মহামারি প্লেগ-কলেরা থেকে আয়লারও সাক্ষী, তবু Covid 19 ভয় ধরিয়েছে কলকাতার ’এনসাইক্লোপিডিয়া’র বুকেও!
- Published by:Elina Datta
- news18 bangla
Last Updated:
কবিগুরুর শেষযাত্রা, ভারতের স্বাধীনতা লাভ..... ১০০ বছর ধরে সাক্ষী আরও অনেক কিছুর! কম তো নয়! কিন্তু করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবের সামনে অন্য কিছুকে মেলাতে পারছেন না শহরের শতায়ু ব্যক্তিত্ব।
#কলকাতা : ১৯৪১-এ কবিগুরুর শেষ যাত্রায় সামিল হয়েছিলেন তিনি। ভক্তদের ভিড়ে কবিরাজকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভবানীপুর থেকে উত্তরের নিমতলা পর্যন্ত পায়ে পায়ে হেঁটে ছিলেন । চৌরঙ্গীতে শুনেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের জনসভা। নেতাজি তখন কলকাতার মেয়র।১৯৪৭-র সেই রাতের কথা গড় গড় করে বলে দিতে পারেন তিনি। স্বাধীনতার ঐতিহাসিক রাতে পুরো শহরটাই মশাল হাতে নেমে পড়েছিল মহানগরীর রাজপথে।কলকাতার এনসাইক্লোপিডিয়া বেহালার হরিপদ চক্রবর্তী শাস্ত্রী। বয়স কাঁটায় কাঁটায় ১০০।
৩০০ বছরের পুরনো শহরটাকে শেষ ১০০ বছর দেখেছেন সামনে থেকে। সাক্ষী থেকেছেন এই শহরের নানা ওঠা-পড়ার। ১৯০০ শতাব্দীর গোড়ায় প্লেগের মতো মহামারীতে পাড়া-কে-পাড়া উজাড় হয়ে যেতে দেখেছেন। আবার পাঁচের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কলেরার মত মারণ রোগের সাক্ষী থেকেছেন। ১০০টা বছর! কম তো নয়! কিন্তু করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবের সামনে অন্য কিছুকে মেলাতে পারছেন না শহরের শতায়ু ব্যক্তিত্ব। বলছেন,"প্লেগ-কলেরার সময়ে পাড়া ফাঁকা হয়ে যেত। শ্মশানে শবদাহ করে ফিরেই একই বাড়িতে আবারো মৃত্যুর ছায়া নামতে দেখেছি। কিন্তু এই পরিস্থিতির সামনে পড়িনি। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা আরও বেশি। সমাজের শিরদাঁড়াটাই ভেঙে দিচ্ছে COVID-19।" বলতে বলতেই স্বর বুজে যায়। আবছা হয়ে আসে শতায়ুর গলা।
advertisement
হরিপদবাবু ফিরে যান ফেলে আসা ১০০ বছরের স্মৃতির সরণিতে। যেখানে ভিড় করে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, ডঃ বিধান চন্দ্র রায়রা।একশোতেও সহজ, স্বচ্ছন্দ, সাবলীল। ভোরে উঠে আহ্নিক, গায়ত্রী মন্ত্র জপ থেকে পুজো পাঠ। সবটাই নিজে হাতে করেন বেহালার শতায়ু। এই একশোতেও বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাট-বাজার করেন অনায়াসে। বয়স তার কাছে হার মেনেছে। স্মৃতির কোণায় লেগে আছে কল্লোলিনীর নানা ঘটন-অঘটন, উত্থান পতন। জন্ম ওপারের ফরিদপুরে। শৈশবেই চলে আসা ভবানীপুরে। তারপর ঠিকানা বদলে এখন বেহালা।
advertisement
advertisement
বাড়িতে মা দুর্গা অধিষ্ঠিত। ৩১৬ বছরে পা রেখেছে বেহালার চক্রবর্তী বাড়ির সাবেকি দূর্গা। গড় গড় করে বলে যান গায়ত্রী মন্ত্র। বয়স টোল ফেলতে পারেনি হরপদ চক্রবর্তীর শিক্ষা-সংস্কৃতি আভিজাত্যে। একটা সময়ে পাশ্চাত্য বৈদিক সংঘের সভাপতি ছিলেন। হাসতে হাসতে বলেন,"আরে! ১ টাকায় চারটে ইলিশ মাছ খেয়েছ? আমি খেয়েছি!" স্থানীয় পৌর প্রতিনিধি সুদীপ পোল্লে বলছিলেন,"ঝনার মত মানুষকে অভিভাবক হিসেবে পাওয়াটাই ভাগ্যের"৷
advertisement
স্বাধীনতার রাতের প্রসঙ্গ উঠলেই অনর্গল শতায়ু। শাস্ত্রী সাহেবের স্মৃতিতে ঝলমল করছে ১৯৪৭-র ঐতিহাসিক রাত। কিন্তু একশ বছরের জীবনে এমন পরিস্থিতির সামনে পড়েননি কখনও। দু'বেলা বাড়ি থেকে বেরনো মানুষটা পরিবার-পরিজনদের স্নেহের শাসনে এখন নজরবন্দি। ওঠার আগে মুখের মাস্কটা সামান্য সরিয়ে স্নেহশীল অভিভাবকের মতই বললেন,"১০০ বছরের জীবনে ওঠাপড়া কম দেখিনি। কিন্তু এমন বিপদ প্রথম দেখছি। সাবধানে থেকো। আর সবাইকে বল, বাড়িতে থাকতে। জীবন বড় দামী। জীবনের থেকে বড় কিছু হয় না।"শহরে ১০০ বছর পার করে দিয়েছেন। এ কথা তো তারই সাজে। অভিভাবকের আভিজাত্য ভরা অনুশাসন তো তাকেই মানায়!
advertisement
PARADIP GHOSH
view commentsLocation :
First Published :
April 11, 2020 4:16 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/করোনা ভাইরাস/
মহামারি প্লেগ-কলেরা থেকে আয়লারও সাক্ষী, তবু Covid 19 ভয় ধরিয়েছে কলকাতার ’এনসাইক্লোপিডিয়া’র বুকেও!