এভাবে কেটে গেল পাঁচ মিনিট, সাত মিনিট, দশ মিনিট। বার্ট্রাম মনে মনে খুশিই হলেন, সতীর্থরা তাহলে দুর্দান্ত খেলছে। বল তাঁর কাছে আসতেই দিচ্ছে না। তাঁকেও ভাল খেলতে হবে। একটা বলও তিনি মিস করবেন না। ১৫ মিনিট কেটে গেল। গোলপোস্টের সামনে বার্ট্রাম দাঁড়িয়ে আছেন ! সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে। দু’হাত দু’দিকে ছড়ানো।
advertisement
এক নিরাপত্তারক্ষী প্রথম লক্ষ্য করেন, গোলপোস্টের সামনে বার্ট্রাম একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি বার্ট্রামকে গিয়ে বলেন, ‘‘কী ব্যাপার, আপনি এখনও দাঁড়িয়ে? খেলা তো অনেকক্ষণ আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। সবাই চলে গিয়েছে।” আকাশ থেকে পড়েন বার্ট্রাম। খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে? আসলে ঘন কুয়াশার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই খেলা বন্ধ করে দেন রেফারি। খেলোয়াড়, দর্শকদের চিৎকার চেঁচামেচিতে বাঁশির আওয়াজ আর তাঁর কান পর্যন্ত পৌঁছয়নি।
বিশ্বাস হয় না বার্ট্রামের। ভাবেন, নিরাপত্তারক্ষী বোধহয় তাঁর সঙ্গে মজা করছে। সতীর্থরা তাঁকে না ডেকে চলে যাবে তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না। শেষে ড্রেসিং রুমে গিয়ে দেখেন, সত্যিই তাই। সতীর্থরা বসে আছে। তাঁকে না জানিয়েই সবাই মাঠ ছেড়ে চলে যায়। খুব অভিমান হয় বার্ট্রামের। ড্রেসিংরুমে তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি হয়। কিন্তু এই ঘটনা বার্ট্রামের মনে আজীবনের মতো দাগ কেটে যায়।
১৯৩৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর ইংলিশ লিগের (তখনও প্রিমিয়ার লিগ হয়নি) চার্লটন বনাম চেলসি ম্যাচে ঘটেছিল এই ঘটনা। যা ফুটবল ইতিহাসে অদ্ভুত এবং স্মরণীয় ঘটনা হয়ে রয়েছে। ফুটবলপ্রেমীদের কাছেও এই ঘটনা অনেকটা রূপকথার মতো।
স্যামুয়েল বার্ট্রাম কিংবদন্তি খেলোয়াড়। চার্লটনের হয়ে অভিষেক হয়। কোনওদিন দলবদল করেননি। পুরো কেরিয়ার চার্লটনেই কাটিয়েছেন। খেলেছেন ৬০০-এর বেশি ম্যাচ। কিন্তু চেলসির বিপক্ষে সেই ম্যাচের কথা কোনওদিন ভোলেননি।
আত্মজীবনীতেও সেই ম্যাচের কথা লিখে গিয়েছেন বার্ট্রাম, ‘‘মনে হচ্ছিল, খেলোয়াড়ের সংখ্যা যেন কমছে। তবে নিশ্চিত ছিলাম, ম্যাচ আমাদের দখলেই রয়েছে। কারণ বল আমাদের দিকে এলে সতীর্থরা রক্ষণে নেমে আসত। কাউকে না কাউকে দেখতে পেতাম।’’ কিন্তু তার আগেই যে রেফারির বাশি বেজে গিয়েছে বুঝতে পারেননি বার্ট্রাম।