নিঃসন্তান বলে একঘরে করেছিল সমাজ, ৮০০০ সন্তানের মা হয়ে পদ্মশ্রী পেলেন থিম্মাক্কা
Last Updated:
advertisement
1/7

♦ বিবাহিত জীবনের ২৫ বছর অতিক্রান্ত ৷ তারপরেও কোল আলো করে আসেনি কোনও ৷ এই অভিযোগে একটা সময় সমাজ বহিষ্কার করেছিল ৷ গর্ভধারণ না করতে পারলে নাকি নারী তাঁর পূর্ণতা পান না ৷ আজও এই ধারণাই প্রচলিত ৷ তবে দমকা বাতাসের মতো সব কিছু ওলটপালট করে দিলেন সালুমারাদা থিম্মাক্কা ৷
advertisement
2/7
♦ কর্নাটকের গুব্বি তালুকের বাসিন্দা বেকাল চিক্কাইয়ার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল থিম্মাক্কার ৷ সন্তান না হওয়ায় স্বামীর সঙ্গে এক অভুতপূর্ব সিদ্ধান্ত নেন থিম্মাক্কা ৷ তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে, গাছ লাগাবেন ৷ সন্তানের মতোই চারাগাছগুলিকে বড় করে তুলবেন ৷ শুরুর দিকে প্রথম বছরে ১০টি, দ্বিতীয় বছরে ১৫টি, তৃতীয় বছরে ২০টি বটগাছের চারা লাগালেন। এক সময় এই সন্তানদের দেখাশোনার জন্য দিনমজুরির কাজও ছেড়ে দেন চিক্কাইয়া। থিম্মাক্কা রোজগার করতেন, আর বাড়ি ফিরে স্বামীর সঙ্গে সন্তানসুলভ গাছদের দেখভাল করতেন।
advertisement
3/7
♦ প্রতিদিন প্রায় চার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তারা এই গাছগুলোতে পানি দেওয়ার কাজ করতেন। গবাদি পশুর হাত থেকে চারাগাছগুলোকে বাঁচাতে কাঁটাতারের বেড়াও বানিয়ে দেন। তাদের গ্রাম হুলিকাল থেকে কুদুর অবধি ২৮৪টি বটগাছের চারা লাগিয়ে বড় করেছেন তিনি। প্রায় চার কিলোমিটার পথজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়াময় সুবিশাল গাছগুলো থিম্মাক্কার ভালোবাসারই নিদর্শন, বলেন পথচারীরাও।
advertisement
4/7
♦ থিম্মাক্কার কোন প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই, নেই কোন বড় ডিগ্রি নেই। গ্রামের আর পাঁচজন দরিদ্র ভারতীয় নারীর মতোই শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবন চালানো এক নারী। ভূমিহীন দিনমজুর এই দম্পতি সমাজেও ছিলেন একঘরে, কারণ তারা বন্ধ্যা। কথা বলার সমস্যা থাকায় চিক্কাইয়াকে তাঁর পড়শিরা বলত তোতলা চিক্কাইয়া। সমাজ বিচ্ছিন্ন লাজুক চিক্কান্না আর থিম্মাক্কার দিনগুলো ছিল বেশ একলা ও বিষণ্ণ কাটতো। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নেন সমাজের বঞ্চনার জবাব দেওয়ার। তখনই মাথায় আসে গাছ লাগানোর বিষয়টি।
advertisement
5/7
♦ ১৯৯১ সালে স্বামী হারিয়েও থেমে যাননি থিম্মাক্কা, একাই লড়ে যান সন্তানদের পরিচর্যা ও বড় করতে। একঘরে, একলা হয়ে যাওয়া থিম্মাক্কার দৃঢ় মনোভাবে টাল খায়নি। যে পরিবার ছিল একঘরে। সেখান থেকেই থিম্মাক্কার কাজের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গ্রামবাসীরা তাকে ‘সালুমারাদা’, বলে ডাকতে শুরু করলেন। কন্নড় ভাষায় যার অর্থ ‘গাছেদের সারি।’ এই বিরাট কাজের পরেও লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যেতেন এই বর্ষীয়ান মহিলা ৷ স্থানীয়দের মাধ্যমেই তাঁর কথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৯৬ সালে ‘জাতীয় নাগরিক সম্মান’ ভূষিত হওয়ার পর তার কথা জানতে পারে গোটা দেশ। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা এগিয়ে আসে তাঁকে সাহায্য করতে।
advertisement
6/7
♦ গত ৮০ বছরে প্রায় ৮০০০ গাছ পুঁতে তাদের বড় করে তুলেছেন ১০৬ বছর বয়সী এই বৃক্ষমাতা। সেই থিম্মাকাই এ বার পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছেন পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নের কারণেই। ভারত সরকারের এই সম্মান পাওয়ার পর রাজ্য সরকারের প্রতি তাঁর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন থিম্মাক্কা ৷ জাতীয়স্তরে স্বীকৃতি পেয়ে তিনি আপ্লুত, এরই পাশাপাশি তিনি জানাতে ভোলেননি যে, রাজ্য সরকার তাঁকে প্রচুর পুরস্কার দিয়েছে, কিন্তু আর্থিকভাবে কোনও সাহায্যই করেনি ৷ বার্ধক্য ভাতা হিসেবে মাসে পাঁচশ টাকা দেওয়া হয় ৷ শুধুমাত্র সেই অর্থই এসেছে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ৷
advertisement
7/7
♦ এর পাশাপাশি থিম্মাকার দত্তক পুত্র উমেশ জানিয়েছেন, কর্নাটক সরকার ঘোষণা করেছিল-থিম্মাক্কাকে ২ কোটি টাকা নগদ এবং থাকার জন্য জমি প্রদান করা হবে ৷ আজ অবধি তা বাস্তবায়িত হয়নি বলেই অভিযোগ ৷ আর সেই কারণে গত বছর থেকে রাজ্য সরকারের দেওয়া পেনশন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন থিম্মাক্কা ৷ বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া আর্থিত সহায়তাতেই দিন গুজরান হয় তাঁর ৷ এই প্রসঙ্গে কর্নাটক সরকারের উপর ক্ষোভ উগরে তিনি বলেন, ‘‘আমি মেমেন্টো খেতে পারব না !’’