তবে জানেন, পরাধীন ভারতবর্ষে সাহেব মারতে বাংলায় প্রথম বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে? পরাধীন ভারতে এক শীতের ডিসেম্বরে ইংরেজ সাহেবকে মারতে বোমা বিস্ফোরণ করেন বীর বিপ্লবীরা। বিপ্লবের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, বঙ্গপ্রদেশে প্রথম বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল মেদিনীপুরেই। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, নারায়ণগড়ে। বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন পরাধীন ভারতবর্ষের বিপ্লবীরা। ঘটনা ১৯০৭ সালের ৬ ডিসেম্বরের। অত্যাচারী শাসক অ্যান্ড্রু ফ্রেজার-এর ট্রেন এই পথ ধরে আসার খবর পেয়ে রেললাইনে পাতা হয় মাইন। এই দিনেই রাতের ট্রেনে ওড়িশার দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকা পরিদর্শন করে ফিরছিলেন তৎকালীন ছোটলাট ফ্রেজার। যিনি বিপ্লবীদের চোখে অত্যাচারী, বঙ্গভঙ্গে লর্ড কার্জনের পরামর্শদাতা তথা মূল কারিগর হয়ে উঠেছিলেন।
advertisement
তাই বিপ্লবীদের কাছে চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন এই ইংরেজ সাহেব। তাঁকেই বিপ্লবীরা দণ্ড দিতে প্রস্তুত হন। আগেও ব্যর্থ হয়েছেন বিপ্লবীরা। এ বার যেন বিফল না হয়। প্রতিজ্ঞা করেছেন গুপ্ত সমিতির বিপ্লবীরা। তাই সচেতনভাবে, সবদিকে নজর দিয়ে এবং সন্তর্পণে ৬ ডিসেম্বর রাতে রেললাইনে পোঁতা হল বোমা।
বঙ্গ প্রদেশে ব্রিটিশ শাসক হত্যায় কলকাতার গুপ্ত সমিতির উদ্যোগ ও মেদিনীপুরের গুপ্ত সমিতির সহযোগিতায় এই দুঃসাহসিক কাজে যুক্ত ছিলেন বারীন্দ্রনাথ ঘোষ তথা বারীন ঘোষ, বিভূতি সরকার এবং পরবর্তীতে কিংসফোর্ডকে হত্যার কাজে নিযুক্ত ক্ষুদিরামের সহযোগী প্রফুল্ল চাকি। এই কাজে আরও একজন বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র সেনের উপর দায়িত্ব থাকলেও খড়্গপুর পর্যন্ত এসে তাঁকে ফিরে যেতে হয়। বারীন তাঁর আলিপুর বোমা মামলার স্বীকারোক্তিতে বলেছিলেন, দু’জনকে পাহারায় বসিয়ে তিনি নিজেই মাইন পুঁতেছিলেন। যাতে সবটা নিঁখুতভাবে হতে পারে। জেলার অন্যতম বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগো তখন প্যারিসে। বোমা তৈরির কৌশল আয়ত্ত করার কাজ শেষ করে ফেরার আগে পর্যন্ত বোমা তৈরির কারবারে তখন যুক্ত ছিলেন উল্লাস কর দত্ত। তাঁর তৈরি বোমা আনা হয়েছিল মেদিনীপুর তথা নারায়ণগড়ে।
আরও পড়ুন : মাইনে নেন না এক পয়সা, অবসরের পরও পড়িয়ে চলেছেন ‘দাদু স্যার’
খড়গপুর থেকে ওড়িশাগামী বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে যা বর্তমানে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে শাখা, সেই শাখার নারায়ণগড় স্টেশনের কাছেই রেললাইনের নীচে পোঁতা হয় ডিনামাইট বোমা। উল্লাস কর দত্তের প্রস্তুত ডিনামাইট বোমাটি নারায়ণগড় স্টেশনের অল্প দূরে রেললাইনের নীচে বসান বিপ্লবীরা। তবে বিপ্লবীদের সামান্য ভুলে অত্যাচারী এই শাসক প্রাণে বেঁচে যান।
তবে বিপ্লবীদের সেই স্মৃতি আজও দগদগে নারায়ণগড়ের এই এলাকায়।বাংলায় বিস্ফোরণের সেই প্রথম স্মৃতিকে ধরে রাখতে রেল লাইনের ধারে ডহরপুর শবরপল্লিতে ১৯৭২ সালের ৬ ডিসেম্বর স্মৃতিস্তম্ভ গড়েছেন প্রবোধকুমার ভৌমিক। উদ্বোধন করেছিলেন বিপ্লবী ভূপতি মজুমদার। আজও স্মৃতিস্তম্ভ সেই স্মৃতিকে জাগিয়ে রেখেছে। তবে সেই ঐতিহাসিক ডিসেম্বরে স্মৃতি আজও টাটকা মেদিনীপুরের ইতিহাসে।