১৫ খাবার...! কুরে কুরে শরীরে বাড়ায় 'ক্যানসারের' ঝুঁকি, রোজ রোজ খাচ্ছেন নাকি? চমকে দেবে 'গবেষণা'

ক্যানসার! মারণ এই রোগ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বে। আর এক্ষেত্রে বর্তমান লাইফস্টাইল ও জীবন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাবই একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বারবারই এই নিয়ে সতর্ক করছেন, দিচ্ছেন পরামর্শ, কী ভাবে দূরে রাখা যায় ক্যানসারের বিষ?

আজকাল ক্রমশ বাড়ছে জাঙ্ক ফুড খাওয়া, যা ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। যতই সুস্বাদু হোক না কেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি আপনার স্বাস্থ্যের উপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেই বলছেন গবেষকরা।

সাম্প্রতিক গবেষণা এবং সাক্ষাৎকারে, হার্ভার্ড-অনুমোদিত বেশ কয়েকজন চিকিৎসক এবং পুষ্টি গবেষক আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এমন কিছু সাধারণ খাবারের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে ভয়ঙ্কর ভাবে। সুখবর হল এইসব খাবারের কিন্তু বেশ কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প আছে এবং এই ডায়েট পরিবর্তন করলে আপনার ক্যানসার-সহ দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে।

কিন্তু জাঙ্ক ফুড ছাড়াও আরও কিছু জিনিস আছে যা জাঙ্ক ফুডের মতোই খারাপ ও ক্ষতিকর এবং ধীরে ধীরে ক্যানসারের কারণ হতে পারে আপনার জন্যে। আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল, আপনি জানতেও পারবেন না কখন এটি আপনার শরীরে ভরে দিচ্ছে ক্যানসারের বিষ। এখানে এমনই ১৫টি খাবারের তালিকা দেওয়া হল যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় এবং তাঁর কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্পও দেওয়া হল।

১. কোল্ড ড্রিঙ্ক বা ঠান্ডা পানীয়:কোল্ড ড্রিঙ্কস চিনিতে ভরপুর - এটি ক্যানসারের একটি প্রধান কারণ, এবং চিনি না থাকলেও, এটি আপনার জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর হতে পারে কারণ এতে কৃত্রিম ক্যারামেল রঙ দেওয়া থাকে। এই কৃত্রিম রঙটিকে ক্যারামেল IV বলা হয় এবং এটি 4-MEI নামক একটি রাসায়নিক যা অ্যামোনিয়া-ভিত্তিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত হয়।

অন্যান্য বিকল্প - জল সর্বদা পান করার জন্য সর্বোত্তম বিকল্প, তবে যদি আপনি কোল্ড ড্রিঙ্কের মিষ্টি ছাড়া বাঁচতে না পারেন, তাহলে এমন একটি প্যাক কিনুন যাতে 4 MEI নেই।

২. গ্রিলড রেড মিট:ভাজা মাংস সুস্বাদু হতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে যখন এটি উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হয়, তখন এটি ক্যানসার সৃষ্টিকারী হাইড্রোকার্বন তৈরি করে যা এর রাসায়নিক এবং আণবিক গঠন পরিবর্তন করে দেয়।অন্যান্য বিকল্প - লাল মাংস বা রেড মিট কম খান এবং সাবধানে রান্না করুন, অথবা চিকেনের মতো সাদা মাংস খান।

৩. মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন:এই ডিএসিটালই আপনার মাইক্রোওয়েভ পপকর্নকে সুস্বাদু করে তোলে, কিন্তু গরম করলে তা বিষাক্ত হয়ে ওঠে। তাছাড়া এর ব্যাগের আস্তরণটি কার্সিনোজেনিক। তাছাড়া, পপকর্ন কোম্পানিগুলিকে তাদের কার্নেলগুলি GMO কিনা তা প্রকাশ করতে হয় না, অর্থাৎ এগুলি GMO।অন্যান্য বিকল্প - জৈব কার্নেল কিনুন এবং ওভেনে অলিভ অয়েল দিয়ে বা এয়ার পপারে রান্না করুন।

৪. টিনজাত খাবার, বিশেষ করে টিনজাত টম্যাটো:ক্যানের মধ্যে যে ধরণের টম্যাটো পাওয়া যায় তা বিপজ্জনক কারণ ক্যানের উপর রাসায়নিক BPA স্প্রে করা হয়, এটি হরমোন পরিবর্তন করে এবং ইঁদুরের মস্তিষ্কের কোষগুলিকে পরিবর্তন করে। টিনজাত টম্যাটো আরও খারাপ কারণ এর মধ্যে থাকা অ্যাসিড BPA খাবারে শোষণ করে যা এটিকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে।অন্যান্য বিকল্প - টাটকা বা ফ্রোজেন টম্যাটো কিনুন, যেটি আপনার জন্য উপযুক্ত।

৫. উদ্ভিজ্জ তেল:এগুলো রাসায়নিকভাবে উদ্ভিজ্জ তেলের উৎস থেকে আহরণ করা হয়। এগুলোতে বিপজ্জনক পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাট থাকে, যা কোষের ঝিল্লির গঠন পরিবর্তন করে এবং ক্যানসারের কারণ হতে পারে।অন্যান্য বিকল্প - ক্যানোলা বা জলপাই তেলের মতো প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত তেল ট্রাই করুন।

৬. চাষকৃত মাছ, বিশেষত স্যামন ফিশ :যদিও বন্য স্যামনে প্রচুর পরিমাণে কার্যকরী প্রোটিন থাকে, তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খাওয়া স্যামনের ৬০% এরও বেশি আসে এমন খামার থেকে যেখানে কীটনাশক এবং অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়, যা তাদের শরীরে জমা হয় এবং আমরা যখন এটি খাই তখন তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে যায়।অন্যান্য বিকল্প : বন্য-ধরা বা পরিশোধিত মাছের তেলের সম্পূরক খান।

৭. কৃত্রিম মিষ্টি বা সুইটনার:বেশিরভাগ কৃত্রিম মিষ্টি রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়, এবং সেগুলি নিরাপদ কিনা তা বলা যায় না। কিছু গবেষক বলেছেন যে কৃত্রিম মিষ্টি DKP (ডাইকেটোপাইপেরাজিন) নামক একটি বিষাক্ত পদার্থ নির্গত করে যা শরীরে জমা হতে পারে এবং মস্তিষ্কের টিউমারের কারণ হতে পারে।অন্যান্য বিকল্প- যদি আপনি কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করেন তবে স্টেভিয়া ব্যবহার করুন কারণ এটি প্রাকৃতিক। কিছু রেসিপিতে আপনি এর পরিবর্তে আপেল সসও যোগ করতে পারেন।

৮. পরিশোধিত ময়দা:পরিশোধিত ময়দার কোনও পুষ্টি থাকে না কারণ এটিকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আরও খারাপ বিষয় হল, এটিকে সাদা করার জন্য ক্লোরিন গ্যাস দিয়ে ব্লিচ করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেটও থাকে, যা সহজেই আপনার শরীরে চিনিতে রূপান্তরিত হয় - ক্যান্সারের প্রিয় খাবার।অন্যান্য বিকল্প - ব্লিচ ব্যবহার করে না এমন উপাদানগুলি বাছাই করুন এবং লেবেলটি পড়ুন যাতে বোঝা যায় কতটা ব্লিচ করা হয়েছে।

৯. ফরমালিন দেওয়া ফল:ফল এবং শাকসবজি এমনিতে ভাল ও উপকারী, কিন্তু কীটনাশক স্প্রে করলে তা কখনই ভাল নয় শরীরের জন্য বরং বিপদের। আল্ট্রাজান, একটি কীটনাশক যা ইউরোপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কারণ এটি মানুষের জন্য সমস্যা তৈরি করে, কিন্তু এটি এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হয়।অন্যান্য বিকল্প - সর্বদা জৈব বা অরগ্যানিক ফল কিনুন, এবং খাওয়ার আগে ভাল করে ধুয়ে নিন।

১০. প্রক্রিয়াজাত মাংস বা প্রসেসড মিট:এর মধ্যে রয়েছে বেকন, হট ডগ, সসেজ এবং ডেলি মিট। প্রক্রিয়াকরণের সময়, প্রচুর পরিমাণে লবণ এবং ক্ষতিকারক রাসায়নিক, বিশেষ করে নাইট্রাইট এবং নাইট্রেট, খাবার দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য যোগ করা হয়। এই সংযোজনগুলি খাবারকে আরও সুস্বাদু করার জন্য যোগ করা হয় কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি-স্বরূপ।অন্যান্য বিকল্প - অরগ্যানিক মাংস খান এবং এমন পণ্যগুলি সন্ধান করুন যাতে ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণকারী থাকে এবং সেগুলি সাবধানে ধুয়ে রান্না করতে ভুলবেন না।

১১. আলুর চিপস বা পট্যাটো চিপস:আলুর চিপস বিভিন্ন কারণে ক্ষতিকর। প্রথমত, এগুলি ট্রান্স ফ্যাটে ভাজা হয় এবং দ্বিতীয়ত, এতে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে যা কেবল ক্যানসারের ঝুঁকিই বাড়াতে পারে না, হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। অনেক চিপসে প্রিজারভেটিভ এবং কৃত্রিম রঙও থাকে।অন্যান্য বিকল্প - জলখাবারের জন্য আপনি কিছু প্রেটজেল, প্রাকৃতিক পপকর্ন এবং কলার চিপস বা ব্যানানা চিপস খেতে পারেন।

১২. জিএমও খাবার:জিএমও খাবার নিরাপদ কিনা তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। একদিকে, বড় খাদ্য কোম্পানিগুলি জিএমও পণ্য পছন্দ করে কারণ এগুলি জৈব খাবারের চেয়ে বেশি টেকসই এবং দরিদ্র দেশগুলিতে চাষ করা সহজ। তবে, বাজারে আসার আগে এগুলি খুব কম পরীক্ষা করা হয় এবং আমরা এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে খুব কমই জানি।অন্যান্য বিকল্প - জৈব পণ্যগুলি সাধারণত একটি নন-জিএমও লেবেল-সহ আসে।

১৩. অত্যধিক অ্যালকোহল:ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে অতিরিক্ত মদ্যপান এবং মাথা, ঘাড়, গলা, লিভার, বুক এবং কোলনের ক্যানসারের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। যদিও বিতর্ক চলছে যে খুব বেশি মদ্যপান করা উচিত নাকি খুব কম মদ্যপান করা উচিত, তবুও, সাধারণত পরিমিত মদ্যপানকে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়।

অন্যান্য বিকল্প - যদি আপনি মদ্যপান ত্যাগ করতে না চান, তাহলে কম ঝুঁকিপূর্ণ স্তরে পান করুন - মহিলাদের জন্য প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩টি পানীয় এবং পুরুষদের জন্য ৪টি পানীয়। এবং মহিলাদের জন্য প্রতি সপ্তাহে মোট ৭টি পানীয় এবং পুরুষদের জন্য ১৪টি পানীয় যথেষ্ট।

১৪. পরিশোধিত চিনি:সবচেয়ে বড় সমস্যা হল উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ (HFCS), এবং অন্যান্য পরিশোধিত চিনি, এমনকি বাদামী চিনিও সমস্যা হয়ে উঠছে কারণ বড় কোম্পানিগুলি প্রাকৃতিকভাবে চিনি তৈরি করার পরিবর্তে এতে সামান্য গুড় যোগ করে। পরিশোধিত চিনি ইনসুলিন বাড়ায় এবং চিনি ক্যানসার কোষ বৃদ্ধি করে।

অন্যান্য বিকল্প - প্যাকেটজাত খাবার কেনার আগে সর্বদা তার উপাদানগুলি পড়ুন; এতে চিনির পরিমাণ আপনাকে অবাক করে দেবে, এমনকি কিছু স্বাস্থ্যকর খাবারেও প্রচুর চিনি থাকে। আপনার মিষ্টির লোভ মিছরি নয়, ফল দিয়ে পূরণ করুন, এবং আপনি কিছুদিনের অভ্যাসেই ঠিক হয়ে যাবেন।

১৫. ট্রান্স ফ্যাট:ট্রান্স ফ্যাট নির্মাতারা তরল তেলকে শক্ত করে তৈরি করে, হাইড্রোজেনেশন নামে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে, যা বিভিন্ন পণ্যের মেয়াদ বাড়ায়। কিন্তু ট্রান্স ফ্যাটও ক্যানসারের কারণ হয়।অন্যান্য বিকল্প - কম চর্বিযুক্ত কিছু খাওয়া ভাল, কিন্তু যদি আপনি সুস্বাদু খাবার খেতে চান তবে মাখনের মতো জিনিসগুলি বেছে নিন যাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি এটি খুব বেশি খাবেন না কারণ এটিও বিপজ্জনক।