৫০০০ লিটার পেট্রোল-ডিজেলে কত 'প্রফিট' করেন পাম্প মালিকরা...? চমকাবেন হিসেবের 'অঙ্কে'!

দেশে অনেক ব্যবসা আছে, কিন্তু এমন একটি ব্যবসা যেখানে মুনাফা ভাল, অথচ তেমন পরিশ্রমের বালাই নেই, সেই ব্যবসার নাম হল - জ্বালানি পাম্প ব্যবসা, যাকে সাধারণত পেট্রোল পাম্প ব্যবসাও বলা হয়।

পেট্রোল পাম্প খোলা সহজ নয়, সবাই এটি খুলতে পারে না। কিন্তু যাঁরা এটি খোলেন, তাঁরা কয়েক বছরের মধ্যেই লালে লাল হয়ে যান। অনেক আয় করা খুব একটা মোটেই কঠিন নয় এই ব্যবসায়। আজ এই প্রতিবেদনে চলুন জেনে নেওয়া যাক সহজ হিসেবে।

আজ এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাকে সম্পূর্ণ সেই হিসাব বলে দেব আর শেয়ার করব কীভাবে পাম্প মালিক প্রতি লিটার পেট্রোল এবং ডিজেলে প্রচুর প্রচুর আয় করেন দিব্যি হেসেখেলে।

প্রকৃতপক্ষে, দেশে প্রতিদিন যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজও, দেশে ৯০ শতাংশেরও বেশি পেট্রোল এবং ডিজেল গাড়ি বিক্রি হয়।

আর তাতেই পেট্রোল পাম্প মালিকদের আয় লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে, পেট্রোল পাম্প ব্যবসা একটি আকর্ষণীয় এবং স্থিতিশীল ব্যবসা হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এটি আয়ের একটি নিয়মিত উৎস এবং প্রতিটি ঋতুতেই এই ব্যবসার আয়ের হিসেবে মোটামুটি একই থাকে।

পেট্রোল পাম্প ব্যবসা: এটা ঠিক যে পেট্রোল পাম্প খোলার জন্য প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আজকের যুগে, এই ব্যবসা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জটিল লাইসেন্সিং পদ্ধতি, মোটা টাকার বিনিয়োগ এবং প্রতিযোগিতা এই খাতে অবশ্য খুবই সাধারণ ব্যাপার।

তবে যদি আপনি এই চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হতে সম্মত হন, তাহলে এই ব্যবসাটি দৈনিক আয়ের একটি ভাল উৎস হয়ে উঠতে পারে অচিরেই।

গ্রামাঞ্চলে, একটি পেট্রোল পাম্প খুলতে সর্বনিম্ন ২০ লক্ষ টাকা লাগে, যেখানে শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ খুব স্বাভাবিক। এর মধ্যে ট্যাঙ্ক, ডিসপেনসার এবং পরিকাঠামোর খরচও কিন্তু অন্তর্ভুক্ত হবে।

জমির দাম শহর ভেদে ভিন্ন হতে পারে, তাই খরচও বাড়তে পারে। বড় শহরগুলিতে, ১ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগও সম্ভব একটি পেট্রোল পাম্প খুলতে গেলে। পেট্রোল পাম্প খোলার জন্য আপনি ব্যাঙ্ক থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন।

এবার আসি আয়ের কথায়। প্রথমেই বলি একজন পাম্প মালিক পেট্রোল ও ডিজেলের উপর ঠিক কীভাবে আয় করেন সেটা বুঝুন। আসলে, সরকার প্রতি লিটার পেট্রোল ও ডিজেলের উপর পাম্প মালিকের জন্য একটি 'কমিশন' নির্ধারণ করেছে।

পেট্রোল পাম্প কেবল সেই পরিমাণই চার্জ করে ক্রেতার কাছ থেকে। এক্ষেত্রে পেট্রোল পাম্প মালিক চাইলেও কিন্তু তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী এক পয়সাও বেশি নিতে পারবেন না।

বর্তমানে দিল্লিতে এক লিটার পেট্রোলের দাম ৯৪.৭৭ টাকা। পেট্রোল পাম্প মালিক এর মধ্যে ৪.৩৯ টাকা পান, অর্থাৎ দিল্লির পাম্প মালিক ১ লিটার পেট্রোলের উপর ৪.৩৯ টাকা পান।

দিল্লিতে পেট্রোলের গড় দাম প্রতি লিটার ৫২.৮৪ টাকা, যার উপর আবগারি শুল্ক ২১.৯০ টাকা, যা কেন্দ্রীয় সরকার আদায় করে। এক লিটার পেট্রোলের উপর ১৫.৪০ টাকা ভ্যাট আদায় করা হয়, যা রাজ্য সরকার আদায় করে। এছাড়াও, ১ লিটার পেট্রোলের দাম নির্ধারণ করা হয় ০.২৬ টাকা অন্যান্য ছোট গড় চার্জের সঙ্গে যোগ করে।

অর্থাৎ, রাজধানী দিল্লিতে, পাম্প মালিক এক লিটার পেট্রোলের জন্য ৪.৩৯ টাকা পান। এটি শহর ভেদে ভিন্ন হতে পারে। কলকাতা, দিল্লি, ব্যাঙ্গালুরুর মতো মেট্রো শহরগুলিতে রেট আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।

পেট্রোল পাম্প মালিককে একইসঙ্গে পাম্পের সমস্ত খরচ বহন করতে হয়। একটি পেট্রোল পাম্পে এক ডজনেরও বেশি কর্মচারী কাজ করেন, তাঁদের বেতন এবং পেট্রোল পাম্পের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশাল ব্যয় হয় নিঃসন্দেহে। তবুও, এটি কিন্তু একটি একটি দুর্দান্ত লাভজনক ব্যবসা।

ধরুন, যদি একটি পেট্রোল পাম্প দিনে ৫০০০ লিটার পেট্রোল বিক্রি করে, তাহলে নিয়ম অনুসারে, কমিশন হিসেবে ২১,৯৫০ টাকা পাবে। খরচের ৫০ শতাংশ বাদ দেওয়ার পরেও, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০,০০০ টাকা আয় করা সম্ভব এক্ষেত্রে।

দিল্লিতে একজন পাম্প মালিক এক লিটার ডিজেলে কত আয় করেন? : ডিজেলের কথা বলতে গেলে, দিল্লিতে ১ লিটারে প্রতি লিটারে ১২.৮৩ টাকা ভ্যাট নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে আবগারি শুল্ক হিসেবে ১৭.৮০ টাকা প্রতি লিটারে আদায় করছে। ডিলারদের গড় কমিশন প্রতি লিটারে ৩.০২ টাকা, অর্থাৎ প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রির জন্য ৩.০২ টাকা পাম্প মালিকের অ্যাকাউন্টে যায়, যা কম নয়।

দিল্লিতে ডিজেলের মূল মূল্য প্রতি লিটারে ৫৩.৭৬ টাকা। এর বাইরেও ০.২৬ টাকার আরও কিছু ছোটখাটো চার্জ নেওয়া হয়। এর পরে, ১ লিটার ডিজেলের দাম নির্ধারিত হয়। ১৮ জুলাই, ২০২৫ তারিখে, দিল্লিতে ১ লিটার ডিজেলের দাম ছিল ৮৭.৬৭ টাকা প্রতি লিটার।

বড় যানবাহনে, বিশেষ করে বাণিজ্যিক যানবাহনে ডিজেলের ব্যবহার বেশি এবং এক্ষেত্রে পাম্প মালিকরা প্রতি লিটারে ৩.০২ টাকা আয় করেন। একটি অনুমান অনুসারে, যদি একটি পাম্প ২৪ ঘন্টায় ৫০০০ লিটার ডিজেল বিক্রি করে, তাহলে তিনি কমিশন হিসেবে প্রায় ১৫,১০০ টাকা পাবেন। এর থেকে অর্ধেক খরচ হিসেবে বাদ দিলে ৭৫০০ টাকা সাশ্রয় করা যাবে।

অর্থাৎ, যদি পেট্রোল এবং ডিজেল উভয়ের বিক্রয় পরিসংখ্যান একত্রিত করা হয়, তাহলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একজন পেট্রোল পাম্প মালিক সহজেই প্রতিদিন ১৫০০০ টাকা আয় করতে পারবেন। কমিশন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ। তাই পুরো আয় বিক্রয়ের পরিমাণ এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে।