'আপনার পিএনআর নম্বর কী...?' TTE এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন যাত্রীকে, 1AC কামরায় যা ঘটল, ঘাম ছুটল কোচ অ্যাটেনডেন্টের!

ভারতীয় রেলের সর্বদা যাত্রী স্বাচ্ছন্দের দিকে কড়া নজর। প্রত্যেক যাত্রীর জন্য যেমন প্রতিটি কোচে থাকে শৌচালয়ের সুবন্দোবস্ত তেমনই দেশের বেশির ভাগ দূরপাল্লার ট্রেনেই থাকে প্যান্ট্রি। আবার রাতে শোওয়ার জন্য এসি কোচের যাত্রীদের দেওয়া হয় বালিশ, কম্বল থেকে মায় তোয়ালেও।

আবার একইসঙ্গে ট্রেনে যাত্রীদের ও রেলের সম্পত্তি ও জরুরি জিনিস যাতে সুরক্ষিত থাকে তার জন্য উপস্থিত থাকেন আরপিএফ ও জিআরপি-র পুলিশ ও জওয়ানরা। তাঁরা স্টেশন থেকে শুরু করে ট্রেনের কামরায় দফায় দফায় চালান তল্লাশি।

কোনও যাত্রীরই যেন ট্রেনে কোনও রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়, সেদিন কড়া দৃষ্টি থাকে যাত্রীদের। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিদিন এক একটি ট্রেনে যে সংখ্যক মানুষ যাতায়াত করেন, যে অনেক সময়ই অনেক অপরাধমূলক কাজ চোখের আড়ালেই ঘটে যায় রেলকর্তাদের নজরদারির ফাঁক গলে।

সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ব্যস্ত ট্রেনের কামরায় যা দেখে রীতিমতো চোখ কপালে উঠেছে রেলকর্তাদের। কী এমন ঘটেছে যা দেখে টিটিই থেকে শুরু করে রেলকর্তারাও আঁতকে উঠলেন মুহূর্তে? শুনলে চমকে উঠবেন আপনিও! এমন লজ্জার কাজ কেউ করতে পারে তা ভাবতে আপনারও কষ্ট হবে।

পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছুটছিল দুর্বার গতিতে। ঠিক সেই সময় হঠাৎ ট্রেনের একটি এসি ১ কামরায় হঠাৎ শোনা গেল হইচই। আশেপাশের যাত্রীরা কাছে আসতেই ফার্স্ট এসি ওই কোচে আসলে কী ঘটেছে একটু একটু করে খোলসা হল।

দেখা গেল ট্রেনের একজন রেলকর্মীর সঙ্গে তুমুল তরজা চলছে এক পরিবারের। ক্লিনিং বয়ের সঙ্গে জোরদার তর্কাতরই শুরু হয়ে যায় একটি ব্যাগকে ঘিরে। ব্যাগের ভিতর থেকে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে কম্বল, চাদর ইত্যাদি যেগুলি মূলত ট্রেনেই দেওয়া।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মুহূর্তে দাবানলের মতো অত্যন্ত দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে এই ভিডিওটি যেখানে একটি পরিবারের ব্যাগ থেকে বাইরে আসতে দেখা যায় পরের পর কম্বল, বিছানার চাদর ইত্যাদি।

এসি ফার্স্টক্লাস ট্রেনের অন্যতম দামী ও অভিজাত কোচ। আর সেই কোচে কিনা কম্বল চুরি! ছাড়েন না ওই রেল কর্মীও। কোচ অ্যাটেনডেন্ট রীতিমতো ওই পরিবারের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন যখন দেখেন একের পর এক কম্বল বেরোচ্ছে তাঁদেরই একটি ব্যাগ থেকে।

একজন কোচ অ্যাটেনডেন্ট ভিডিওটি তোলে এবং পরে @bapisahoo নামে একজন ব্যবহারকারী ট্যুইটারে সেটি শেয়ার করেছেন আর তারপরেই হটকেকের মতো ছড়াচ্ছে এই ভিডিওটি। ভিডিওটিতে এক রেল কর্মচারী এবং একজন যাত্রীর মধ্যে তুমুল বচসা হতে দেখা যাচ্ছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কোচ অ্যাটেনডেন্ট একটি ব্যাগ থেকে বিছানার চাদর এবং কম্বল বের করে বলছেন, "স্যার, দেখুন, আপনার ব্যাগ থেকে চার সেট বিছানার চাদর এবং তোয়ালে বের হচ্ছে। হয় এগুলো ফেরত দিন, নয়ত ৭৮০ টাকা দিন, জরিমানা হিসেবে।"

ওই যাত্রী ও তাঁর পরিবার অবশ্য দাবি করেন যে এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ছিল। প্যাসেঞ্জার বলেন তাঁর মা আসলে ভুল করে এটি প্যাক করে ফেলেছেন। কিন্তু রেলের ওই স্টাফ তাদের কথা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেন।

বরং পাল্টা ওই পরিবারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, "আপনি যখন ফার্স্ট এসিতে ভ্রমণ করছেন তখন কেন চুরি করছেন? আপনি না বলেছিলেন যে আপনি তীর্থযাত্রায় যাচ্ছেন!"

টিটিই সতর্কবাণী দিয়েছেন:সেই সময় সেখানে হাজির হন টিটিই। ঘটনায় তিনি হস্তক্ষেপ করতেই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। তিনি ওই যাত্রীদের জানান যে রেল আইনের অধীনে বিষয়টি তদন্ত করা হতে পারে।

একইসঙ্গে ওই পরিবারকে তিনি সতর্ক করেন ও বলেন, "আপনার পিএনআর নম্বর কী বলুন? হয় আমাকে টাকা দিন, নইলে পুলিশ আসবে এবং আমি আপনার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করব।"

পরিবারটি অবশ্য তখনও জোর দিয়ে বলতে থাকে যে তাঁরা মাত্র তিনটি বিছানার চাদর পেয়েছেন এবং এটি নেহাতই ভুল করে ঘটেছিল। কিন্তু ওই রেল কর্মী বার বারই বলেন, "আপনার ব্যাগে তো ইতিমধ্যেই তিনটি বিছানার চাদর ছিল, তাহলে এটা কীভাবে ভুল হতে পারে? হয় আমাকে আরেকটি সেট দিয়ে দিন, নয়তো ৭৮০ টাকা দিন।"

এই ঘটনার পর, ভিডিওটি ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ভিডিওটি দেখে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মতামত শেয়ার করতে শুরু করেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রথম এসিতে ভ্রমণ করা খুবই স্পেশাল। কিন্তু সেই কোচে উঠে এভাবে বিছানার চাদর চুরি করা সততা এবং সম্মানের অভাবই নিশ্চিত করে।আমাদের সকলেরই সরকারি সম্পত্তিকে সম্মান করা উচিত।"

আরেক ব্যবহারকারী আবার লিখেছেন, "যদি এঁরা বিছানার চাদর ফেরতও দিয়ে দেয়, তবুও এই ধরনের অপরাধের জন্য অবশ্যই এঁদের জরিমানা করা উচিত।" একজন ব্যবহারকারী আবার লিখেছেন, "এরা বিদেশেও এটি করে থাকেন হয়ত এবং এই ধরণের নিম্নরুচির কাজ দেশের বাইরে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করে।"