এর আগে সুনীল পাত্রের পা বাদ যাওয়ার ঘটনায় CMRI-কে শোকজ করে স্বাস্থ্য দফতর ৷ কেন দুর্ঘটনায় জখম ব্যক্তিকে নিয়ে টালবাহানা ? স্বাস্থ্য দফতরকে শোকজের জবাবে জানাতে হবে CMRI-কে । শোকজের কথা স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে বা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে জবাব দিতে চলেছে CMRI কর্তৃপক্ষ।
সুপ্রিম কোর্ট ও রাজ্যের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই সুনীলকে ফিরিয়ে দেয় বেসরকারি হাসপাতাল।
advertisement
রাজ্যের আইনানুযায়ী, দুর্ঘটনা, বিপর্যয়ের মতো জরুরি অবস্থায় রোগী ফেরত নয় ৷ ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করতে হবে ৷ সরকারের সঙ্গে হওয়া স্বাস্থ্য বিমা ও চুক্তি মানতে হবে ৷ আউটডোর ও ইনডোরে নির্দিষ্ট রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা ৷ চিকিৎসা দিতে বাধ্য চুক্তিবদ্ধ হাসপাতাল ৷
২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, পথ দুর্ঘটনা বা অন্য যে কোনও দুর্ঘটনাজনিত কারণে হাসপাতালে রোগী এলে তাঁকে ফেরানো যাবে না। ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিকাঠমো না থাকলে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও দিতে হবে। দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের এই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে।
এত আইন সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কড়া পদক্ষেপেও হুঁশ ফেরেনি । ফের কাঠগড়ায় CMRI। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে ভর্তিই নেয়নি হাসপাতাল। ফের অমানবিক বেসরকারি হাসপাতাল। দুর্ঘটনায় পা কাটা পড়ার পর খাস কলকাতায় একের পর এক হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে হয় কুলতলির বাসিন্দা সুনীল পাত্রকে।
বুধবার অর্থাৎ ১৫ মার্চ সকাল দশটা নাগাদ কুলতলির মনশাতলায় সুনীল পাত্রকে ধাক্কা মারে একটি ট্রাক। দুর্ঘটনায় বাঁ পা কাটা পড়ে তাঁর। কাটা পা নিয়ে সুনীলকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, সেখানেও জানিয়ে দেওয়া হয়, চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। এরপর বুধবার দুপুর নাগাদ CMRI হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সুনীলকে। সেখানে ভরতির জন্য ৫০ হাজার ও পরে ২ লক্ষ টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে CMRI কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি ছিল,
- আমাদের এমার্জেন্সিতে এরকম কোনও রোগী আসেননি
- আমাদের কোনও চিকিৎসক পরীক্ষা করেননি
- শুধু একজন এসে টাকা-পয়সার কথা জিজ্ঞাসা করেন
- তারপর ওনারা এখান থেকে চলে যান
বুধবার সকাল থেকে একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে ঘোরার পর অবশেষে বিকেলে sskm এ নিয়ে যাওয়া হয় সুনীলকে। দুর্ঘনার পর চিকিৎসায় দেরি হওয়ায় সুনীল পাত্রের কাটা পা জোড়া সম্ভব নয়। জানিয়ে দিলেন SSKM-এর চিকিৎসকরা। বুধবার রাতে অস্ত্রোপচার হয় সুনীলের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসা চলছে তাঁর। একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর SSKM-এ ভরতি করা হয় সুনীলকে। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। পরিবারকে চিকিৎসকরা জানান,
- ক্ষতস্থানে ধুলো ও গাছের পাতা লেগেছিল
- কোথাও ভালভাবে ড্রেসিং করা হয়নি
- সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় সেলাই সম্ভব না
- সেলাই হলে সেপটিসেমিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
- কাটা জায়গা বারবার খুলে ড্রেসিং করতে হবে
এরপর কোনওভাবে সুনীলের বাঁ পা জোড়া লাগানো সম্ভব না বলে জানিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই দাবি বিশেষজ্ঞদেরও। যদি একটু সহানুভূতি দেখাত সিএমআরআই তাহলে হয়ত এভাবে চিরদিনের মত পা হারাতে হত না সুনীলকে, বলছেন সুনীলের পরিবার।