Kargil War: কার্গিল যুদ্ধে একটি ৫ টাকার কয়েনই ঘুরিয়ে দিয়েছিল ভারত-পাক যুদ্ধের ছবি! প্রাণে বেঁচেছিলেন যোগেন্দ্র! ভাগ্য ঘুরে গিয়েছিল টাইগার হিলের...

১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে চলমান কারগিল যুদ্ধে, মাত্র কয়েকটি পাঁচ টাকার কয়েন পাকিস্তানের অহংকারকে চূর্ণ করে দিয়েছিল এবং টাইগার হিল যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। টোলোলিং ও পয়েন্ট ৫২০৩ পুনর্দখলের পর ভারতীয় সেনার ৮ গ্রেনেডিয়ার, ৮ সিখ এবং ২ নাগা রেজিমেন্টকে টাইগার হিল পুনর্দখলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই অভিযানে ছিলেন গ্রেনেডিয়ার যোগেন্দ্র সিং যাদব। তিনি জানিয়েছিলেন, পুরো রাত পাহাড় বেয়ে ওঠার পর তাঁরা পাথরের আড়ালে সারাদিন লুকিয়ে ছিলেন।

রাত হলে তাঁরা আবার শত্রুর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন। তাদের সঙ্গে ডেল্টা কোম্পানি ছিল। টপে পৌঁছে ক্যাপ্টেন সচিন নিম্বলকর ও তাঁর দল শত্রু অনুসন্ধানে এগিয়ে যায়। কিন্তু ভারতীয় সেনারা জানত না যে পাকিস্তান আর্মি ইতিমধ্যেই ওঁত পেতে ছিল এবং মাত্র কয়েক ফুট দূরে পৌঁছাতেই তারা গুলি চালাতে শুরু করে দেয়।

অবস্থা এমন ছিল যে, ভারতীয় সেনারা তখন সরাসরি গুলিবর্ষণ বা আর্টিলারি সাপোর্ট দিতে পারেনি, কারণ শত্রুরা ছিল অত্যন্ত কাছাকাছি। ক্যাপ্টেনের দলকে বার্তা পাঠানো হয়েছিল যেন তারা পাথরের আড়ালে থাকেন, রাতে তাঁদের উদ্ধার করা হবে। রাত ১১টার দিকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। এক সৈনিকের হাতে গুলি লাগে, বাকিরা নিরাপদ ছিলেন।

এরপর ভারতীয় সেনাদের অর্ডার দেওয়া হয় আক্রমণের। সারারাত চলার পর তাঁরা পৌঁছান এক খাড়া পাহাড়ের নিচে, যেখান দিয়ে উঠেই পাক সেনার অবস্থানে পৌঁছতে হত। পাহাড় বেয়ে ওঠার সময় পাথর পড়ার শব্দে শত্রুরা ভারতীয় আর্মির উপস্থিতি টের পেয়ে গিয়ে দুই দিক থেকে গুলি চালাতে শুরু করে। তবুও যোগেন্দ্র ও আরও ছয়জন সৈনিক পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে সক্ষম হন।

উপরে গিয়ে দেখা যায়, জায়গাটি প্রায় ৫০-৬০ মিটার চওড়া। ভারতীয় সেনারা তখন শত্রুদের দুইটি বাঙ্কারের দিকে গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে। শত্রুরা বুঝতে পারে ভারতীয় সেনারা উপরে পৌঁছে গেছে এবং পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। তখন ভারতীয় সেনারা পাক আর্মির মরদেহ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে সেগুলো দিয়েই লড়াই চালাতে থাকে।

প্রায় পাঁচ ঘণ্টার তীব্র লড়াইয়ের পর ভারতীয় সেনাদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন তাঁরা কৌশল পরিবর্তন করে গুলি চালানো বন্ধ করে দেয়। কিছু সময় পর শত্রুর প্রায় ১০-১২ জন সৈনিক সামনে এগিয়ে আসে, তখন আচমকা ভারতীয় সেনারা গুলি চালিয়ে তাদের প্রায় সবাইকে হত্যা করে এবং আবার তাদের অস্ত্র ব্যবহার করে লড়াই চালাতে থাকে।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ৩০-৩৫ জন পাকিস্তানি সেনা নতুন করে আক্রমণ চালায়। এই সময়ে গুলির তীব্রতা বাড়ে এবং যোগেন্দ্র যখন উপরের দিকে তাকান, দেখেন তাঁর ঠিক ওপরে শত্রু দাঁড়িয়ে। হঠাৎ করে শত্রু তার দিকে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে। এক টুকরো এসে তাঁর হাঁটুর নিচে লাগে এবং তিনি নিচে পড়ে যান। তখন তাঁর মনে হয়েছিল, হয়তো পা কেটে গেছে।

তিনি হাত দিয়ে বুঝতে পারেন যে পা এখনো অক্ষত আছে। কিন্তু এরপর একটি গ্রেনেডের টুকরো তাঁর মুখ কেটে দেয়। তখন তিনি পাশে থাকা এক সহযোদ্ধাকে ফার্স্টেড দেওয়ার জন্য ডাকেন, কিন্তু সেই সৈনিকের কপালে গুলি লাগে। এরপর আরেক সহযোদ্ধারও মাথায় গুলি লাগে। শত্রুরা তাঁদের মৃত ভেবে একে একে গুলি চালিয়ে পরীক্ষা করতে শুরু করে।

তাঁর বাহু, উরু ও পায়ে গুলি লাগে এবং পরে বুকেও গুলি করা হয়। তবে তাঁর পকেটে থাকা পাঁচ টাকার কয়েন গুলিকে থামিয়ে দেয়। সেই সময় মনে হয়েছিল তিনি মারা গেছেন। কিন্তু পরে যখন এক শত্রুর পা তাঁর পায়ের সঙ্গে ধাক্কা খায়, তখন তাঁর মধ্যে এক নতুন শক্তি জন্ম নেয়।

তিনি ধীরে ধীরে হ্যান্ড গ্রেনেড বের করে সেটি শত্রুর দিকে ছুঁড়ে দেন, যেটি শত্রু সেনার জ্যাকেটের হুডে গিয়ে পড়ে এবং বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর সুযোগ বুঝে তিনি রাইফেল তুলে তিন-চারজন শত্রু সেনাকে হত্যা করেন এবং একটি নালার সাহায্যে নিচে নেমে এসে সহযোদ্ধাদের সব ঘটনা জানান।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ভারত এরপর ভয়ঙ্কর আক্রমণ চালায় এবং ৮ জুলাই সকালে টাইগার হিলে তেরঙ্গা উত্তোলন করে। এই বীরত্বের জন্য যোগেন্দ্র সিং যাদব ভারতের সর্বোচ্চ সাহসিকতার পুরস্কার ‘পরমবীর চক্র’ লাভ করেন।