ফ্যাটি লিভার ঘরে ঘরে! যকৃত 'পরিষ্কার' রাখার জন্য ঘরোয়া সহজ রেসিপি শিখুন! খেলেই প্রাকৃতিক ডিটক্স  

শরীরের ভেতর বিষাক্ত উপাদান ছেঁকে ফেলা, রক্ত পরিষ্কার রাখা, ক্ষতিকর রাসায়নিক ভেঙে ফেলা—যকৃত এই সব কাজ সামলায় নিরলসভাবে। হজমের ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যকৃত থেকে তৈরি হওয়া পিত্ত চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে।

কিন্তু অনিয়মিত জীবনযাপন, খাবারের ভুল অভ্যাস, মানসিক চাপ—এসবই যকৃতের উপর বাড়তি চাপ ফেলে। আয়ুর্বেদ মতে, যকৃতই পিত্ত দোষের আধার। তাই পিত্তের ভারসাম্য নষ্ট হলে দেখা দেয় ত্বকের প্রদাহ, ব্রণ, সোরাইসিস, কোল্ড সোর, হজমের সমস্যা ও শরীরে টক্সিন জমে যাওয়ার ফলে নানা অসুবিধা। দীর্ঘদিন ভারসাম্যহীন থাকলে তৈরি হতে পারে হেপাটাইটিস, জন্ডিস, সিরোসিস, এমনকি ক্যানসারের মতো বড় রোগও।

তাই স্বাভাবিক উপায়ে যকৃতকে নিয়মিত ডিটক্স করা জরুরি। ড. হংসা যোগেন্দ্র তাঁর ভিডিওতে এই ডিটক্সের দুইটি সহজ রেসিপি শেয়ার করেছেন।

১. লিভার ডিটক্স টি উপকরণ: জল ১ কাপ আদা ½ চা চামচ মেথি দানা ½ চা চামচ কাঁচা হলুদ ½ চা চামচ লেবুর রস ১ চা চামচ পুদিনা পাতা ২–৩টি প্রণালী: একটি সসপ্যানে জল ফুটিয়ে আদা, মেথি ও কাঁচা হলুদ দিন। এরপর লেবুর রস ও পুদিনা পাতা যোগ করুন এবং কিছুক্ষণ ফুটতে দিন। ছেঁকে নিন। সকালে খালি পেটে বা সন্ধ্যায় পান করুন। কীভাবে কাজ করে? আদা–তে থাকা জিঞ্জারল প্রদাহ কমায় ও সেলুলার ড্যামেজ থেকে যকৃতকে রক্ষা করে। মেথি দানা–তে আছে পলিফেনল, যা যকৃত সুরক্ষা দেয়। হলুদ শরীরের টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। লেবু ও পুদিনা হজম ও ডিটক্সে সহায়ক। আদা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো, হার্ট ও যকৃতকে সাপোর্ট করার মতো অতিরিক্ত সুবিধাও দেয়।

গবেষণা কী বলছে? একটি স্টাডি (“Ginger supplementation for NAFLD”) জানায়— প্রতিদিন ১৫০০ mg আদার গুঁড়ো ১২ সপ্তাহ খেলে LDL কমে মোট কোলেস্টেরল কমে প্রদাহের মার্কার কমে ফ্যাটি লিভারের উন্নতি হয় ২. বিটরুট-শসা ডিটক্স স্যালাড উপকরণ: কোরানো বিটরুট ১ কাপ শসা ১ কাপ ডালিম দানা ১ কাপ পার্সলে ½ কাপ পুদিনা পাতা ১ চা চামচ কুমড়োর বীজ ১ টেবিলচামচ আদার রস ১ টেবিলচামচ লেবুর রস ১ টেবিলচামচ প্রণালী: সব উপকরণ একটি বাটিতে নিন। ভালভাবে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

কীভাবে কাজ করে? বিটরুট–এ থাকা বিটেইন যকৃতের ক্ষতির ঝুঁকি কমায় এবং গ্লুটাথায়ন উৎপাদন বাড়িয়ে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। শসা শরীর ঠান্ডা রাখে ও যকৃতকে ডিটক্সে সাহায্য করে। ডালিম প্রাকৃতিক ডিউরেটিক—যকৃত ও কিডনি পরিষ্কার রাখে। পুদিনা–পার্সলে পিত্ত নিঃসরণ বাড়িয়ে হজম ও লিভারের কাজকে সহজ করে। কুমড়োর বীজ স্যালাডে পুষ্টিগুণ বাড়ায়। এটি প্রতিদিন বা এক দিন অন্তর ১৫ দিন খেতে পারেন—কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

স্টাডি কী বলছে? “Comparing effects of beetroot juice…” শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে— প্রতিদিন ২৫০ mL বিটরুট জুস ১২ সপ্তাহ খেলেই লিভার এনজাইম ALT ও ALP কমে ফ্যাটি লিভারের উন্নতি হয় কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড কমে

আর কী খাবেন — তা নিয়ে পরিষ্কার নির্দেশ দিচ্ছে আয়ুর্বেদ। টাটকা রান্না ও অর্গানিক খাবার শরীরে পিত্তের সাম্য বজায় রাখে এবং যকৃতকে সুস্থ রাখে। নাশপাতি, তরমুজ ও অন্যান্য মিষ্টি রসালো ফল পিত্ত কমাতে সাহায্য করে। সিদ্ধ শাকসবজি, দুধজাত খাবার এবং সদ্য রান্না করা খাবার যকৃতের উপর চাপ কমায়। সারাদিন পর্যাপ্ত জল পান করলে দেহের বিষাক্ত পদার্থ সহজে বেরিয়ে যায়।

কী এড়িয়ে চলবেন — সংরক্ষক মেশানো খাবার যকৃতের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে, তাই এগুলো বাদ দেওয়া জরুরি। অত্যধিক প্রোটিন, টক বা ফারমেন্টেড খাবার পিত্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। অ্যালকোহল যকৃতের ক্ষতি দ্রুত বাড়ায়। অকারণে ওষুধ খাওয়ার অভ্যাসও দীর্ঘমেয়াদে লিভারের বড় ক্ষতি করে।

লাইফস্টাইলের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা দরকার — ধূমপান, অ্যালকোহল এবং রাত জাগা সরাসরি যকৃতকে দুর্বল করে দেয়। নিয়মিত রাত ১০টার মধ্যে ঘুমোতে গেলে শরীর স্বাভাবিক ডিটক্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে এবং যকৃত সুস্থ থাকে।