#কলকাতা: বছর দুয়েক আগের ঘটনা। তাঁর আধার এবং ভোটার কার্ড জাল কিনা তা খতিয়ে দেখতে কলকাতা পুলিশ অনুসন্ধান করে দেখেছিল। অভিযোগ ছিল, কলকাতায় এসে নকল পরিচয়পত্র বানিয়ে ক্রিকেট খেলছেন শাহবাজ আহমেদ। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
আইপিএলে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া বাংলার এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে কঠিন সময়ের মধ্যে যেতে হয়েছিল। জন্ম হরিয়ানার মেওয়াটে। বাবা সরকারি কর্মচারী। মা গৃহবধূ। মেওয়াটে শাহবাজের ক্রিকেট খেলা শুরু। বছর পাঁচেক আগে কলকাতায় চলে আসেন পাকাপাকিভাবে। কলকাতা ক্লাব ক্রিকেটের কথা শুনে এই শহরে আসা। তপন মেমোরিয়ালের হয়ে সিএবি ক্লাব ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে একটি ম্যাচে।
advertisement
প্রথম ডিভিশন ক্লাব পুলিশের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে খেলার পর শাহবাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন পুলিশ ক্লাবের কর্তারা। অভিযোগ ছিল ভিন রাজ্যের ক্রিকেটার বাংলায় নতুন করে পরিচয় পত্র বানিয়ে স্থানীয় ক্রিকেটার হিসেবে খেলছেন সিএবি ক্রিকেটে। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে দিয়ে সিএবি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাজকে নির্বাসিত করে সিএবি। পুলিশ ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষ থেকেও আলাদা করে খোঁজখবর শুরু হয়। পরিচয় পত্র নিয়ে ভেরিফিকেশন করে পুলিশ। সেই সময় খেলা বন্ধ রাখতে হয়েছিল শাহবাজকে। তদন্তের পর কোন অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় ফের খেলা শুরু করে দেন শাহবাজ।
ঘরোয়া ক্লাব ক্রিকেটে ধারাবাহিক সাফল্যের পর সুযোগ মেলে বাংলা দলে। চলতি মরশুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক সাফল্যের পর আইপিএলে সুযোগ পেলেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। বিরাটের টিমে সুযোগ পাওয়া উচ্ছ্বসিত শাহবাজ অতীতের ঘটনা মনে রাখতে চান না। শুধু বলেন,হরিয়ানার হয়ে আমার রেজিস্ট্রেশন ছিল। তাই হয়তো একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আমি কোনও পর্যায়েই হরিয়ানার রাজ্য টিমের হয়ে ক্রিকেট খেলিনি। আমার যাবতীয় ক্রিকেট বাংলার হয়েই। নিলামে প্রথমে অবিকৃত ছিলেন শাহবাজ। শেষপর্বে ফ্রাঞ্চাইজিদের অনুরোধে ফের নাম উঠে শাহবাজের।
বেস প্রাইজ ২০ লক্ষ টাকায় আরসিবি কিনে নেয় বাংলার ক্রিকেটারকে। প্রথমে অবিক্রিত থাকায় হতাশ লেগেছিল কিনা জানতে চাইলে শাহবাজ নিউজ18 বাংলাকে জানান, আমি নিজে একটা ভুল করে ফেলেছিলাম ফর্ম ফিলাপের সময়। নিজেকে উইকেটকিপার হিসেবে দেখিয়েছিলাম। ফলে একটা সমস্যা হয়েছিল। আমি শুনেছিলাম আমাকে নেওয়ার ব্যাপারে দু'একটি ফ্রাঞ্চাইজি আগ্রহী রয়েছে। ট্রায়ালও দিয়েছি। তাই শেষ পর্যন্ত নিলাম দেখি। আমার মনে হয় পরে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বুঝতে পারে অবিকৃত থেকে যাওয়া শাহাবাজ আসলে অলরাউন্ডার শাহবাজ আহমেদ।
কলকাতায় সুযোগ না পাওয়ায় কোন আক্ষেপ রয়েছে কী? ২৫ বছরের যুবকের উত্তর, ‘‘ আইপিএলে আমার প্রিয় দল কেকেআর। ওখানে সুযোগ পেলে ভাল লাগতো। তবে ভারতীয় অধিনায়কের দলে সুযোগ পাওয়াটা আরও বড় প্রাপ্তি। শুধু কোহলি নন এবি ডেভিলিয়ার্স, যুজবেন্দ্র চাহালদের মত ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করতে পারব এটা ভেবেই খুব আনন্দ লাগছে।’’
ইতিমধ্যেই আরসিবির নতুন ব্যাটিং কোচ সাইমন কাটিচ এর থেকে ফোন পেয়েছেন। সতীর্থরাও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শাহবাজের প্রিয় ক্রিকেটার কে জানতে চাইলে অনেকক্ষণ ভেবেও কোন ক্রিকেটারের নামই বলতে পারলেন না এই অলরাউন্ডার। তবে গলায় আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট। বিরাটের প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়া নিয়ে এখন থেকেই কিছু ভাবতে নারাজ। আপাতত ভাবনায় রয়েছে বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে ভাল পারফরম্যান্স করা। শাহবাজের জবাব, ‘‘ আইপিএলের আগে এটা নিয়ে চিন্তা করব। এখন শুধু শুধু ভেবে চিন্তা বাড়াতে চাই না। বছর দুয়েক আগে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া পর ঠিকই কী মনে হয়েছিল ? প্রশ্ন শুনেই মিতভাষী শাহবাজের গলার আওয়াজ আরও স্পষ্ট। আমি কোনও অন্যায় করিনি। তাই কোন ভয় ছিল না। আমার ক্লাব তপন মেমোরিয়াল, কোচ পার্থ স্যার সবাই পাশে ছিলেন। তবে একটা খারাপ লেগেছিল। ক্লাব নিজেদের স্বার্থের জন্য আমাকে জড়িয়ে ছিল। একটা ম্যাচ খেলতে পারিনি তবে জানতাম আমি ঠিক নির্দোষ প্রমাণিত হব।’’
শারীরিক গঠন দেখলে এক নজরে ক্রিকেটার মনে হয় না শাহবাজকে। প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেললেন বিরাট সতীর্থ। সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘ যত কম মনে হয় ততো আমার জন্যই ভাল। বারবার নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ থাকে। বাংলা দলের সঙ্গে শনিবার শহরে ফিরবেন। তারপরেই রঞ্জির দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেবেন। শেষ আইপিএলের বিরাটের দলে বাংলা থেকে আরেক ক্রিকেটার প্রয়াস রায় বর্মণ খেলেছিলেন। শাহবাজ জানেন একটা ম্যাচে খারাপ পারফরম্যান্স করায় আর সুযোগই পাননি প্রয়াস। নতুন মরশুমে জন্য আইপিএল দল জোটেনি। তাই শাহবাজ নিজের ‘গোল’ গুলো ধাপে ধাপে ঠিক করতে চান। প্রথম টার্গেট ছিল আইপিএল নিলামে দল পাওয়া। এবার আরসিবির নেটে নিজেকে প্রমাণ করা। অতীত ভুলে ভবিষ্যতে তাকানোই যে টার্গেট।