ব্রুকলিনে এমন একটি কমিউনিটি রয়েছে যারা প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, জীবনযাপনকে এখনও সহজ ও সীমিত রেখেই চলতে চায়। ইনস্টাগ্রামে শেয়ার হওয়া একটি ভিডিও এই বিশেষ জীবনধারার দিকে নজর কেড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ‘কোশের প্রযুক্তি’ এবং কীভাবে হাসিদিক ইহুদিরা ইন্টারনেটে সারাক্ষণ যুক্ত না থেকেও যোগাযোগ রক্ষা করেন।
কোশের ফোন কী?
ব্রুকলিনে হাসিদিক এলাকায় কাজ করা ট্যুর গাইড ফ্রিদা ভিজেল এই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন। ভিডিওটি শুরু হয় — এক মহিলাকে ফ্লিপ ফোনে কথা বলতে দেখা যায়।
advertisement
ভিজেল ব্যাখ্যা করেন, “এটি সাধারণ ফ্লিপ ফোন নয়। এটি একটি বিশেষ ফোন, যাকে বলা হয় কোশের ফোন। কোশের ফোন কিছু হাসিদিক ইহুদিরা ব্যবহার করেন, যেগুলো বিশেষভাবে পরিবর্তিত করা হয়েছে যাতে ডিভাইসে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক ধর্মীয় ইহুদি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন সীমার মধ্যে থেকে। তারা ইন্টারনেটের বিপক্ষে নন, কিন্তু সারাক্ষণ ইন্টারনেট নিজের সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।”
তার মতে, লোকেরা মোবাইলে ইন্টারনেট না-রেখে অফিস বা ডেস্কটপে ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ—বয়স্করা যেন সন্তানদের জন্য ‘উপস্থিত’ থাকতে পারেন এবং বিভ্রান্ত না হন।
তিনি আরও জানান, ব্রুকলিনে একটি কিয়স্কে এই কোশের ফোন বিক্রি হয় এবং ফোনগুলোর ব্রাউজার সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে। এলাকায় এগুলো বেশ সাধারণ দৃশ্য।
ফোনের বাইরেও—কোশের প্রযুক্তির আরও বিস্তৃত দুনিয়া
ভিডিওতে আরও দেখানও হয়েছে কমিউনিটিতে ব্যবহৃত অন্যান্য কোশের ডিভাইস। ভিজেল উল্লেখ করেন—
- কোশের ক্যামেরা, যেগুলোতে কোনও ক্লাউড-ভিত্তিক ফিচার নেই
- কোশের এমপিথ্রি প্লেয়ার, যা আইটিউনস বা ইন্টারনেট ছাড়াই কাজ করে
- স্ট্যান্ডঅ্যালোন জিপিএস, যেখানে গুগল ম্যাপস বা ওয়েজের মতো অ্যাপ নেই
- এমনকি কোশের গেম বয় রয়েছে—যেখানে হিংসাত্মক গেম নিষিদ্ধ, আর কোশের টেসলা—যেখানে ইন্টারনেট ফাংশন সীমিত।
তিনি বলেন, “শিশুদের সাধারণত কোশের ফোনও থাকে না। তাই তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একসঙ্গে খেলাধুলা করে কাটায়।”
ভিডিওর ক্যাপশনে ভিজেল লিখেছেন— “কোশের প্রযুক্তির আশ্চর্য জগৎ—বিশেষ করে কোশের ফোন—হাসিদিক ইহুদিদের এক অনন্য উদ্ভাবন।”
‘আজকের দিনে এর প্রয়োজন’: দর্শকদের প্রতিক্রিয়া
ভিডিওটি দেখে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে। অনেকে জানান, এই সীমিত প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে তাঁদের মতামত—
একজন লিখেছেন, “কী আশ্চর্য ভাবনা! বাচ্চারা একসঙ্গে খেলছে—ভিডিও গেমের চেয়ে কতটা স্বাস্থ্যকর!”
আরেকজন মন্তব্য করেন, “আমি ইহুদি নই, কিন্তু আমিও এটা চাই! ঠিক এভাবেই তো হওয়া উচিত। আমি গুগল আর ফেসবুকের আগের প্রজন্মের—তখন বাবা-মায়েরা সত্যিই উপস্থিত থাকতেন। জেন এক্স! দারুণ লাগছে!”
আরেকজন লিখেছেন, “ইচ্ছে হয় আমাদের আধুনিক সমাজের বাচ্চাদেরও এভাবে বড় হতে দেখা যেত। স্ক্রিনে ডুবে থাকার চেয়ে এটি অনেক বেশি শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাস্থ্যকর।”
এক ব্যবহারকারী জানান, “সব বাচ্চারই, শুধু ইহুদি শিশু নয়, কোশের প্রযুক্তি থাকা উচিত। কারণ অনলাইনে এত অনুপযুক্ত জিনিস রয়েছে!”
আরেকজন বলেন, “ফোনে বিভ্রান্ত না হয়ে বর্তমান মুহূর্তে থাকা—এ ধারণাটা আমি বুঝতে পারছি।”
আরও মন্তব্য এসেছে — “একেবারেই খারাপ ধারণা নয়! বিশেষ করে এমপিথ্রি প্লেয়ার, ক্যামেরা—যেগুলো বাচ্চাদের একসঙ্গে খেলতে ও সামাজিক হতে সাহায্য করে।”
ভিডিওর নিচে আরও মন্তব্য দেখা গেছে— “আমাদের আবার এই যুগে ফিরে যাওয়া দরকার” “এটা যেন ৯০-এর দশক বা ২০০০-এর শুরুর জীবন।”
ব্রুকলিনে টেক ট্রাইবের মতো প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ও সংগঠনগুলো এই কোশের প্রযুক্তি তৈরি ও সার্টিফাই করতে কাজ করছে, যাতে এগুলো ধর্মীয় ব্যবহারের জন্য নিরাপদ হয়।
