১. ২০২৫ এশিয়ান ইয়ুথ গেমসে রেকর্ড পারফরম্যান্স:
২০২৫ এশিয়ান ইয়ুথ গেমসে ভারত তাদের সেরা পারফরম্যান্স করে। মোট ৪৮টি পদক জেতে ভারত—এর মধ্যে ১৩টি সোনা, ১৮টি রূপা ও ১৭টি ব্রোঞ্জ। এটি ছিল এশিয়ান ইয়ুথ গেমসে ভারতের সর্বকালের সেরা সাফল্য, যা ২০২৬ ইয়ুথ অলিম্পিক্সের জন্য একাধিক কোয়ালিফাইং স্লটও এনে দেয়। কুস্তি, বক্সিং, অ্যাথলেটিক্স, কবাডি ও ভারোত্তোলনসহ বিভিন্ন খেলায় ভারতীয় তরুণ অ্যাথলেটরা শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখায়।
advertisement
২. ইতিহাস সৃষ্টি: বিশ্ব তীরন্দাজি চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ:
২০২৫ সালে বিশ্ব তীরন্দাজি চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় পুরুষ কম্পাউন্ড দল স্বর্ণপদক জেতে। এটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রথম কম্পাউন্ড তীরন্দাজিতে সোনা জয়। ঋষভ যাদব, প্রভাত সালুঙ্কে ও পৃথমেশ ফুগে-র মতো তরুণ খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এই খেলায় ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে স্পষ্ট করে তোলে।
৩. এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত সাফল্য:
২০২৫ এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এবং মোট ২৪টি পদক জেতে। এর মধ্যে একাধিক জাতীয় রেকর্ডও অন্তর্ভুক্ত ছিল। গুলবীর সিং ৫,০০০ মিটার ও ১০,০০০ মিটার—দুটিতেই সোনা জেতেন, আর অবিনাশ সাবলে ও জ্যোতি ইয়ারাজির মতো অ্যাথলেটরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেন।
৪. শুটিং বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম স্বর্ণ:
২০ বছর বয়সী সম্রাট রানা ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে নিজের কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য অর্জন করেন। এটি ভারতীয় শুটিং ইতিহাসে এক স্মরণীয় মুহূর্ত।
৫. বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের দাপট:
গ্রেটার নয়ডায় অনুষ্ঠিত ২০২৫ বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে জ্যাসমিন ল্যাম্বরিয়া মহিলা ৫৭ কেজি বিভাগে সোনা জেতেন। নুপুর সেরন +৮০ কেজিতে রূপোর পদক পান। বিশ্ব বক্সিং কাপ ফাইনালস ২০২৫-এ ভারত মোট ২০টি পদক (৯ স্বর্ণ, ৬ রৌপ্য, ৫ ব্রোঞ্জ) জিতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে।
৬. খো-খো বিশ্বকাপ জয়:
ভারতীয় মহিলা খো-খো দল ২০২৫ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা চাইনিজ তাইপেকে হারিয়ে এই ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করে, যা ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী খেলাটির বিশ্বব্যাপী প্রসারকে তুলে ধরে।
৭. চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের আধিপত্য:
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর ফাইনালে ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জেতে। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে এই জয় একদিনের ক্রিকেটে ভারতের শক্ত অবস্থানকে আরও মজবুত করে।
৮. দাবায় বৈশ্বিক রেকর্ড ও সম্মান:
তরুণ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ডি.গুকেশ ২০২৫ সালে ম্যাগনাস কার্লসেনসহ শীর্ষ দাবাড়ুদের হারিয়ে আলোচনায় আসেন এবং খেলরত্নসহ একাধিক বড় সম্মান লাভ করেন। এটি আন্তর্জাতিক দাবা খেলায় ভারতের অবস্থান আরও উঁচুতে তুলে ধরে।
৯. প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল:
২০২৫ সাল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের জন্য এক স্বর্ণালী অধ্যায়। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস গড়ে ভারত। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য ও আক্রমণাত্মক খেলার নিখুঁত সমন্বয় দেখায় দলটি। হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে এই জয় নারী ক্রিকেটকে সমতা, পরিচয় ও সম্মান এনে দেয় এবং লাখো মেয়েকে খেলাধুলার স্বপ্ন দেখায়।
১০. ভারতের গর্ব প্যারা-তীরন্দাজ শীতল দেবী:
প্যারা-তীরন্দাজ শীতল দেবী বিশ্ব শিরোপা জিতে দেশের গর্ব বাড়ান। তিনি জেড্ডায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ (পর্ব তিন)-এর জন্য ভারতের সক্ষম জুনিয়র দলে জায়গা করে নেন। প্যারালিম্পিকের পাশাপাশি সাধারণ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া অল্প কয়েকজন খেলোয়াড়ের একজন হয়ে শীতল প্রমাণ করেছেন—সীমাবদ্ধতা শরীরে নয়, চিন্তায়।
১১. দৃষ্টিহীনদের মহিলা ক্রিকেটে টি২০ বিশ্বকাপ জয়:
২০২৫ সালে ভারতীয় দৃষ্টিহীনদের মহিলা ক্রিকেট ভারতীয় দল টি২০ বিশ্বকাপ জেতে। কলম্বোর পি সারা ওভালে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা নেপালকে ৭ উইকেটে হারায়। প্রথমবার আয়োজিত এই বিশ্ব টুর্নামেন্টে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়।
১২. ব্যক্তিগত ও অন্যান্য খেলায় ভারতের ঐতিহাসিক আধিপত্য:
২০২৫ সালে দলগত খেলাই নয়, ব্যক্তিগত ও উদীয়মান খেলাতেও ভারত বিশ্বমঞ্চে শক্ত উপস্থিতি জানায়। দাবায় ডি. গুকেশ ও দিব্যা দেশমুখ, অ্যাথলেটিক্সে নীরজ চোপড়ার ৯০ মিটার জ্যাভেলিন থ্রো, প্যারা-স্পোর্টসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ২২ পদক, স্পেশাল অলিম্পিক্সে ৩৩ পদক—সব মিলিয়ে ২০২৫ ভারতীয় ক্রীড়ার এক ঐতিহাসিক অধ্যায় হয়ে থাকবে।
