'বয়স' অনুযায়ী আপনার রক্তে 'শর্করার' মাত্রা কত হওয়া উচিত জানেন...? মিলিয়ে নিন সুগার-চার্ট

রক্তে শর্করার মাত্রা ডায়াবেটিসের লক্ষণ শনাক্তকরণ এবং পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা আপনাকে বলি, আপনার শরীরে শক্তি সরবরাহের জন্য রক্তে শর্করার প্রয়োজন, কিন্তু যদি রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) বা খুব কম হয় (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় তবে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, গ্লুকোজ-সম্পর্কিত অবস্থার সঠিক প্রাথমিক শনাক্তকরণ মূলত বয়স এবং জীবনধারার উপর ভিত্তি করে রক্তে স্বাভাবিক শর্করার পরিসীমা বোঝার উপর নির্ভর করে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এই শর্করা লেভেল সঠিক ভাবে বুঝে নেওয়া জরুরি।

আজ এই প্রতিবেদনে আমরা বয়স অনুসারে রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রার চার্ট, বিভিন্ন বয়সের মধ্যে এটি কীভাবে ওঠানামা করে এবং এর প্রভাবই বা কী তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

এছাড়াও, আমরা আপনাকে বলব কী ভাবে সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যকর রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখা যায়...। তার জন্য কী কী করা জরুরি ইত্যাদি।

আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন (ADA) অনুসারে রক্তে শর্করার মাত্রা কী তা জানুন।

রক্তে শর্করার মাত্রা দুটি প্রধান পরীক্ষা ব্যবহার করে পরিমাপ করা হয়। প্রথমটি হল ফাস্টিং ব্লাড সুগার (এফবিএস) - এটি কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা উপবাস বা খাবার থেকে বিরত থাকার পরে শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করে।

এই পরীক্ষাটি আপনাকে বলতে পারে যে কীভাবে আপনার শরীরে উপবাসের সময় গ্লুকোজ ভেঙে যায়। সেইসঙ্গে এই পরীক্ষা ডায়াবেটিসের অন্তর্নিহিত নিয়মগুলি সম্পর্কে আরও স্পষ্টতা প্রদান করে।

দ্বিতীয় পরীক্ষাটি হল র‍্যান্ডম ব্লাড সুগার (আরবিএস) - এই পরীক্ষা যে কোনও সময় গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করে। আপনি শেষবার কখন খেয়েছেন তা নির্বিশেষে এই টেস্ট হতে পারে। এটি হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণগুলি শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।

উভয় পরীক্ষাই আপনার শরীর কীভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা পরিচালনা করছে সে সম্পর্কে অত্যন্ত মূল্যবান তথ্য প্রদান করে। অতএব, ডায়াবেটিস বা অন্যান্য বিপাকীয় ব্যাধিগুলির লক্ষণগুলি শনাক্ত করতে এই পরীক্ষাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

medlineplus.gov-এ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিম্নোক্ত এই চার্টের মাধ্যমে বয়স অনুযায়ী রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা জেনে নিন।

রক্তে স্বাভাবিক শর্করার মাত্রা ব্যক্তির বয়স এবং অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। এই বিষয়ে জানার ফলে আপনার গ্লুকোজ সঠিক পরিসরে আছে কি না তা জানতে এই চার্ট আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

এখানে, বয়সের শ্রেণিবিন্যাসের উপর ভিত্তি করে ফাস্টিং এবং র্যান্ডম উভয় পদ্ধতিতে রক্তে শর্করার মাত্রা কত হওয়া উচিত তা সম্পর্কে সবিস্তারে জেনে নিন…

বয়স গ্রুপ ফাস্টিং ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL) র্যান্ডম ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL)শিশু বা ছোট শিশু (০-৩ বছর) ৬০-১১০ ৬০-১৮০ রক্তে শর্করার মাত্রায় ওঠানামা হতে পারে। উপবাসে এই মাত্রা সাধারণত ৬০ এবং ১১০ mg/dL এর মধ্যে থাকে। খাওয়ার পরে র্যান্ডম রক্তে শর্করার পরিমাণ কিছুটা বেশি হতে পারে।

শিশু (৩-১২ বছর) ৭০-১৪০ ৭০-১৮০ এই মাত্রা শিশুদের তুলনায় কিছুটা বেশি। পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকে।

কিশোর (১৩-১৮ বছর) ৭০-১৪০ ৭০-১৮০ বয়ঃসন্ধির সময় হরমোনের পরিবর্তন গ্লুকোজের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। অস্থায়ী ইনসুলিন প্রতিরোধের বিকাশের সময় বিকাশ হতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্ক (১৯+ বছর) ৭০-১৩০ ৭০-১৮০ রক্তে শর্করার মাত্রা আরও স্থিতিশীল। প্রিডায়াবেটিস বা টাইপ 2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার জন্য, উপবাসের রক্তে শর্করার মাত্রা ১৩০ mg/dL এর বেশি হওয়া উচিত নয়।

রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করার কারণগুলি:রক্তে শর্করার মাত্রার ওঠানামা খাবার ছাড়া অন্য অনেক কারণে হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে...

বয়স।খাদ্য।শারীরিক কার্যকলাপ।ওষুধ।চিকিৎসা অবস্থা ইত্যাদি।

আপনার যদি হাই ব্লাড সুগার (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) থাকে তবে আপনার ফাস্টিং ব্লাড সুগার লেভেল ১৩০ mg/dL এর উপরে হবে এবং র্যান্ডম ব্লাড সুগার ১৮০ mg/dL এর উপরে হবে।

যদি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা ধারাবাহিকভাবে এই সীমার উপরে থাকে তবে আপনার প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিস থাকতে পারে। নিয়ন্ত্রিত না হলে এটি হৃদরোগ, স্নায়ুর সমস্যা এবং কিডনির রোগের মতো গুরুতর চিকিৎসা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আপনার যদি রক্তে শর্করার পরিমাণ কম থাকে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), সেক্ষেত্রে আপনার ফাস্টিং ব্লাড সুগার লেভেল ৭০ mg/dL এর কম হবে এবং র্যান্ডম শর্করার মাত্রা 60 mg/dL-এর কম হবে।

আপনি মাথা ঘোরা, বিভ্রান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং বিরল ক্ষেত্রে, কম রক্তে শর্করার কারণে খিঁচুনি অনুভব করতে পারেন। ইনসুলিন বা অ্যান্টিডায়াবেটিক ওষুধ গ্রহণকারী রোগীদের বা যারা খুব দীর্ঘ সময় ধরে উপবাস করেন বা খুব দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করেন তাদের মধ্যে এটি সাধারণত দেখতে পাওয়া যায়।

অস্বীকৃতি: এই প্রতিবেদনে আপনাকে দেওয়া সমস্ত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য এবং পরামর্শ শুধুমাত্র আপনার সাধারণ তথ্যের জন্য। আমরা বৈজ্ঞানিক গবেষণা, অধ্যয়ন, চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য পেশাদারদের পরামর্শের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রদান করি। আপনার এটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত এবং করা উচিত। এই পদ্ধতি অবলম্বন করার আগে আপনার ব্যক্তিগত চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।