ভারতের প্রতি ট্রাম্পের বিদ্বেষ ৬৩ বছরের পুরনো ! এস জয়শঙ্কর বলছেন যে MIG-21-এর সঙ্গে এর বিশেষ যোগসূত্র রয়েছে
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
US Six Decade Old Animosity: সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন যে ১৯৬৫ সালের পর আমেরিকা ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করা বন্ধ করে দিয়েছে।
advertisement
1/6

Story:-Anoop Kumar Mishra: আমেরিকা যে ভারতের পাশে নেই, অন্তত এখনও পর্যন্ত, তা এবার বেশ স্পষ্টভাবেই বোঝা গিয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসী হানা, প্রতিশোধে ভারতের অপারেশন সিঁদুর পরিচালনা এবং টানা কয়েক দিনের সংঘর্ষের পর পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির আবেদন স্বীকার- এই পুরো ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার পটভূমিতে একটা বিষয় উঠে আসছিল বারে বারে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে তাঁর মধ্যস্থতার জন্যই ভারত আর পাকিস্তানের সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে। নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিও তুলেছিলেন তিনি। যদিও ভারত সেই সব বক্তব্য স্বীকার করেনি। বরং নরেন্দ্র মোদি সরকার প্রকাশ্যেই জানিয়েছিল যে এই দেশ কারও কাছে নতি স্বীকার করবে না। তার কিছু দিনের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক নীতি যেন এক নতুন অহং-এর লড়াইয়ের জন্ম দিল।
advertisement
2/6
কেউই ভাবতে পারেননি যে এমনটা ঘটবে, কিন্তু ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরে এখন ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক আবারও তিক্ততার দিকে মোড় নিল। ভারতের প্রতি আমেরিকার এই মনোভাব নতুন নয়, বরং তাদের শত্রুতা প্রায় ছয় দশকের পুরনো। অনেকেই জানেন না যে এই শত্রুতার কারণ হল ১৯৬৩ সালে ভারতের তরফ থেকে হানা এক আঘাত, যার বেদনা এখনও আমেরিকার হৃদয়ে রয়ে গিয়েছে। ভারতের এই আঘাতের কারণে আমেরিকা কেবল বিশাল ক্ষতিরই সম্মুখীন হয়নি, বরং তার বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিশ্বদরবারে। সাম্প্রতিক এক আলোচনায় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নিজেই এই সম্পর্কে একটি বড় তথ্য প্রকাশ করেছেন।
advertisement
3/6
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন যে ১৯৬৫ সালের পর আমেরিকা ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করা বন্ধ করে দিয়েছে। ১৯৬৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম ছাড়া আমেরিকা ভারতের সঙ্গে একটিও প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেনি। আমেরিকাই এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল যার কারণে ভারতকে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পরে রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন যে আমেরিকাই ভারতকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ না করার নীতি তৈরি করেছিল। আমেরিকা ২০০৫-০৬ সালে এই নীতি পরিবর্তন করে। এই সময়ে ভারত কেবল রাশিয়ার সঙ্গেই নয়, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির সঙ্গেও প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে।
advertisement
4/6
১৯৬৫ সালে কী ঘটেছিল যা আমেরিকাকে বিরক্ত করে তুলেছিল? আসলে, এই বিষয়টি সরাসরি ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে MIG-21 চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের পর ভারত আকাশে তার শক্তি আরও মজবুত করতে চেয়েছিল। এদিকে, আমেরিকা পাকিস্তানকে বিনামূল্যে F-104 স্টারফাইটার দিয়েছিল। এর পরে, ভারতও আমেরিকার কাছ থেকে F-104 কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু, আমেরিকা শুরু থেকেই এই চুক্তিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। অবশেষে ভারত বুঝতে পেরেছিল যে আমেরিকা তার সঙ্গে কোনও প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায় না। অতএব, তারা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আজকের রাশিয়ার দিকে পদক্ষেপ নেয়। রাশিয়া কেবল ভারতকে MIG-21 সুপারসনিক যুদ্ধবিমানই দেয়নি, বরং প্রযুক্তিও হস্তান্তর করেছিল।
advertisement
5/6
নিজের ভুল বুঝতে পেরে তখন আমেরিকা একটি পদক্ষেপ নেয়। যখন আমেরিকান রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউসকে এই বিষয়ে তাদের ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, তখন আমেরিকা ভারতকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা শুরু করে। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ৯টি C-130 পরিবহণ বিমান ভারতের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ভারত আমেরিকার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেয়। এই বিষয়টি এখানেই শেষ হয়নি। ভারতীয় বিমানবাহিনীতে MiG-21 অন্তর্ভুক্তির কয়েক মাস পরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তান আমেরিকার F-104 ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। এই যুদ্ধে ভারতের MiG-21 প্রতিটি লড়াইয়ে আমেরিকার F-104 কে পরাজিত করে। মিগ-২১-এর হাতে পরাজয় আমেরিকা সহ্য করতে পারেনি ৷
advertisement
6/6
১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে মিগ-২১ বাকি কাজটি সম্পন্ন করে। এই যুদ্ধে ভারতের মিগ-২১ চারটি পাকিস্তানি এফ-১০৪ বিমান ভূপাতিত করে। এই পরাজয়ের পর পাকিস্তান মার্কিন এফ-১০৪-কে তার নৌবহরে আর রাখেনি। ইতিমধ্যেই এই মার্কিন এফ-১০৪ 'দ্য উইডো মেকার' নামে বিশ্বে কুখ্যাত হয়ে ওঠে। এর পরে আমেরিকা ভারতের সঙ্গে কোনও প্রতিরক্ষা চুক্তি না করারই প্রতিজ্ঞা করেছিল। সেই কারণেই ১৯৬৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে আমেরিকা ভারতের সঙ্গে একটিও প্রতিরক্ষা চুক্তি করেনি।