন্দা রঞ্জিত সিকদার আজ অনেকেই আশ্রয়হীন। ভোর রাত থেকে খোলা আকাশের  নীচে রাস্তার ধারে দিন  কাটছে। হাতে টাকা-পয়সা নেই, খাবার নেই, এমনকি নিয়মিত জীবনদায়ী ওষুধ খাওয়ার মত জলও নেই। "কী করবো কিছু ভেবে উঠতে পারছি না" রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, "আমাদের বাড়ি ফেরানোর ব্যাপারে এখানে কারও কোনও হেলদোল নেই। শুনশান রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে বসেই সময় কাটছে। কী করব ভেবে উঠতে পারছি না।" অপর এক ভুক্তভোগীর কথায়, 'অনেকটা বেশি টাকা খরচ করেও অসুস্থ আত্মীয়কে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলাম না। জানিনা কবে পৌঁছব।'  একরাশ উদ্বেগ, আশঙ্কা আর উৎকণ্ঠায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে এক কঠিন লড়াইকে সঙ্গী করে। এই লড়াইয়ের শেষ কবে? প্রশ্ন আছে, তবে উত্তর এখনও অজানা অসহায় পরিবারগুলির কাছে।
advertisement
VENKATESWAR  LAHIRI 
বাংলা খবর/ খবর/করোনা ভাইরাস/
অনুমতি থাকা সত্ত্বেও ভিনরাজ্য থেকে ফেরার পথে রোগীর গাড়ি আটকাল পুলিশ, কিন্তু কেন!
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement