এই পুরো পরিকল্পনাটি সফল হলে এই প্রথম সম্পূর্ণ ডান পন্থী একটি সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করবে। যা সম্পূর্ণ ভাবে ট্রাম্পের সমর্থনে প্রচার চালাবে। এখন প্রশ্ন উঠছে কী ভাবে এই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অর্থ উপার্জন সম্ভব? এবং দ্বিতীয়ত Twitter, Facebook, এবং YouTube-এ ট্রাম্পকে যেভাবে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছিল এক্ষেত্রে তাহলে ট্রাম্পের ভূমিকা কী থাকবে?
advertisement
ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ (Trump Media and Technology Group)-এর লক্ষ্য কী?
ট্রাম্পের এই প্রজেক্টে বিনিয়োগ করছেন এমন বেশ কিছু বিনিয়োগকারীর সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের প্রধান উদ্দেশ্য হল সিলিকন ভ্যালিতে যে সব প্রযুক্তি জায়েন্ট (টেক জায়েন্ট) সংস্থগুলি রয়েছে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন একটি সাংবাদিক বৈঠকে অংশ নিয়ে এক সাংবাদিকের একটি প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, “বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলি সাধারণ মানুষের শত্রু।”
এবিষয়ে ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের তরফে বলা হয়েছে, তারা এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করতে চায় যা নন ক্যানসেলেবল গ্লোবাল কমিউনিটি হিসেবে পরিচিত লাভ করবে। ওই সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে থাকবে স্ট্রিমিং সার্ভিস, সংবাদ বিভাগ, ক্লাউড প্রোভাইডার। যার অর্থ Google, Twitter, Disney+, CNN সহ সমস্ত বড় সংস্থাগুলিকে রীতিমতো টেক্কা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রাম্পের ওই সংস্থা। ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ জানিয়েছে, যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হচ্ছে তাতে সংবাদ, এন্টারটেনমেন্ট, তথ্যচিত্র, খেলার অনুষ্ঠান সহ যাবতীয় কিছু দেখতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। তবে রেভিনিউ বা অর্থনৈতিক বিষয়ে এখনও কিছু জানাতে চায়নি ওই সংস্থাটি। ইতিমধ্যে অ্যাপটির প্রি অর্ডার শুরু হয়েছে অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে ( Apple App store)। মনে করা হচ্ছে অত্যন্ত সাধারণ পদ্ধতিতে অ্যাপটিকে ছড়িয়ে দিতে চাইছে সংস্থাটি।
স্পেশ্যাল পারপাস অ্যাকুইজিশন কম্পানি কী ভাবে কাজ করে?
স্পেশ্যাল পারপাস অ্যাকুইজিশন কম্পানি-হল একটি শেল (shell) সংস্থা। যারা IPO-র মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা উপার্জন করে। এবং বেসরকারি কোনও একটি সংস্থার সঙ্গে মিশে কাজ করে। এবিষয়ে প্রথমে স্পেশ্যাল পারপাস অ্যাকুইজিশন কম্পানি-র স্টেক হোল্ডারদের কাছে জানতে চাওয়া হবে তারা IPO ভ্যালির পরিবর্তে শেয়ার রিডিম করতে ইচ্ছুক কি না। যদি তারা করতে চায় তাহলে তাহলে সেখান থেকে প্রাপ্ত ২৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ট্রাম্পের সংস্থাকে দিতে পারবে।
ট্রাম্পের নতুন সোশ্যাল মিডিয়া কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে?
ট্রাম্পকে Twitter থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এমনকী Facebook এবং Youtube থেকেও পুরোপুরি সাসপেন্ড করা হয়নি। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করতে পারবেন না ট্রাম্প। বর্তমানে @realdonaldtrump নামে Twitter হ্যান্ডেলে এখনও ৮৮.৭ মিলিয়ন ফলোয়ার্স রয়েছে। জানুয়ারিতে সরকারি ভাবে নিজের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি সোশাল মিডিয়ায় খুব একটা অ্যাকটিভ ছিলেন না। এছাড়াও নিজের ব্লগেও সেভাবে তাঁকে লেখালিখি করতে দেখা যায়নি। শুধু তাই নয় অনলাইনে জনমত তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু তাতেও খুব একটা সফল হতে পারেননি ট্রাম্প।
চলতি বছরের জুলাই মাসে একটি নতুন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম লঞ্চ করেন ট্রাম্পের তৎকালীন মুখপাত্র এবং সিনিয়র অ্যাডভাইসর জেসন মিলের (Jason Miller)। যা App Store এবং Google play Store মিলে গোটা বিশ্বে প্রায় ২.২ মিলিয়ন ডাউনলোড হয়েছে। এই তথ্য জানিয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত অ্যাপ রেটিং সংস্থা সেন্সর টাওয়ার (Sensor Tower)। ওই প্ল্যাটফর্মটির নাম গেট্টার (Gettr)। অত্যন্ত উন্নত মানের কন্টেন্ট প্রকাশ করা হয় ওই অ্যাপে। রয়েছে স্ট্রিমিং-এর সুবিধা, নিউজ আউটলেট, এবং ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস। ওই সংস্থাকেও টেক্কা দিতে চাইছে ট্রাম্পের সংস্থা ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ওয়েব হোস্টের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে ট্রাম্পের সংস্থার। কারণ এর পিছনে একটি যুক্তি দেখিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, রিপাবলিকান পার্টির তরফে রেবেকা মার্সার (Rebekah Mercer) নামে এক ব্যক্তি একটি অ্যাপ চালু করেছিলেন। যার নাম ছিল Parler। কিন্তু চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আমেরিকার ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে Amazon.com-এর তরফে ওই অ্যাপের ওয়েব হোস্টিং বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে সম্পূর্ণভাবে ওই অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায়। Google-এর তরফেও Parler অ্যাপটিকে সম্পূর্ণভাবে তাদের অ্যাপস্টোর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে লস অ্যাঞ্জেলেসের ( Los Angeles) এর একটি বেসরকারি ক্লাউড সংস্থার সাহায্যে অনেক পরে ফের অ্যাপটিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রেও সেন্সর টাওয়ারের তরফে একটি তথ্য প্রকাশ করে জানানো হয়েছে তাদের ইনস্টল অনেকটাই কমে গিয়েছে।
ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ কী ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করবে?
যা জানা গিয়েছে ট্রাম্পের সম্পর্কে এবং তাঁর সমর্থকদের সম্পর্কে কোনও মজার বা কটাক্ষ করে কোনও পোস্ট হলে তা প্ল্যাটফর্মে রাখবে না তারা। ওই অ্যাপটির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন এমন অনেকে জানিয়েছে, কোনও খারাপ কথা বলা যাবে না, কটাক্ষ করা ইত্যাদি বিষয়গুলি না করতে রাজি হওয়ার পরই ব্যবহারকারীদের অ্যাপে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে।
এছাড়াও জানা গিয়েছে TRUTH অ্যাপটির সঙ্গে ভিডিও অন ডিমান্ড সার্ভিস চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে সাবক্রিপশন দেওয়ার পর নিজের পছন্দমতো কন্টেন্ট দেখতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। মনে করা হচ্ছে আগামী মাস থেকে এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপটির প্রাথমিক ভার্সন চালু হবে।
