গত তিন বছর ধরে মায়ের দেহ আগলে রেখেছেন শুভব্রত ৷ রাসায়নিকের সাহায্যে মৃতদেহ সংরক্ষণের পদ্ধতিকে বলা হয় ক্রায়ো প্রিজারভেশন ৷ দেহ সংরক্ষণের এই পদ্ধতি বেশ অনেক বছরের পুরনো ৷ এই নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয় রাশিয়াতে ৷ মৃতদেহ সংরক্ষণ নিয়ে অনেক পড়াশোনাই করেছিলেন শুভব্রত ৷ তার বাড়িতে এসংক্রান্ত নানারকম বইও পাওয়া গিয়েছে ৷
advertisement
আরও পড়ুন-মরা মাকে বাঁচাতেই কি দেহ সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা করতে চেয়েছিলেন ছেলে শুভব্রত ?
সিনেমাকেও হার মানাবে শুভব্রতর কাহিনি ৷ প্রায় তিন বছর ধরে বাড়িতে মায়ের মৃতদেহ আগলে ধরে রেখেছিল সে ৷ বাড়িতে একটি ফ্রিজারে মায়ের দেহ রেখে দিয়েছিল ৷ কিন্তু কেন সে এমনটা করেছিল ? মায়ের প্রতি ভালবাসা থেকেই ? নাকি এর পিছনে ছিল অন্য কোনও কারণ ? পুলিশের অনুমান, পেনশন তুলতেই মৃত মায়ের টিপ সই নিত শুভব্রত ৷ মৃত্যুর পরেও যাতে নিয়মিত মায়ের পেনশন পাওয়া যায়, তার জন্যই দেহ সংরক্ষণ করে ফ্রিজারে ঢুকিয়ে রেখেছিল সে ৷
৫০ হাজার টাকা পেনশন পেতেন মা ৷ তাঁর মৃত্যুর পরও নিয়মিত পেনশন তুলে গিয়েছে ছেলে শুভব্রত ৷ বেকার ছেলে ঘরে বসে বসে ৫০ হাজার টাকা আদায়ের লোভ সামলাতে পারেনি ৷ সেকারণেই কি মায়ের মৃতদেহ গত প্রায় তিন বছর ধরে আগলে রেখেছিল সে ? এবিষয় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ জারি রেখেছে ৷
আরও পড়ুন-মায়ের মৃতদেহ কীভাবে এতদিন বাড়িতে সংরক্ষণ করেছিল শুভব্রত ? সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
এফসিআইয়ের প্রাক্তন কর্মী বীণা মজুমদার প্রায় তিন বছর আগে বেহালার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর স্বামী গোপালচন্দ্র মজুমদারও ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিক ছিলেন। স্ত্রী-র মৃত্যুর পর আর সৎকার করেননি। ৯০ বছর বয়সী গোপালচন্দ্রবাবুর কথাতেও অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। তাঁর বিশ্বাস ছিল, ছেলেই স্ত্রীকে বাঁচাবেন।
শুভব্রতর বাড়ি থেকে একাধিক দেশি-বিদেশি মেডিক্যাল জার্নাল উদ্ধার হয়েছে। এছাড়াও, ইন্টারনেটে এই ব্যাপারে দীর্ঘ পড়াশুনা করেছিলেন শুভব্রত। গতকাল গ্রেফতারের পর এদিনও তাঁকে জেরা করা হয়। তাঁর মেডিক্যাল টেস্টও করা হয়েছে। শুভব্রতকে জেরা করতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চেয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বাবা গোপাল মজুমদারকেও।
মরা মানুষকে জীবিত করার গবেষণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই হচ্ছে ৷ সেটা জানতেন শুভব্রত ৷ এ সংক্রান্ত নানা বইও তিনি সংগ্রহ করেছিলেন ৷ বিভিন্ন বিদেশি ভাষা জানতেন শুভব্রত ৷ সেকারণে রাশিয়া, আমেরিকা, চিনের মতো বিভিন্ন দেশ থেকে মৃতদেহ সংরক্ষণ সংক্রান্ত বই কিনে এনেছিলেন ৷ ইন্টারনেটেও এই সংক্রান্ত বিভিন্ন জার্নাল শুভব্রত পড়তেন বলে জানা গিয়েছে ৷ তার বিশ্বাস ছিল , যদি কোনওদিন মৃত মানুষ জীবিত হওয়ার বিষয়টি আবিষ্কৃত হয় ৷ তাহলে তার মা-ও বেঁচে উঠবেন একদিন ৷