‘রেইনবো জেলি’ রিভিউ : বাংলায় ‘তারে জমিন পর’ তৈরি হলে, আমির লাগবে না, লাগবে ‘ঘোতন’!
Last Updated:
‘রেইনবো জেলি’ নামে একটা ছবি এসেছে ৷ হ্যাঁ, এই শুক্রবারই মুক্তি পেয়েছে ৷ সকালের শো-তে হাতে গোণা ৮ জন ! তবে বাজি রেখে বলতে পারি, এই সংখ্যা বাড়বেই ৷
#কলকাতা: ‘রেইনবো জেলি’ নামে একটা ছবি এসেছে ৷ হ্যাঁ, এই শুক্রবারই মুক্তি পেয়েছে ৷ সকালের শো-তে হাতে গোণা ৮ জন ! তবে বাজি রেখে বলতে পারি, এই সংখ্যা বাড়বেই ৷ ধীরে ধীরে বাড়লেও, এই ছবির দর্শক বাড়বেই ৷ গোটা দু’ঘণ্টার রেইনবো জেলি দেখার পর, দর্শক তাঁর বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজ্জন সবাইকে অন্তত একটিবার ফোন করে, দেখা হলে বলবেনই, যে ছবিটা দেখে এসো ! ভাল ছবি ৷ ভালো লাগবে ! একটা ছবিকে প্রোমোট করতে কলাকুশলীরা যা খাটেন আজকাল ! সেখানে দাঁড়িয়ে এই ছবির জন্য প্রোমোশনের কাজটি ‘রেইনবো জেলি’-র দর্শকই খেটে দেবেন, তা বাজি রেখে বলতে পারি ৷ আর এখানেই হয়তো পরিচালক হিসেবে সৌকর্য ঘোষালের আসল প্রাপ্তি ৷
পরিচালক সৌকর্য ঘোষালের এই ছবি সবাই না দেখলে, বদলাবে কীভাবে সমাজ ? রূপকথারা কীভাবে বাঁচবে? মেশিন, অ্যাপ, মোবাইল ঘেরা এই সমাজে কীভাবে বেঁচে থাকবে শৈশব ও তাঁর রংবেরঙ, আজগুবি স্বপ্ন ! সৌকর্যের এই ছবি ঠিক যেন এখান থেকেই শুরু ! যেখানে এক ‘স্পেশাল চাইল্ড’, নিজের মতো করে স্বপ্ন বুনে চলেছে ৷ জানলার বাইরের জগতটা কঠিন বাস্তব৷
advertisement
ঘোতনের কাছে জলের ফিল্টার উটের কুঁজ ৷ ভাঙা রং পেনসিলে গোটা পৃথিবী ৷ বাথটবের বিছানায় আঁকার খাতায় মাকে লেখা চিঠি ৷ আর ভাঙা বেসিনের জলে বুঁদ বুঁদ রঙিন জল, লাফিং বুদ্ধা আর রঙিন মাছ ৷ ঘোতনের আশে-পাশের জগতটা ঠিক এরকমই, ছড়ানো ছিটানো স্বপ্নের মতো ৷ এক স্বপ্নেতে ‘লজিক’হীন অনেক কিছু ! এই ঘোতন লজিক বোঝে না ৷ তবে অন্যদিকে ঘোতনের জাগা চোখ এক দুঃস্বপ্ন দেখে ৷ যেখানে চায়ের বাটি পুড়ে কালো হয়ে গেলে দুষ্টু ‘গন্ডারিয়া’র মারধর করে ৷ যেখানে আঁকার খাতায় মায়ের ছবি এঁকে ঘোতন চোখ ভেজায় ৷ বাসন মাজে, আবার নতুন করে চা তৈরি করে মামাকে খুশিও করে ৷
advertisement
advertisement
সৌকর্যের ‘রেইনবো জেলি’ ঘোতনের এই স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের মাঝেই আটকে ৷ একদিকে ‘হিজিবিজ’ ভাবনা ৷ উড়ো জাহাজ, গ্যাস বেলুন, রাজপুত্র হওয়ার অপেক্ষা, যখের ধন ৷ আর অন্যদিকে দুষ্ট মামা, কাবুলিওয়ালার কাছে ধারদেনা ৷ আর বাইরের লোকের কাছে ‘অপয়া’ শব্দ ৷ তবে ঘোতনের এই দুই স্বপ্নের মাঝে রয়েছেন অনাদি দা চা-ওয়ালা ৷ যা কিনা ঘোতনের কাছে তাজা অক্সিজেন ৷ আর হঠাৎ করে আসা পরী পিসি ও পাড়ার মেয়ে ছোট্ট পপিন্স !
advertisement
স্বাদ আর রং মনে বদল ঘটায় ৷ ঘোতনের পরী পিসি তাই তার বর্মি বাক্সতে নিয়ে আসে ‘সূর্যের সাত রং’ ৷ ৭ রকম স্বাদ ৷ যা কিনা মন বদলে দেবে ঘোতনের দুষ্ট মামার ! সৌকর্য গোটা ছবি জুড়ে ঘোতন ও পরী পিসিকে সঙ্গে নিয়ে এই রংবাজি, রাঁধুনেগিরি-ই করেছেন ৷ তবে রূপকথার মতো করে সাজানো এই ‘রেইনবো জেলি’তে ছোটদের হাতে বড়দের গালে থাপ্পরও মেরেছেন ৷ থাপ্পর মেরেছেন দৌঁড়ে চলা এই সমাজটাকে, যা কিনা স্বপ্নকে কেড়ে নিচ্ছে ৷ হাত থেকে রং পেন্সিল কেড়ে নিয়ে ভাবনাকে আটকে দিচ্ছে ৷ তবে ছবিতে এই সব বিষয়কে চুপটি করে ঢোকালেও, সৌকর্য বোল্ড করা আন্ডারলাইনে কোনও বার্তা দিতে চাননি ৷ তাই তো ছবিটা ছোটোদের হয়েও, বড়দের হয়ে উঠেছে ৷
advertisement
নবারুণ বোসের মিউজিক, সাহানা বাজেপেয়ি ও মৌসুমি ভৌমিকের কণ্ঠ সোজা গিয়ে হৃদয় ছোঁয় ৷ অন্যদিকে পরী পিসি গানে পলাশপ্রিয়া বসুর মিষ্টি আওয়াজ মন জয় করে ৷
অভিনয়ের দিক থেকে এই ছবি একেবারেই ঘোতনের অর্থাৎ মহাব্রতর ৷ তারপরেই রাখতে হয় পরী পিসি শ্রীলেখাকে ৷ কৌশিক সেন, শান্তিলাল ভট্টাচার্য দারুণ ৷ মিষ্টি লেগেছে পপিন্সের চরিত্রে অনুমেঘাকে ৷ ‘রেইনবো জেলি’ আসলে গোটা টিমের খাটনির ফসল ৷ ঠিক যেমন সূর্যের সাত রং ! খাওয়ারের সাত স্বাদ ৷
advertisement
‘রেইনবো জেলি’ আসলে এক আবেগের ছবি ৷ আর সেই ছবি বড্ড আবেগ ও মায়া দিয়ে তৈরি করেছেন সৌকর্য ৷ তাই তো ছবির ক্রেডিট কার্ড ও সিনেমার ভিতরে সব ইলাস্ট্রেশন এবং অ্যানিমেশন নিজে হাতে তৈরি করেছেন সৌকর্য ৷ যা কিনা ছবির মধ্যে ‘ছোট্টবেলা’র অবাধ প্রবেশ ঘটিয়েছে ৷ ছবি দেখতে দেখতে আমির খানের ‘তারে জমিন পর’ মনে পড়লেও, টলিউডে যে আমির খান ছাড়াও রেইনবো জেলি হতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছেন সৌকর্য !
advertisement
Location :
First Published :
May 28, 2018 2:25 PM IST