সচিন শুধু পরিসংখ্যানেই মহান ছিলেন না, তাঁর দেশপ্রেম এবং আত্মত্যাগও ছিল অসাধারণ। তিনি নিজের শারীরিক অবস্থার তোয়াক্কা না করে, এমনকী অসুস্থ অবস্থাতেও ভারতের জন্য মাঠে নামতেন। তিনি বিশ্বকাপের ম্যাচেও নিজের স্বাস্থ্যের দিকে না তাকিয়ে খেলেছেন একটা সময়। তাঁর কাছে ভারতের জয়ই ছিল সবচেয়ে বড়।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে সচিন তেন্ডুলকারের ৯৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আজও অমলিন। তিনি উরুর সমস্যা (থাই স্ট্রেইন) নিয়েও ক্রিজে অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে দলের জন্য লড়ে গিয়েছিলেন। তবে অনেকেই জানেন না, সেই বিশ্বকাপেই এক পর্যায়ে সচিন গুরুতর ডায়ারিয়ায় ভুগছিলেন। কিন্তু শরীর দুর্বল থাকার পরও তিনি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচে মাঠে নামেন। শরীর খারাপ নিয়েও ভারতের জন্য খেলেন তিনি।
advertisement
আরও পড়ুন- গিলের ব্যাটের মত দম আছে ইংল্যান্ডের ‘বাজবলে’! ‘হিম্মত’ থাকলে করে দেখাক ৬০৮ রানের টার্গেট
সচিনের কাছে দেশপ্রেম খেলাধুলার চেয়েও বড় ছিল। তাঁর কাছে ম্যাচ মানে শুধুই স্কোর করা নয়, বরং দেশের জয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া। অসুস্থ শরীরেও মাঠে নামার এই সিদ্ধান্ত তাঁর মানসিক দৃঢ়তা, আত্মত্যাগ এবং দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসার প্রমাণ এজন্যই তাঁকে শুধু “ব্যাটসম্যান” নয়, বলা হয় “ক্রিকেটের ঈশ্বর”।
সচিন নিজের আত্মজীবনী ‘Playing It My Way’-এ লিখেছেন- “পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওটাই ছিল আমার কেরিয়ারের একমাত্র ম্যাচ, যেখানে আমি রানার নিয়েছিলাম। আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল আমার গায়ে যেন ৫০০ কেজি ওজন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, ওই সময়ে দলের ফিজিও অ্যান্ড্রু লিপাস তাঁর পরিস্থিতি ভালো করে জানতেন। ম্যাচের সময় তীব্র ব্যথা এবং পেশিতে টান নিয়েও তিনি দৌড়চ্ছিলেন, আর সেটা শরীরের জন্য বিপজ্জনক ছিল। একসময় তিনি মাঠেই লুটিয়ে পড়েন। শ্রীলঙ্কার ম্যাচের আগে তিনি অতিরিক্ত পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট পান করেছিলেন, যাতে পেশিতে টান না পড়ে! কিন্তু এর উল্টো প্রতিক্রিয়া হয় এবং তিনি ডায়েরিয়াতে আক্রান্ত হন।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে সচিন নিজের শরীর সামলাতে অদ্ভুত এক উপায় বেছে নেন। তিনি আন্ডারওয়্যারে টিস্যু পেপার পরে খেলেছিলেন, যাতে শারীরিক সমস্যা কিছুটা কমানো যায়। প্রায় ১৬০ মিনিট (প্রায় ৩ ঘণ্টা) ক্রিজে ব্যাট করেন সচিন। ৯৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন সেদিন।