Spinach (Palang Shak) Effect: এক্ষুনি খাওয়া বন্ধ করুন 'এঁরা'...! পালং শাকই হবে 'বিষের' সমান! আপনি নেই তো তালিকায়?

শীত মানেই শাক খাওয়ার আদর্শ সময়। শীতের শুরুতেই বাজার থেকে এনে অনেকেই জমিয়ে খাচ্ছেন পালং, কলমি, বেথো শাক! কিন্তু কোন শাক কাদের খাওয়া উচিত আর কাদের খাওয়া উচিত নয় তা সম্পর্কে জানেন তো আপনি? পালং শাক দিয়ে ভাত মেখে খাচ্ছেন কিন্তু জানেন কী এটি বেশি খেলে শরীরে কেমন প্রভাব পড়ে?

পালংশাক আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী, কিন্তু আপনি যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া চালিয়ে যান তাহলে কিন্তু আপনাকে শরীরে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে।

পালং শাক শীতকালেই বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়। অনেকের বাড়িতেই এই সময়ে এই শাক রান্না করা হয়। সুস্বাদু এই শাক খেতে অনেকেই ভালোবাসেন। কিন্তু এই শাক খেলে শরীরে কেমন প্রভাব পড়ে, সেটি জানা আছে কি? জেনে নিয়ে তবেই খান এই শাক।

যে কোনও সবজিতে রয়েছে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য প্রচুর পুষ্টি উপাদান। বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখকে দূরে রাখতে খাবারের তালিকায় বিভিন্ন শাক এবং সবজি রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু পালং শাক শরীরে কেমন প্রভাব ফেলে? না জানা থাকলে, এবার জেনে নেওয়া যাক, এই শাকে কী কী উপাদান আছে। আর তার প্রভাব কেমন ভাবে পড়ে শরীরের উপর। রইল সেই তালিকা।

পালং শাকের পুষ্টিগুণ: প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রোটিনের পরিমাণ ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২.৮ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস ২০.৩ মি. গ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ০.৫ মি. গ্রাম, অক্সালিক এসিড ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা। এতে আঁশের পরিমাণ ০.৭ গ্রাম। এতে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে। এতে ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আইইউ, রিবোফ্লোবিন ০.০৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা, ও থায়ামিন ০.০৩ মি. গ্রাম।

এই উপাদানগুলি শরীরে যেমন অনেক সুফল এনে দেয়, তেমনই আরও কিছু প্রভাব ফেলে এই শাক? চলুন সেগুলি জেনে নেওয়া যাক।

কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, অতিরিক্ত পরিমাণে পালং শাক খেলে শরীরে পাথর হতে পারে। কারণ এতে অক্সালেট থাকে। আসুন আমরা আপনাকে বলি যে এর ফলে কিডনিতে পাথরের সমস্যাও হতে পারে।

অতিরিক্ত পালং শাক খেলে শরীরে আরও বেশি টক্সিন তৈরি হয়। পালং শাকে থাকে অক্সালিক অ্যাসিড। এই উপাদানটি অতিরিক্ত পরিমাণে সঞ্চিত হলে, শরীরের প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ শোষণের মাত্রা কমে যায়। ফলে শরীরে খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা যেতে পারে।

অতিরিক্ত পালং শাক খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। পালং শাকের ফাইবারের পরিমাণ অনেকটা। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গ্যাস অম্বলের সমস্যা, কিংবা পেটের গোলযোগ দেখা দিতে পারে। যাঁদের আগের থেকে কোলাইটিসের মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁদের অনেককেই শাক খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকরা।

পালং শাকের নাইট্রেট রক্তের ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে। আপনার যদি আগে থেকেই আর্থারাইটিস বা জয়েন্টের ব্যথার সমস্যা থাকে তবে এই শাকটি খাওয়া এড়িয়ে যান।

সবুজ শাক-সবজিতে হিস্টামিন থাকে এবং পালং শাক বেশি খেলে শরীরে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই এই ধরণের শাক বেশি খাওয়া ত্বকের জন্যও ভাল নয়। যাদের অ্যালার্জির ধাত, তাদের এই শাক বেশি না খাওয়াই ভাল।

প্রচুর পরিমানে ভিটামিন কে থাকে এই পালং শাকে। আপনি যদি রক্ত পাতলা করে এমন আন্টি জমাট প্রতিরোধী ওষুধ খান, তবে পালং শাকের অতিরিক্ত সেবন কিন্তু রক্ত জমাট বাধার মতো সমস্যা বাড়াতে পারে।

তবে এগুলি ছাড়াও সাধারণ ভাবে উপযুক্ত পরিমানে পালং শাক খেলে যে উপকারগুলি হয় জেনে নেওয়া যাক সেগুলিও।

রক্তচাপ কমায়: পালং শাকে রয়েছে থাকা উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম। এর ফলে নিয়মিত পালং শাক খেলে তা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। যাঁরা রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন, এই শাক তাঁদের জন্য খুবই কাজের হতে পারে।

ওজন কমাতে: যদি কম ক্যালরি যুক্ত খাবার বাছাই করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি পালং শাককে বেছে নিতে পারেন। কারণ প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে ক্যালোরি রয়েছে মাত্র ৭ কিলোক্যালরি যা আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ভালোভাবে জীবনযাপন করাটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে ভয় পান। যেহেতু পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নির্ভয়ে খেতে পারেন শাকটি।

চোখ ভালো রাখতে পারে: বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাক সবজিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা আমাদের দৃষ্টি শক্তির ক্ষতি হতে বাধা দেয়। পালং শাকে উচ্চ মাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকায় তা আমদের চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

ক্লান্তিভাব দূর করে: পালং শাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রার আয়রন যা দেহে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য খুবই জরুরী। এছাড়া এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ভিটামিন সি ও ই কে তরান্বিত করে আমদের পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। এতে আমাদের শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। এছাড়া এই সবজি আমাদের রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে: পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিনেজা সুস্থ কার্ডিয়োভাসকুলার সিস্টেমের জন্য খুবই জরুরি। তাই হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে সহজলভ্য সবজিটি আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিতভাবে রাখা দরকার।