#কলকাতা: ভারতে পণপ্রথা আজও নির্মূল হয়নি। কন্যাসন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই বিয়ে আর যৌতুকের খরচ নিয়ে হিসেবনিকেশ করতে বসেন মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনরা। কন্যা তখন আর শুধু সন্তান নয়, বরং দায় হয়ে দাঁড়ায়। আজও প্রত্যন্ত গ্রামে, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ে মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর বদলে ‘ভাল স্ত্রী’ হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়। শেখানো হয়ে গেরস্থালির কাজ।
শুধু প্রত্যন্ত গ্রাম বা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়েই নয়, ভারতের অনেক শহরেও বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের স্কুল ছাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। পরিসংখ্যান অন্তত তাই বলছে। এতে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত তো করা তো হয়ই, বাল্যবিবাহের দিকেও ঠেলে দেওয়া হয় মেয়েদের। যদিও ভারতে বাল্যবিবাহ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলায় কন্যা সন্তানকে শিক্ষিত করার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে এসেছে ভারত সরকার। এখানে ভারতে কন্যা সন্তানের কল্যাণে ৪টি সরকারি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হল।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা: দেশে কন্যা সন্তানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে যে প্রকল্প প্রচলিত আছে, তার মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত, একই সঙ্গে জনপ্রিয়ও এই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা। কন্যা শিশুদের জন্য ২০১৫ সালে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পে পিতামাতাকে কন্যা সন্তানের ভবিষ্যতের পড়াশোনা এবং বিয়ের খরচের জন্য বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়।
প্রকল্প কীভাবে কাজ করে – এই প্রকল্পে ২৫০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। তার পর ১৫০ গুণিতকে যত খুশি বিনিয়োগ করা যায়। তবে সেটা যেন এক অর্থবর্ষে দেড় লাখ টাকার বেশি না হয় সেই খেয়াল রাখতে হবে। এই প্রকল্পের মেয়াদ ১৫ বছর। অর্থাৎ ১৫ বছর ধরে বার্ষিক দেড় লক্ষ টাকা করে বিনিয়োগ করা যাবে। মেয়াদ শেষ হলে জমা টাকার উপর সুদ সহ রিটার্ন মিলবে। অর্থাৎ কেউ যদি ১৫ বছরের জন্য বার্ষিক ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করেন তাহলে বর্তমান সুদের হার ৭.৬০ শতাংশ অনুযায়ী ৪৩.৫ লক্ষ টাকা হবে। মেয়ের ১০ বছর বয়সের আগেই এখানে বিনিয়োগ করতে হয়। অর্থাৎ কলেজে ঢোকার আগেই হাতে প্রকল্পের টাকা চলে আসবে। তার পর প্রয়োজন মতো তা খরচ করা যায়।
আরও পড়ুন: নতুন বছর Modi সরকারের কর্মীদের মালামাল করতে আসছে! বেতন সরাসরি বাড়বে ৪৯৪২০ টাকাসুফল – সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনায় আয়কর আইনের ৮০সি ধারার অধীনে ছাড় পাওয়া যায়। তিন রকম ছাড়। বিনিয়োগকৃত পরিমাণ কর-মুক্ত, অর্জিত সুদ কর-মুক্ত এবং ম্যাচিওর হওয়া পরিমাণও কর-মুক্ত। কর মুক্ত হওয়ার কারণেই এই প্রকল্প আর্থিক সুবিধার দিকটি সুনিশ্চিত করে।
বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা: বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা হল সমাজের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মেয়েদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলে কন্যা সন্তানের তালিকাভুক্তি ধরে রাখার নিশ্চিত করতেই এই স্কিম আনা হয়েছে। কন্যা সন্তানকে উন্নত মানের শিক্ষা দেওয়াই এই স্কিমের মূল লক্ষ্য।
সুফল – এই স্কিমের অন্যতম লক্ষ্য কন্যাভ্রুণ হতা রোধ করা। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী শিশু লিঙ্গ অনুপাত ১০০০ পুরুষের তুলনায় ৯৪০ মহিলা। দেশের কয়েকটি রাজ্যে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও: কন্যা সন্তানদের জন্য আনা স্কিমগুলোর মধ্যে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্প সবচেয়ে জনপ্রিয়। অনেক স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এই স্কিমটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সুফল – মেয়েরাও যে পারিবারিক সম্পত্তি উত্তরাধিকার হতে পারে তা নিশ্চিত করে এই স্কিম। তাঁদের স্কুলে পাঠানো, উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা হয়। এই স্কিমের মূল লক্ষ্য, মেয়েদের সঙ্গে যেন কোনও বৈষম্য বা পক্ষপাত না করা হয় তা নিশ্চিত করা। এই স্কিমের সঙ্গে তিনটি পৃথক মন্ত্রক জড়িত - মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
লাডলি স্কিম: এই প্রকল্পটি রাজ্যের শিশু ও মহিলা উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে হরিয়ানা সরকার চালু করেছিল। হরিয়ানা প্রধানত একটি পুরুষ-প্রধান রাজ্য এবং অনেক ক্ষেত্রে কন্যা সন্তানের জন্মকে অশুভ লক্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাই মেয়ের জন্ম সংক্রান্ত কলঙ্ক ভাঙতে এই স্কিম চালু করা হয়েছিল। এই স্কিমের লক্ষ্য, রাজ্যের লিঙ্গ অনুপাত বজায় রাখা এবং রাজ্য জুড়ে মহিলাদের জন্য উন্নত শিক্ষার সুবিধা প্রদান করতে মেয়েদের সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।