দুই শহরের ভৌগোলিক দুরত্ব সাত হাজার আটশো একান্ন কিলোমিটার। কিন্তু বছর শেষে প্রায় একই সময়ে দুই শহরে দুই ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে সাধারণ মানুষের। আইসিসের হত্যালীলায় কেঁপে গিয়েছে প্যারিস। আর দুই পাক এজেন্টের গ্রেফতারে সামনে এসেছে খাস কলকাতার আইএসআই যোগ। কলকাতার তিলজলা থেকে গ্রেফতার হয় আখতার খান ৷ কলকাতায় আইএসআই এজেন্ট নিয়োগ করত আখতার ৷ আখতারকে জেরা করে তথ্য মেলে জাফরের ৷ গ্রেফতার করা হয় আখতারের ভাই জাফর খানকে ৷ কলকাতা পুলিশ সোর্সের মধ্যে লুকিয়ে আইএসআই-এর হয়ে তথ্য জোগাড় করে পাচার-ই ছিল দুই ভাই-এর কাজ। জানা যায় চর-ভাই-দের বৃত্তান্ত ৷ ২০ বছর পাকিস্তানে ছিল আখতার ৷ ২০০৮-য়ে নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসে আখতার ৷ ভারতে আইএসআই-এর প্রশিক্ষণ দিত আখতার ৷ আইএসআই-র সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত জাফরও ৷ ৯০ দশকে পাকিস্তানে পাড়ি দেয় জাফর ৷ ২০০৬-র মার্চ-২০০৭-র জুলাই পর্যন্ত পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণও নেয় জাফর ৷ দুই ভাই-এর টার্গেট ছিল পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের হাই প্রোফাইল পার্টি ৷ মকটেল বানাতে সিদ্ধহস্ত আখতারের যাতায়াত ছিল সেখানে ৷ ঘোরে থাকা আধিকারিকদের আলোচনা শোনাই ছিল তার কাজ ৷ এভাবেই বহু তথ্য সংগ্রহ করে পাকিস্তানে পাঠাত দুই ভাই ৷
advertisement
উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের সেনা ছাউনি ও মুভমেন্টের তথ্য জোগাড় করে পাকিস্তানে পাচার করত দুই ভাই। আর এই কাজের জন্যই কলকাতা পুলিশের সোর্সের মধ্যে ঢুকে পড়ে দুই ভাই। কলকাতা পুলিশের কয়েকজন অফিসারের সঙ্গেও তৈরি হয় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। পুলিশ অফিসাররা যখন সোর্স হিসেবে দুজনকে দেখছে, তখন আসলে সেই অফিসারদেরই সোর্স হিসেবে কাজে লাগাত দুই ভাই।
এখানেই শেষ নয়। এসটিএফের জালে ধরা পড়ে আরও তিন পাক চর। এরশাদ, আসফাক এ জাহাঙ্গির। দশ বছর আগে পাকিস্তানে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে যোগাযোগ। তখন থেকেই আইএসআই-এর হয়ে কাজ শুরু । সেই সূত্রেই ফোন আসে পাকিস্তান থেকে। উত্তর প্রদেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়া পাক চর কালামকে তাই শুধু আশ্রয়েই নয়, ভুয়ো পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে যাবতীয় বন্দোবস্ত করে দেয় এরশাদ। কালামকে ভারতে পাঠায় আইএসসাই। তাকে এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সেই কালামের সূত্রেই ধরা পড়ে যায় এরশাদ এবং তার ছেলে হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক আসফাক । এরশাদ গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্সের প্ল্যানিং বিভাগের কর্মী ৷ যে কোনও জায়গায় অবাধ যাতায়াতের অনুমতি ৷ আত্মীয় পরিচয় দিয়ে কালামকে শিপ বিল্ডার্স ঘোরায় এরশাদ ৷ এখানেই ছিল ডুবোডাহাজ ধ্বংসকারী রণতরী ৷ সেই যুদ্ধজাহাজের নকশা তৈরি করে কালাম ৷ নকশার ছবি ইমেল করে পাঠানো হয় আইএসআই-কে ৷ কালামের মাইক্রোচিপে এমন অনেক নকশার ছবি ছিল, যা তার থেকে সিজ করে এসটিএফ ৷ এছাড়া আসফাকের মামা জাহাঙ্গিরের বাড়ি থেকে উদ্ধার ৪ লক্ষ টাকার জাল নোট ৷ দশ বছর বাংলায় সক্রিয় এই চর-চক্র ৷
তবে কী সর্ষের মধ্যেই ভূত? প্রশ্নটা আরও উস্কে দেয় জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিএসএফের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত হেড কনস্টেবেল মহম্মদ রশিদের গ্রেফতার। শিবিরের খুঁটিনাটি থেকে অস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত যাবতীয় নথি পাকিস্তানে পাচার করত রশিদ। গ্রেফতার হয় রশিদের আত্মীয় কাফাইতুল্লা খানকেও। রশিদের মাধ্যমে পাওয়া নথি ইমেল ও হোয়াটসআপে পাকিস্তানে পাচার করত সে। তাকে জেরায় সামনে আসে পাক দূতাবাসের আধিকারিকের আইএসআই যোগ । পুলিশের অনুমান, স্থল ও বায়ুসেনাতেও ছড়িয়ে কাফাইতুল্লার চর। সব মিলিয়ে বছর শেষে গোয়েন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ক্রমশ বাড়ছে।