'সাদা', 'কালো', 'সৈন্ধব' না গোলাপি...? তিন 'নুনের' মধ্যে পার্থক্য কী জানেন? স্বাস্থ্যের জন্য কোন লবণ সেরা? জানুন বিশেষজ্ঞের মত!

আমাদের রান্নাঘরে লবণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। যে কোনও পদের স্বাদ সম্পূর্ণ হয় না এই নুন ছাড়া। লবণের পরিমান সঠিক না কিছুতেই স্বাদ খোলে না রান্নার। আর এই লবণ কেবল খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, বরং এটি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু খনিজ পদার্থও সরবরাহ করে।

বেশিরভাগ বাড়িতে আমরা সাধারণ সাদা লবণ ব্যবহার করি, কিন্তু উপোসের সময় আমরা 'শিলা লবণ' বা রক সল্ট অর্থাৎ সৈন্ধব লবণ ব্যবহার করি। এছাড়াও, কিছু বাড়িতে 'কালো লবণ' বা বিটনুন ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও, সম্প্রতি 'শিলা লবণ' বা 'হিমালয় গোলাপি লবণ' বেশ ভাল মতো আলোচনায় উঠে এসেছে। কিন্তু অনেকেই এই নিয়ে বিভ্রান্ত থাকেন যে এই সব লবণ একই নাকি ভিন্ন। কোনটিতে আদৌ কী লাভ? কার উপকার কোন লবণে বেশি বা কোন নুন কার খাওয়া বারণ।

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে এই বিভিন্ন ধরণের লবণের মধ্যে সঠিক পার্থক্য কী? আর কোনটিই বা আপনার জন্য সেরা।

বেশিরভাগ ভারতীয় বাড়িতেই নুন থাকা মাস্ট। এই উপাদান ছাড়া খাবারের যে কোনও পদ অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়। আমরা স্বাদ অনুসারে বিভিন্ন ধরণের লবণ ব্যবহার করি।

সাধারণত সাদা লবণ, কালো লবণ, শিলা লবণ এবং গোলাপি লবণ, প্রতিটি লবণেরই আলাদা আলাদা গুণ রয়েছে।

বিভিন্ন লবণে বিভিন্ন খনিজ থাকে। প্রতিটি ধরণের লবণে নির্দিষ্ট ধরণের পুষ্টি বা খনিজ বৈশিষ্ট্য থাকে। আবার একইসঙ্গে এগুলির স্বাদ এবং শরীরের উপর প্রভাবও ভিন্ন ভিন্ন হয়।

কালো লবণ বা ব্ল্যাক সল্ট:কালো লবণে সালফেট, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপাদান থাকে। অতএব, এর স্বাদ কিছুটা টক এবং ঝাঁঝালো হয়। এটি হজমের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়।

শিলা লবণ বা সৈন্ধব নুন:অনেকেই জানেন না, কিন্তু শিলা লবণ শিলা লবণই। উপবাসের সময় ব্যবহৃত এই লবণ প্রাকৃতিকভাবে খনি থেকে পাওয়া যায়। এটি সোডিয়াম ক্লোরাইড সমৃদ্ধ এবং অন্যান্য ট্রেস খনিজ পদার্থও ধারণ করে। ভারতে এটি মূলত পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আমদানি করা হয়।

গোলাপি লবণ:গোলাপি লবণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম থাকে। অতএব, এর স্বাদ একটু মৃদু এবং সামান্য মিষ্টি প্রকৃতির হয়।

স্বাদ এবং ব্যবহার:গোলাপি লবণ: হালকা এবং সামান্য মিষ্টি স্বাদের এই নুন আজকাল কিছু লোক মূলত ডায়েটিংয়ের জন্য ব্যবহার করেন।

শিলা লবণ: এই নুনের স্বাদ সাধারণ লবণের মতোই। উপবাসের সময় ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে ভাল এই লবণ।

কালো লবণ: সামান্য টক স্বাদের হয় বিটনুন বা কালো নুন বা ব্ল্যাক সল্ট। এই লবণ হজমের জন্য উপকারী।

বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিটি ধরণের লবণের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। অতএব, এটি কেবল স্বাদ অনুসারে নয়, শরীরের চাহিদা অনুসারেও ব্যবহার করা উপযুক্ত।

বিশেষজ্ঞ স্বাতী বাথওয়াল তাঁর পরামর্শে বলেন, গোলাপি লবণ সাধারণ টেবিল সল্ট-এর চেয়ে স্বাস্থ্যকর কারণ এটি কম পরিশোধিত এবং এতে বেশি পুষ্টি থাকে। গোলাপি লবণ খেলে আপনি জিঙ্ক, আয়রন, ক্যালসিয়াম এমনকি আয়োডিনও পাবেন।

যদি আমরা কেবল স্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তাহলে গোলাপি লবণ বেশি পুষ্টিকর এবং ভাল। তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে পার্থক্যটি সামান্য। সব ধরণের লবণেই ওজন অনুসারে একই পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। এর অর্থ হল যদি আপনার লবণ গ্রহণের পরিমাণ বেশি হয় তবে আপনি কোন ধরণের লবণ গ্রহণ করেন তা বিবেচ্য নয় এবং সেক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি অনিবার্য।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পরিমিত পরিমাণে লবণ খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং আপনার রান্না করা খাবারের উপরে এটি ছিটিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, একজন ব্যক্তির দৈনিক লবণ গ্রহণ ৫ গ্রামের কম হওয়া উচিত, যা এক চা চামচের সমান।