মৃত্যুশয্যায় সদ্যোজাত, ৩দিন অনাহারে থেকেও জোগাড় হয়নি ওষুধের টাকা, শহরে এসে অথৈ জলে পরিবার
- Published by:Shubhagata Dey
Last Updated:
২২ মার্চ সারা দেশজুড়ে ডাকা হয় জনতা কারফিউ। আর তারপরে ২৩ মার্চ থেকে শুরু হয় লক ডাউন। প্রায় পনের দিন কেটে গিয়েছে। টাকা না থাকায় অথৈ জলে পড়ে পরিবার।
#কলকাতাঃ বাসুদেব পাত্র এবং শ্যামলী পাত্র। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাসিন্দা। বাসুদেব এলাকায় অন্যের জমিতে মুনিষ খাটেন। স্ত্রী বাড়ির কাজ সামলানোর পাশাপাশি স্বামী ক্ষেতের কাজে সাহায্য করতেন। কোনওরকমে চলত সংসার। মাসখানেক শ্যামলীর কোল আলো করে আসে পুত্রসন্তান। কাঁথির একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জন্ম হওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, শিশুর হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে। প্রথমে কাঁথি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, সেখান থেকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ এবং তার পরে গত ২০ মার্চ পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে একরত্তি ছেলে নিয়ে আসেন বাসুদেব এবং শ্যামলী। শিশুর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক থাকায় তাকে আইসিইউতে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ করেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে স্বামী-স্ত্রীর। ২২ মার্চ সারা দেশজুড়ে ডাকা হয় জনতা কারফিউ। আর তারপরে ২৪ মার্চ থেকে শুরু হয় লক ডাউন। প্রায় পনের দিন কেটে গিয়েছে। টাকা না থাকায় অথৈ জলে পড়ে পরিবার।
মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ থেকে বাসুদেব এবং শ্যামলীকে বলা বলা হয়েছিল এই ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে চিকিৎসা করাতে কোন খরচ লাগে না। কিন্তু সেখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই যেটুকু টাকা এনেছিল তাঁরা, তা দু দিনের মধ্যেই সব শেষ।গত বেশ কয়েকদিন ধরেই আর টাকা নেই। মাঝে দু-একদিন অন্য রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ধার করে ছেলের চিকিৎসার জন্য ওষুধ কিনে দিলেও শেষ ১০ দিন ধরে তা অার কিনে দিতে পারছেন না অসহায় বাবা, মা। চোখের জল বাঁধ মানছে না। তাতে কি চোখের সামনে একরত্তি ছেলেটা মরে যাবে, মা হয়ে কি তা দেখা যায়। হন্যে হয়ে সবার কাছে হাত পাতছেন শ্যামলী। অার স্বামী বাসুদেব চিন্তায় পাষাণ হয়ে গিয়েছে। এত বড়ো শহরে কার কাছে হাত পাতবেন, কী করবেন, কিছুই যে মাথায় আসছে না। গত তিন দিন ধরে খাবার জোটেনি স্বামী-স্ত্রীর। ভাল করে কথাও বলতে পারছে অনাহারে থেকে। তিল তিল করে সন্তান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, এ যে তারা আর দেখতে পারছেন না। কোনওরকমে এক জামা কাপড়ে কাঁথি থেকে কলকাতায় তাদের সন্তানকে সুস্থ করার জন্য এসে এই চরম বিপদে পড়তে হতে পারে, তা যে স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তারা।
advertisement
ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ কর্তৃপক্ষ যদিও মানবিকতার খাতিরে এখনও পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকার জন্য কোনও টাকা দাবি করেনি এই পরিবারের কাছে। তবে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বেসরকারি হাসপাতাল হওয়ায় তারা আর কী করতে পারেন! এখনও পর্যন্ত বহু শুধু ওষুধই তাঁরা নিজেরাই কিনে দিয়েছেন। কিন্তু এই সদ্যজাতের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবুও চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।অন্যদিকে অভুক্ত এই শিশুর বাবা-মাকে আগামী দিনে দুবেলা খাবার আশ্বাস দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মরণাপন্ন শিশুর বাবা মায়ের চোখের জল একটাই প্রশ্ন করছে, তিলোত্তমা কলকাতায় কি কেউ নেই পাশে দাঁড়ানোর?
advertisement
advertisement
ABHIJIT CHANDA
view commentsLocation :
First Published :
April 13, 2020 2:14 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/করোনা ভাইরাস/
মৃত্যুশয্যায় সদ্যোজাত, ৩দিন অনাহারে থেকেও জোগাড় হয়নি ওষুধের টাকা, শহরে এসে অথৈ জলে পরিবার