প্রতিশ্রুতি মতো মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হল সিঙ্গুরকে। নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে অষ্টম শ্রেণির ইতিহাসের বইতে সিঙ্গুর আন্দোলনের অধ্যায়টি পড়তে পারবে ছাত্রছাত্রীরা। তেভাগা-তেলঙ্গনার সঙ্গেই পাঠ্যক্রমে জায়গা করে নিয়েছে সিঙ্গুরে চাষীদের গণআন্দোলন। কী রয়েছে ইতিহাস বইয়ের নতুন এই অধ্যায়ে?
সিলেবাসে 'সিঙ্গুর'
- শুরুতেই ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সিঙ্গুর আন্দোলনের বিস্তারিত সময়সূচি দেওয়া হয়েছে
advertisement
-বর্ণিত কৃষকদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন
-বাম সরকারের জমিনীতির কড়া সমালোচনা
-অত্যাচারের কাহিনিও বর্ণিত হয়েছে
-অংশগ্রহকারী বুদ্ধিজীবী ও তৃণমূল নেতাদের নাম নথিবদ্ধ
- তারপর রয়েছে সিঙ্গুরে গাড়ি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ পর্বের বিবরণ
- রাজ্যে হাজার হাজার একর অনাবাদী জমি থাকতেও কেন প্রকল্পের জন্য সিঙ্গুরের ঊর্বর জমি বাছা হল সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে নতুন অধ্যায়ে
- রয়েছে তাপসী মালিক হত্যা প্রসঙ্গও
১৮ ডিসেম্বর জনৈক ভাগচাষির মেয়ে তাপসী মালিককে বর্বরোচিত আক্রমণ করে হত্যা করা হয়, প্রমাণ লোপাটের জন্য তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যে গ্রাম্য মেয়েটিকে উন্নয়নবিরোধীর তকমা দিয়ে এভাবে আগুনে দগ্ধ করা হলো, যে ছিল জমি রক্ষা আন্দোলনের এক দুর্ধর্ষ সৈনিক।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যেভাবে জমি আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিল সিঙ্গুর, সেই বিবরণও রয়েছে ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ে। সেই আন্দোলনকে সুসংহত করে তার নেতৃত্ব দিলেন শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেতা পার্থ চ্যাটার্জী। যোগ দিলেন প্রতুল মুখার্জী। সুজাত ভদ্র, পূর্ণেন্দু বসু, অসীমা পাত্র, মানিক দাস, মহাদেব দাস, প্রদীপ ব্যানার্জী, অভি দত্ত মজুমদার, দোলা সেন, বিজয় উপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, অর্পিতা ঘোষ প্রমুখ, ছিলেন বৃদ্ধা সরস্বতী দাস, বয়সের ভার তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠকে প্রভাবিত করতে পারেনি।
অত্যন্ত উর্বর, বহুফসলি, নিবিড়ভাবে সেচসেবিত এই কৃষি এলাকায় যে অত্যাচার আর অরাজকতার আবহ রচিত হয়েছিল, তার প্রতিবাদে সরব হন মহাশ্বেতা দেবী, মেধা পাটেকর, অরূন্ধতী রায়, যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন, অম্লান দত্ত, কবীর সুমন, জয় গোস্বামী, শাঁওলি মিত্র, অপর্ণা সেন প্রমুখ বরেণ্য সাহিত্যিক, শিল্পী, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মী।
অধ্যায়ের শেষভাগে রয়েছে আইনি লড়াই এবং জমি ফেরতের কাহিনী। বর্তমান সরকার সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফেরতে কতটা আন্তরিক ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সহ সেই বর্ণনাও রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, কৃষিজমিতে বিশ্বে মডেল হবে সিঙ্গুর। কৃষকদের নামে মনুমেন্ট হবে। বস্তুত, এই কৃষক আন্দোলন ভারতবর্ষে নজিরবিহীন। পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে এই আন্দোলন কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সংযোজিত করল।
একইসঙ্গে রাজ্য কেন সিঙ্গুরকে বাছল? সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে পাঠ্যক্রমে ৷ কারখানা হলে সামান্য কর্মসংস্থান, এই হিসেবেই উল্লেখ বইয়ে ৷ যদিও উল্লেখযোগ্যভাবে সিঙ্গুর অধ্যায়ে কোথাও নাম নেই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। উল্লেখ নেই ন্যানো গাড়ি বা টাটা মোটরসেরও।