চুষে নেয় শরীরের রক্ত...! অন্ধকারে কুটকুট করে কামড়ায় 'ছারপোকা', তুড়িতে তাড়ান নিমেষে! শিখে নিন ছোট্ট সহজ 'টোটকা'

গরমকাল মানেই যাবতীয় পোকামাকড়ের উপদ্রব। আর এই তালিকায় শীর্ষে থাকে ছারপোকা। এমন এই একটি জিনিস যা মানুষের জীবন তিতিবিরক্ত করে তোলে। দেখতে ছোট্ট হলে কী হবে, এই পোকা মুহূর্তের মধ্যে ছেয়ে ফেলতে পারে গোটা বাড়ি। আর গরমে এর বিস্তার বিপুল।

ছারপোকার যন্ত্রণা থেকে নিস্তার নেই এমনকি ব্রিটেন–আমেরিকার মতো দেশেও। আমাদের দেশে তো বটেই, এমনকি উন্নত দেশগুলির হোটেলের বিছানায়ও ছারপোকা থাকে। সোফায় বসলে কুট কুট করে কামড়াতে থাকে আড়াল থেকে।

এই সর্বব্যাপী সমস্যা নিয়ে মাঝেমধ্যে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখা যায়। কিন্তু কেউ উল্লেখযোগ্য সমাধান দিতে পারে না। কিন্তু সত্যি কি পেস কন্ট্রোল ছাড়া ছারপোকার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়?

আসলে ছারপোকা দমন করা কঠিন তাঁর অন্যতম একটি কারণ হল, এরা খুব সহজেই কীটনাশক–সহনীয় হয়ে উঠতে পারে। এরা বালিশের কোনায় বা বিছানার নীচেই শুধু ঘাপটি মেরে থাকে না।

বাসে, ট্রেনে এমনকি প্লেনের আসনগুলিতেও ছারপোকা থাকতে পারে। আর সেই সুবাদে আপনার জামাকাপড়, ব্যাগ থেকে জুতো যে কোনও কিছুতেই রয়ে যেতে পারে ছাড়পোকা। আর দীর্ঘ পথে ভ্রমণের পর আপনি যখন বাড়ি যাবেন, ছারপোকাও আপনার সঙ্গে সঙ্গে যায়। আর তারপরে বংশ বিস্তার করে নিমেষে।

রাতে আমরা ঘুমিয়ে পড়লেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের রক্ত চোষা শুরু করে এই ছোট্ট অথচ ভয়ানক পোকাগুলো। আমরা জানি, ডিডিটির মতো বিষাক্ত পাউডারে হয়তো ছারপোকা মরে যায়। কিন্তু সারা বিশ্বে এই কীটনাশকের ব্যবহার নিষিদ্ধ।

কারণ গবেষণায় উঠে এসেছে যে এই ডিডিটি থেকে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। ছারপোকা তাড়াতে কম শক্তির কীটনাশকে কাজ হয় না। আবার বাজারে ছারপোকা মারার অব্যর্থ ওষুধ বলে যা বিক্রি করা হয়, ওগুলো ব্যবহার করা বিপজ্জনক। কারণ সেগুলি রাসায়নিক ভর্তি এবং এতই বিষাক্ত যে শুধু ছারপোকাই না, ব্যবহারকারী মানুষের জীবনও তাতে বিপন্ন হতে পারে।

ছারপোকা কীভাবে কীটনাশক–সহনীয় হয়ে উঠতে পারল, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেন, ওদের গায়ের ছাল ক্রমেই এত পুরু হয়ে উঠেছে যে সহজে পোকা মারার ওষুধ শরীরের ভেতর ঢুকতে পারে না।

আর দ্বিতীয় কারণ হল, এই ছাড়পোকাগুলির বিপাক প্রক্রিয়ার দারুণ প্রতিরোধদক্ষতা আছে। ওদের পেট থেকে বিষ নিষ্ক্রিয় করার দক্ষতাসম্পন্ন একধরনের জৈবরাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। ফলে এখন আর প্রচলিত ওষুধে কাজ হয় না।

এ বিষয়ে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিশেষভাবে প্রাকৃতিক কীটনাশকের উপর নির্ভর করার পরামর্শ দিচ্ছে। আবার একইসঙ্গে দেখা যাচ্ছে ছারপোকা দমনে কার্যকরী ভূমিকা নিতে সক্ষম বিউভেরিয়া ব্যাসিয়ানা (Beauveria bassiana) নামের একধরনের ফাঙ্গাস।

তবে আজ এই প্রতিবেদনে শেয়ার করা যাক এমন কিছু ছারপোকা তাড়ানোর মোক্ষম টোটকা যা দুর্দান্ত কার্যকরী আবার তার ব্যবহারের কোনও রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া নেই। চলুন কী সেই কার্যকরী উপায় যা দিয়ে এই গরমে আপনি সহজেই আর নির্ঝঞ্ঝাটে বাড়ি থেকে নির্মূল করতে পারেন ছারপোকার মতো উপদ্রবকে।

টিপস ১: প্রথমে স্যাভলন বা ডেটল যে কোন একটি নিন। আর লাগবে জল। ২৫০ গ্রাম জলের জন্য ৪ চা চামচ স্যাভলন বা ডেটল নিন। জলের পরিমান কম বেশি নিলে স্যাভলনের পরিমানও কম বেশি নিতে হবে।

১) জল ও স্যাভলন ভাল করে মিশিয়ে একটি বোতলে নিয়ে নিন। ভালভাবে মেশানো জরুরি। কারণ ভাল ভাবে না মেশালে এটি কার্যকরী হবে না। তারপর বোতলের সঙ্গে একটি স্প্রের মুখ লাগিয়ে স্প্রে করে দিন নির্ধারিত জায়গাগুলিতে।

যেখানে যেখানে ছারপোকা ঘুরে বেড়ায় সেখানে সেখানে স্প্রে করতে হবে। দেখবেন ৫ মিনিটের মধ্যে ছারপোকা মরে যাবে বা পালাবে। আর কখনও আসবে না। পরপর এক সপ্তাহর মত স্প্রে করলে দেখবেন আপনার ঘর পুরোপুরি ছারপোকা মুক্ত হয়ে যাবে।

২) এ জন্য লাগবে শশা এবং পরিমাণ মত জল। সাধারণ জল নিলেই হবে। প্রথমে আপনি শশাটা কেটে নিন গোল গোল করে। খুব বেশি মোটা করে কাটবেন না। যাতে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করা যায় সে রকম করে পাতলা পাতলা কাটবেন। খোসা-সহ কেটে নিন।

এবার কুচানো শশাগুলো মিক্সিতে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আপনাদের কাছে যদি ব্লেন্ডার না থাকে তবে শীলপাটায় খুব মিহি করে বেটে নিতেও পারেন। একটা শশার জন্য তিন টেবিল চামচ জল নিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে খুবই মিহি করে।

এরপর একটি ব্রাশ নিন।ব্রাশে শশার পেস্ট লাগান। যেখানে যেখানে ছাড়পোকার উপদ্রব বেশি সেখানে সেখানে শশার পেস্ট লাগিয়ে নিন। ছারপোকার উপদ্রব যতদিন বেশি থাকবে ততদিন লাগাবেন। উপদ্রব কমে গেলে কিছু দিন পরপর লাগালেও হবে। শশার পেস্ট বেশি ঘন বা বেশি পাতলা হলে কিন্তু হবে না।

৩) ছারপোকা দূর করতে পেঁয়াজের রস দারুণ কার্যকরী। একটি স্প্রে বোতলে পেঁয়াজের রস ভরে নিন। তারপর এটি স্প্রে করে দিন বিছানা ও সোফার চারপাশে যেখানে যেখানে ছারপোকা রয়েছে। তারপরে দেখুন রেজাল্ট। অল্প সময়েই মিলবে হাতেনাতে ফল।

৪) নিম তেল: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ নিম তেল বিছানার ছারপোকার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। এর জন্য, এক কাপ জলে দুই টেবিল চামচ নিম তেল এবং আধা চা চামচ ডিটারজেন্ট পাউডার মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে ভরে ছারপোকা আক্রান্ত স্থানে স্প্রে করুন। এতে দুই দিনের মধ্যে ব্ল্যাকহেডস দূর হয়ে যাবে।

৫) পুদিনা: পুদিনা পোকার উপদ্রব দূর করতেও খুবই কার্যকর। এর জন্য পুদিনা পাতা ভাল করে পিষে জলে মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি একটি স্প্রে বোতলে ভরে যেখানে ছারপোকা আছে সেখানে ঢেলে দিন। এটি করলে কয়েক দিনের মধ্যেই পোকামাকড় এবং মশা মারা যাবে। ছারপোকা পুদিনার গন্ধ সহ্য করতে পারে না এবং পুদিনার সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সাথেই মারা যায়।

৬) ল্যাভেন্ডার তেল: আপনি ছারপোকা মারার জন্য ল্যাভেন্ডার তেলও ব্যবহার করতে পারেন। এর গন্ধে পোকামাকড় আকৃষ্ট হয়। গন্ধ নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করার পর পোকামাকড় মারা যায়। এর জন্য, একটি স্প্রে বোতলে এক গ্লাস জল ভরে তাতে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল যোগ করুন। তারপর এটি বিছানা এবং যেখানে ছারপোকা আছে সেখানে স্প্রে করুন।

৭) মনে রাখবেন ছারপোকা হোক বা তেলাপোকা, বাড়িতে পোকামাকড় মারার ওষুধ অবশ্যই রাতে দিতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই পরিষ্কার করতে হবে।

শর্তত্যাগ: শুধুমাত্র আপনাদের সচেতনতার উদ্দেশ্যেই এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে। আমরা এই লেখায় সাধারণ জ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ তথ্য শেয়ার করেছি মাত্র। আপনি যদি কোথাও আপনার স্বাস্থ্য, জীবন ও বিজ্ঞানের যোগ সম্পর্কিত কিছু পড়েন তবে তা গ্রহণ করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।