কোচবিহার: অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে গোটা রাজ্য জুড়ে। অনেকের মধ্যে এই ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অস্পষ্টতা রয়েছে। এই সময় কেমন ভাবে সাবধানে থাকতে হবে সেই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে কোচবিহারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অর্ণব নিয়োগী।
তিনি জানিয়েছেন, "অ্যাডিনো ভাইরাস আসলে অনেক গুলি ভাইরাসের একটি গ্রুপ। যে কোনও বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে খুব সহজেই অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে একদম দুধের শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। বেশিরভাগ বাচ্চাদের ১০ বছর বয়সের আগে অন্তত একবার অ্যাডেনো ভাইরাস সংক্রমণ হয়। বিভিন্ন ধরণের অ্যাডিনো ভাইরাস রয়েছে। তাই বাচ্চারা একাধিকবার সংক্রামিত হতেই পারে। এই ভাইরাস গুলির অন্যান্য ভাইরাসের মতো একটি নির্দিষ্ট কোনও ঋতু নেই।
তিনি আরও বলেন, "এই ভাইরাসের এর সংক্রমণ বছরের যে কোনও সময় ঘটতে পারে। অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলি খুব সহজেই বুঝতে পারা যায়। অ্যাডিনো ভাইরাসের ধরন নির্ভর করে তা মূলত শরীরের কোন অংশে আক্রান্ত হয়েছে তার উপর। এই ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে শিশুরা সর্দি, গোলাপি চোখ, ক্রুপ, ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়া, পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ, মূত্রাশয় সংক্রমণ, মেনিনজাইটিস এবং এনসেফালাইটিস এই সমস্ত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বেশিরভাগ সংক্রমণই মৃদু হয়ে থাকে। তবে গুরুতর সংক্রমণও ঘটতে পারে।
চিকিৎসক অর্ণব নিয়োগী জানিয়েছেন, "বিশেষ করে শিশুদের এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে এই ধরনের রোগের প্রাধান্য বেশি দেখতে পাওয়া যায়। অ্যাডিনো ভাইরাস অত্যন্ত সংক্রামক একটি ভাইরাস। স্কুল, হাসপাতাল এবং খেলার জায়গায় এই ধরনের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত কেউ কাশি বা হাঁচি দিলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। পরিষ্কার থাকতে হবে এই সময়ে।
সতর্ক করে ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই রোগে সংক্রমিত ব্যক্তিকে শিশুর স্পর্শ করার মাধ্যমেও ভাইরাসটির আক্রমণ হতে পারে। অ্যাডিনো ভাইরাসগুলি দীর্ঘ সময়ের জন্য খোলা হাওয়ায় বেঁচে থাকতে পারে। অ্যাডিনো ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পর সাধারণত ২ দিন থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে এর সমস্ত লক্ষণগুলি শুরু হয়। বেশিরভাগ অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ রোগী বাড়িতে চিকিৎসার মাধ্যমেই ভাল হয়ে যায়। তবে তাঁদের প্রচুর বিশ্রাম করতে হয়, পর্যাপ্ত জল পান করতে হয়, জ্বর আসলে জ্বরের ওষুধ খেয়ে নিতে হয়, বমি এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা যারা পর্যাপ্ত তরল পান করতে পারে না, তাদের ডিহাইড্রেশনের জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
আরও পড়ুন, কলকাতার বাইরে অ্যাডিনো সংক্রমণ নির্ণয়ের ব্যবস্থা নেই কেন? চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকেআরও পড়ুন, বেড়েই চলেছে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা, অ্যাডিনো আতঙ্কে নতুন ব্যবস্থা বর্ধমানেতিনি বলেন, বেশিরভাগ অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণ কয়েক দিন থেকে এক বা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। গুরুতর সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গের কারণ হতে পারে, যেমন কাশি। সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণের রোধ প্রতিরোধ করার জন্য, বাচ্চাদের বাবা এবং মায়ের বাচ্চাদের উপযুক্ত যত্ন নিতে হবে। বাবা মায়ের নিশ্চিত করতে হবে যেন বাচ্চারা তাদের হাত ভালভাবে এবং প্রায়শই ধুয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে। এছাড়াও বাচ্চাদের খেলনা গুলি সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। উপসর্গ না যাওয়া পর্যন্ত সংক্রমণে আক্রান্ত বাচ্চাদের ডে-কেয়ার এবং স্কুলে মধ্যে না পাঠিয়ে বাড়িতে রাখতে হবে। তবে যদি বাচ্চা খুব অসুস্থ বলে মনে হয় তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
Sarthak Pandit
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Adenovirus