রবিবার রাজ্য সরকারের অনুরোধে অতিরিক্ত আরও একদিন উদ্ধার অভিযানের অনুমতি দেয় সাগরমাতা পলিউশন কন্ট্রোল কমিটি ৷ কিন্তু ক্রমাগত তুষারপাতের সঙ্গে তুষার ঝড়ের জেরে এদিনও উদ্ধার করা গেল না পর্বতারোহী পরেশনাথ ও গৌতম ঘোষের দেহ। ছন্দা গায়েনের মতই বরফের চাদরের নীচে হয়ত চিরতরে হারিয়ে গেলেন দুই হিমালয়প্রেমী। এবারের মত বন্ধ হয়ে গেলেও, ভবিষ্যতে আবারও হবে অভিযান। কিন্তু খোঁজ কী মিলবে? হিমালয়কে ভালবেসে হিমালয়ের কোলেই হয়ত নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকবেন ছন্দা, পরেশ, গৌতমরা।
advertisement
হাওড়ার বাড়িতে আজও পড়ে একা দোলনাটা। দু’বছর হল হারিয়ে গেছে বাড়ির মেয়ে। কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে গিয়ে তুষারঝড়ের কাছে পরাজিত আদরের ছন্দা। সালটা ২০১৪। দিনটা ২১ শে জুলাই। সংবাদপত্র , টিভিতে খবরে তখন একটাই শিরোনাম। কাঞ্চনজঙ্ঘা জয় করে তার পশ্চিমপ্রান্তে বিপদসঙ্কুল ইয়ালুং খাঙ রুটে নিখোঁজ হয় যান হিমালয় কন্যা । রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে শেরপা, বার বার চালানো হয়েছে উদ্ধারকাজ। তবু খোঁজ মেলেনি ছন্দার। সময়ের সরণীতে স্মৃতি হয়ত কিছুটা ফিকে হয়ে এসেছিল। ফের তা উসকে দিল দুর্গাপুরের পরেশনাথ ও বারাকপুরের গৌতম ঘোষ।
ছন্দার পথেই হিমালয়ের কোলে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন দুই পর্বতারোহী। এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে বরফ রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছেন দুই হিমালয় প্রেমী। নেপাল সরকারের নিয়ম মত তিনদিন নিখোঁজ থাকলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। আজও পাহাড়ের কোলে কোথাও না কোথাও বরফ চাপা পড়ে আছে দুজনের দেহ।
ছন্দার মতই পরেশনাথ ও গৌতম ঘোষের জন্য চালানো হয়েছে উদ্ধারকাজ। ছয় শেরপার দল বার বার অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাদ সেধেছে খারাপ আবহাওয়া। তুষারঝড়। বেস ক্যাম্প সূত্রে জানানো হয়েছে, বিপদসঙ্কুল ট্রাইঅ্যাঙ্গল ফেস-এর ব্যালকনির নীচেই আটকে আছে গৌতম ঘোষের দেহ। আর সাউথ কলে তাঁবুর মধ্যে রয়েছে পরেশনাথের দেহ। প্রবল তুষারঝড়ে বন্ধ হয়ে গেছে অভিযান। পুরু বরফের চাদর কেটে উদ্ধার কার্যত অসম্ভব।
হিমালয় কন্যা ছন্দার মতই অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় কলকাতা পুলিশের দক্ষ অফিসার গৌতম ঘোষ। চারবার এভারেস্ট জয়ের চেষ্টার পর এবার এসেছিল সাফল্য। এভারেস্টের চূড়ায় উঠে হয়ত মনে হয়েছিল পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোয়। কিন্তু ফেরার পথে বাদ সাধল ক্লান্তি।
ছোটবেলা থেকে দেখা স্বপ্নকে ছুঁয়ে দুর্গাপুরের শারীরিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরেশনাথের কী মনে হয়েছিল তাও অজানাই থেকে গেল। বরফের যে বাধা ডিঙিয়ে বার বার পাহাড় শৃঙ্গ ছুঁতে অভ্যস্থ পর্বতারোহীরা, যে বরফকে কখনই প্রতিবন্ধক বলে মনে হয়নি, তুষারধসের কবলে পড়ে সেই বরফের নীচেই চিরকালের মত ঘুমিয়ে পড়েন ছন্দা, গৌতম, পরেশরা।
যাঁরা হিমালয়কে ভালবাসেন তাঁরা বোধহয় এভাবেই হিমালয়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়তে ভালবাসেন।