আলিপুরদুয়ার: ভাগ বা হিস্যা বুঝে পেলে হাতি নাকি শান্ত হয়ে যায়। জমির পাকা ধান বা কুমড়ো-পটল নষ্ট না করেই সে ফিরে যায় জঙ্গলে। এমনটাই বিশ্বাস পূর্ব সাতালি গ্রামের মানুষজনের। আর তাই ধান হোক বা কুমড়ো, কোনও ফসল ঘরে তোলার আগে হাতির ভাগটা আলাদা করে রেখে দেন এখানকার কৃষকরা।
আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের পূর্ব সাতালি গ্রামের একদিকে আছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল, অন্যদিকে জলদাপাড়া অভয়ারণ্য। এই দুই জঙ্গলের মধ্যবর্তী গ্রামটি এক সময়ে হাতির তাণ্ডবে প্রায় শেষ হতে বসেছিল। জমিতে ফসল চাষ করলেও তা ঘরে তুলতে পারতেন না কৃষকরা। কারণ তার আগেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে হাতি খেয়ে, মাড়িয়ে নষ্ট করে দিত ধান, কুমড়ো, পটল। এরপর থেকেই এখানকার কৃষকরা যাই চাষ করেন ফসল ঘরে তোলার আগে হাতির জন্য নির্দিষ্ট 'ভাগ' রাখার প্রথা চালু করেন।
আরও পড়ুন: QR-কোড না থাকায় ধরছে পুলিশ, প্রতিকার চেয়ে জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ টোটো চালকদের
যে কৃষক ধান চাষ করেন তিনি আধ বিঘা জমির ধান হাতির খাবার হিসেবে রেখে দিয়ে বাকি ধান বাড়ি নিয়ে আসেন। আবার যিনি কুমড়ো চাষ করেন সেই কৃষক ১০-১৫ টা বড় বড় কুমড়ো হাতির খাদ্য হিসেবে রেখে দেন। এই গ্রামের কৃষক বুদ্ধিমায়া ছেত্রির দাবি, হাতির ভাগ আলাদা করে রেখে দিলে সে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ওইটুকু খেয়েই সন্তুষ্ট থাকে। তাঁদের জমির ধান বা কুমড়ো আর নষ্ট করে না। বরং নিজের ভাগ বুঝে নিয়ে চুপচাপ ফিরে যায় জঙ্গলে। পূর্ব সাতালি গ্রামের মানুষ মনে করেন, জঙ্গল লাগোয়া এই গ্রামে উৎপাদিত প্রতিটি ফসলের উপর হাতির বৈধ ভাগ আছে। তাকে তার ভাগ সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিলে সে কারোর ক্ষতি করবে না।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ফসলের ভাগ বুঝে পেয়েই হোক বা অন্য কোনও কারণে কালচিনির এই গ্রামে গত কয়েক বছর ধরে হাতির তাণ্ডবের ঘটনা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরবঙ্গের অন্যান্য এলাকায় যখন হাতির তাণ্ডব ক্রমশই বাড়ছে, জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে, একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে তখন পূর্ব সাতালি গ্রামের এই চিত্র বিস্মিত করে বৈকি!
অনন্যা দে
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Agriculture, Alipurduar news, Elephant, Farmer, Friendship