গত কয়েক বছরে মানুষ এগুলির প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছে যে সকাল ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতের ঘুমনোর আগে পর্যন্ত স্মার্টফোনের স্ক্রিনে চোখ আটকে থাকে। অনেকে চাইলেও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকতে পারছেন না। এটা এখন একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এটা এমন এক ধরনের নেশা, যা ধীরে ধীরে মানসিক এবং শারীরিক অসুস্থতা ডেকে আনতে পারে। যদি আপনি নিজেও এই সমস্যার সম্মুখীন হন তা হলে জেনে রাখুন, এই নেশা থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব নয়। আমরা আপনাকে এমন ৫টি সহজ উপায় বলছি, যার মাধ্যমে আপনি সোশ্যাল মিডিয়ার নেশা থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি পেতে পারেন।
advertisement
সোশ্যাল মিডিয়ার নেশা ছাড়ার আগে এটা বোঝা খুবই জরুরি যে এই আসক্তি হয় কেন? আসলে যখন আপনি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করেন তখন প্রতি মুহূর্তে কিছু না কিছু নতুন জিনিস দেখতে পান — যা আপনার মস্তিষ্কে একধরনের উত্তেজনা তৈরি করে। এই উত্তেজনার ফলে মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। ডোপামিন হল এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার, যা আমাদের আনন্দ ও তৃপ্তির অনুভূতি দেয়।
এই একই হরমোন তখনও নিঃসরণ হয় যখন কেউ নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ করে। এই আনন্দের অনুভূতি আবার পেতে মস্তিষ্ক আমাদের বারবার সোশ্যাল মিডিয়া চালাতে বাধ্য করে — আর এখান থেকেই শুরু হয় আসক্তি।
এর পাশাপাশি মস্তিষ্কে কাজ করে FOMO (Fear of Missing Out) — অর্থাৎ, কিছু না কিছু মিস করে ফেলছি এই আশঙ্কা। এই ভয়ও এক বড় কারণ, যার জন্য আমরা ঘন ঘন সোশ্যাল মিডিয়া খুলে দেখতে থাকি।
১. এক দিনের জন্য ডিজিটাল ডিটক্স দিয়ে শুরু করুন
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে হঠাৎ পুরোপুরি দূরে থাকা সহজ নয়। তাই শুরু করুন সপ্তাহে একদিন বা উইকএন্ডে পুরোপুরি সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ রেখে। প্রথমে একটু কঠিন মনে হলেও ধীরে ধীরে এটা অভ্যাসে পরিণত হবে। আপনার মস্তিষ্ক ও মন বিশ্রাম পাবে। কয়েক মাস পর আপনি নিজেই অনুভব করবেন যে জীবন কেবল সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয় তা হলে সোশ্যাল মিডিয়ার সব অ্যাপ ডিলিট করে দিন।
২. সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন বন্ধ করুন
ডিজিটাল ডিটক্স শুরু করার পর দ্বিতীয় ধাপে আপনার উচিত, ফোনের সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশন বন্ধ করা। প্রায়ই দেখা যায়, ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসলে আমরা সেটা দেখতে গিয়ে পুরো সোশ্যাল মিডিয়ার জালে আটকে পড়ি। এই ফাঁদ থেকে বাঁচতে ফোনের নোটিফিকেশন অফ করে দিন অথবা সাইলেন্ট মোডে রাখুন।
৩. ফোন ব্যবহার করার জন্য সময়সীমা ঠিক করুন
যদি আপনি একেবারে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়তে না পারেন, তাহলে ব্যবহারের একটা সীমা নির্ধারণ করুন। আপনার ফোন বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোর জন্য প্রতিদিন কতটা সময় ব্যবহার করবেন, তা নির্ধারিত করে দিন। আজকাল বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই এই ধরনের Screen Time বা App Limit ফিচার থাকে। এই ফিচার অন করে আপনি দেখতে পারবেন, কোন অ্যাপে আপনি কত সময় দিচ্ছেন। তাতে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সহজ হবে।
আরও পড়ুন- মাসতুতো বোনকে বিয়ে! এই পাক ক্রিকেটারের নাম জড়ায় তামান্না ভাটিয়ার সঙ্গে, তার পর…
৪. বাড়িতে ‘ফোন ফ্রি জোন’ তৈরি করুন
আমরা প্রায়ই খাওয়ার সময় বা ঘুমানোর আগে সবচেয়ে বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি। এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বাড়িতে ‘ফোন ফ্রি জোন’ বানাতে হবে। যেমন — বেডরুমে ফোন নিষিদ্ধ করুন, ডাইনিং টেবিলে ফোন না নেওয়ার নিয়ম করুন।
৫. কোনও অ্যাকটিভিটিতে নিজেকে যুক্ত করুন
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকতে হলে বাস্তব জীবনে কিছু রিয়েল অ্যাকটিভিটিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। যেমন: বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, গার্ডেনিং, মিউজিক, ডান্স বা আঁকাআঁকি শিখুন, হাঁটতে বেরোন বা জিমে ভর্তি হন, কোনও স্পোর্টস অ্যাকটিভিটিতে অংশ নিন। নিজেকে এমনভাবে ব্যস্ত রাখুন যাতে সোশ্যাল মিডিয়া চালানোর প্রয়োজনটাই আর মনে না হয়।