Balochistan Freedom: কেন পাকিস্তানের প্রবল 'শত্রু' হয়ে উঠল বালুচিস্তান! পিছনে রয়েছে জিন্নাহর বিশ্বাসঘাতকতা, এমনকী বাংলাদেশও!
- Published by:Suman Biswas
- Written by:Trending Desk
Last Updated:
Balochistan Freedom: ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় সবথেকে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)।
advertisement
1/8

পাকিস্তানের সবথেকে বড় নিরাপত্তা উদ্বেগ হয়ে উঠেছে বালুচিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রদেশ। কারণ কয়েক দশক পরে রীতিমতো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এক সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনী। তারা খনিজে সমৃদ্ধ এই এলাকার স্বাধীনতা দাবি করছে। প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরছে এখানে। আর সর্বশেষ ঘটনা হল ট্রেন অপহরণ। এর পিছনে রয়েছে ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় সবথেকে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)।
advertisement
2/8
বর্তমানে রমজান চলছে। আর ঈদের আনন্দে মেতে উঠতে জাফর এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন অফিসার এবং নাগরিকরা। কোয়েত্তা থেকে ৩০ ঘণ্টা যাত্রা করে পেশোয়ার যাচ্ছিল ট্রেনটি। একটি প্রত্যন্ত এলাকার সুড়ঙ্গপথে ট্রেনটি আচমকাই থেমে যায়। সেখানে চলে গুলিযুদ্ধ। অপহরণ করা হয় ৪০০ যাত্রী বোঝাই ট্রেনটিকে।
advertisement
3/8
এভাবে ট্রেন অপহরণ করে যাত্রীদের পণবন্দি বানিয়ে বিদ্রোহীরা বালুচ রাজনৈতিক বন্দি এবং সেখানকার নাগরিকদের মুক্তির দাবি জানায়। আর তাদের দাবি না মেটানো হলে গোটা ট্রেন উড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। মোটামুটি ৩০ ঘণ্টা স্নায়ুযুদ্ধ চলে। এরই মধ্যে ৩৩ জন বিদ্রোহীকে হত্যা করে পণবন্দিদের উদ্ধার করে পাক বাহিনী। তবে অন্তত ২১ যাত্রী এবং ৪ জন নিরাপত্তা আধিকারিক নিহত হয়েছেন। এই অপহরণ কিন্তু বালুচ আন্দোলনে এক নয়া অধ্যায় যোগ করল। আর এই বিদ্রোহের মূলে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নাহর বিশ্বাসঘাতকতা।
advertisement
4/8
বালুচরা কেন স্বাধীনতা চান? বরাবরই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে এসেছে পাকিস্তানের বৃহত্তম অথচ সবথেকে থেকে জনবহুল এই প্রদেশটি। বালুচরা এখন সম্পদের শোষণ এবং প্রান্তিকীকরণের অভিযোগ করছে, যা জাতিগত অসন্তোষ এবং পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এমনিতে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বালুচিস্তান। চাঘি জেলার রেকো ডিক এবং সৈন্ডকে বড় বড় সোনা এবং তামার খনি আছে। শুধু তা-ই নয়, এখানে রয়েছে লৌহ আকরিক, সীসা, জিঙ্ক এবং কয়লার খনিও। বালুচদের দাবি, সরকার এই সম্পদগুলির অপব্যবহার করছে, যার উপর শুধুই এখানকার বাসিন্দাদের অধিকার। আর এই প্রতিরোধের সামনের সারিতে রয়েছে বিএলএ এবং বালুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) এর মতো বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
advertisement
5/8
জিন্নাহর বিশ্বাসঘাতকতা: ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি বালুচিস্তানকেও স্বাধীন বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এই অঞ্চলে চারটি প্রাক্তন দেশীয় রাজ্য রয়েছে - খারান, মকারান, লাস বেলা এবং কালাত। দেশ ভাগের আগে তাদের তিনটি বিকল্প দেওয়া হয়েছিল - পাকিস্তান অথবা ভারতের সঙ্গে থাকা, নাহলে স্বাধীন হওয়া। কালাতের খান খান মীর আহমেদ ইয়ার খান শেষ বিকল্পটি বেছে নেন।প্রথমে অবশ্য কালাতের স্বাধীনতার কথা মেনে নিয়েছিলেন জিন্নাহ। খানও তাঁকে বিশ্বাস করেছিলেন। কারণ তাঁদের মধ্যে ভাল বন্ধুত্ব ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট কালাতকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ব্রিটিশরা আশঙ্কা করেছিল যে, সম্প্রসারণবাদী শাসনের হুমকির কারণে কালাতকে স্বাধীন থাকতে দেওয়া খুব ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তারা কালাতকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পাকিস্তানের উপর চাপ দেয় এবং এই সময় জিন্নাহ-রও মত বদল ঘটে।
advertisement
6/8
১৯৪৭ সালের অক্টোবর নাগাদ খানকে পাকিস্তানের সঙ্গে এক করার পরামর্শ দেন জিন্নাহ। কিন্তু খান তা প্রত্যাখ্যান করেন। এদিকে ১৯৪৮ সালের ১৮ মার্চ জিন্নাহ খারান, মকারান, লাস বেলার অন্তর্ভুক্তির কথা ঘোষণা করেন। যার ফলে কালাত স্থলবেষ্টিত হয়ে পড়ে এবং কালাতের কাছে অর্ধেকেরও কম জমি ছিল। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে একটি ভুয়া খবর। রটে যায় যে, খান ভারতীয় আধিপত্যের সঙ্গে যোগ দিতে চাইছেন, যার জেরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে পাকিস্তান। এদিকে অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তির সাহায্য না পেয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে এক হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না বালুচ নেতার হাতে। ফলে দেশ জুড়ে নানা সময়ে বারংবার উদ্রেক হয় বিদ্রোহের।
advertisement
7/8
বাংলাদেশের প্রভাব: সত্তরের দশকে পাকিস্তান থেকে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, তখন উৎসাহিত হয়েছিলেন বালুচরাও। তাঁরাও স্বাধীনতার দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু তা নাকচ করে দেন জুলফিকার আলি ভুট্টো। যার ফলে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় এবং ১৯৭৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বালুচিস্তানের আকবর খান বুগতি প্রাদেশিক সরকারকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হন।
advertisement
8/8
পাকিস্তান এই বিক্ষোভ দমনের জন্য একটি বৃহৎ পরিসরে অভিযান শুরু করে, যার ফলে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয় এবং হাজার হাজার সশস্ত্র উপজাতি পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। যতক্ষণ না জেনারেল জিয়া-উল-হক ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করেন, ততক্ষণ অর্থাৎ প্রায় চার বছর এই অভিযান স্থায়ী হয়েছিল। বালুচদের ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং বালুচিস্তান থেকে পাকিস্তানি সেনা প্রত্যাহার করা হয়। তবে বালুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই, তা আজও জারি রয়েছে।