ডিডিএলজে মনে পড়ে ? নয়ের দশকে শাহরুখ-কাজলের সুপার-ডুপার হিট সেই সিনেমা। ক্লাইম্যাক্সে অমরিশ পুরির মুখে বলিউডে মিথ হয়ে থাকা সেই ডায়লগ। ‘‘যা সিমরন যা, জি লে আপনি জিন্দেগি।’’ লক্ষ্মীবারের বাগানেও যেন সেই ডিডিএলজে-র সিক্যুয়াল। ১৩০ বছর ধরে পথ চলতে থাকা একটা ক্লাব, একটা ঐতিহ্যের পুর্নঃজন্ম। ইতিহাসের পাতায় নতুন মাত্রা যোগ। ১৯১১-র শিল্ডজয়ের গন্ধ গায়ে মেখেই সাবালক হতে চাওয়া গঙ্গাপাড়ের ক্লাবের। জল্পনা থামিয়ে ছয় বছরের এটিকে-র হাত ধরল শতাব্দী পেরোন মোহনবাগান। লক্ষ্মীবারেই হয়ে গেল মউ স্বাক্ষর। এবার আগামী দিনে আইনি ধাপ পেরিয়ে চুক্তিসই, বোর্ড গঠনের পালা। ২০২০-র ১ জুন থেকে শুরু হবে নতুন ক্লাবের সফরনামা।
advertisement
নতুন ক্লাবের ৮০ শতাংশ শেয়ার থাকছে এটিকে-র হাতে। ২০ শতাংশ নিজের হাতে রাখছেন সৃঞ্জয় বোস, দেবাশিস দত্তরা।হাতে মাত্র ২০ শতাংশ শেয়ার থাকলেও নতুন ক্লাবে আঁচড় পড়ছে না বাগানের ঐতিহ্যের সবুজ-মেরুনে। অটুট থাকছে বাগানের পাল তোলা নৌকার লোগো। মোহনবাগান তাহলে বিক্রি হচ্ছে না? নিউজ এইট্টিন বাংলার প্রশ্নের উত্তরে অটুট সৃঞ্জয়-দেবাশিসের ডিফেন্স। অর্থসচিব দেবাশিস দত্তর আশ্বাস, ‘‘মোহনবাগানের জার্সিতে সবুজ-মেরুন থাকবে। সেখানে কোন পরিবর্তন হবে না। ক্লাবের লোগোও থাকবে অপরিবর্তিত।’’ পাশে বসা সহসচিব সৃঞ্জয় বোস যোগ করলেন,‘‘সদস্য-সমর্থকদের প্রাপ্তির খাতায় যোগ হবে বাড়তি মাত্রা। ক্লাবের পরিকাঠামো উন্নত হবে। সদস্য-সমর্থকদের আব্দার মেনে পরের মরশুম থেকেই ক্লাব আইএসএল-এ খেলবে। কোন খরচ ছাড়াই আইএসএল দেখবেন সদস্যরা।’’নতুন ক্লাবের নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
মোহনবাগানের আগে বা পরে এটিকে যোগ হবে। বাহ্যিক পরিবর্তন বলতে এইটুকুই। বৃহস্পতিবার দুপুরেই মোহনবাগানের জার্সি নিয়ে নিজেদের ছবি পোস্ট করেন এটিকে কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ও উৎসব পারেখ। নতুন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল বাংলার ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও। মোহনবাগান-এটিকের সংযুক্তিকরণের দিনে ট্যুইট করে শুভেচ্ছা জানান ফেডারেশন সভাপতি প্রফুল প্যাটেল ও সচিব কুশল দাসও। দুই ক্লাবের সংযুক্তিকরণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্লাবলনে জড়ো হতে থাকেন সদস্য-সমর্থকরা। ক্লাবের লোগো, জার্সির রং অটুট থাকছে জেনে স্বস্তি নামে সমর্থকমহলেও। বরং ক্লাবে নতুন বিনিয়োগকারী এসেছে শুনে উচ্ছ্বসিত বাগানের জেন ওয়াই। সচিব টুটু বোসের মুখেও তৃপ্তির হাসি।
একার কাঁধে ক্লাবকে বয়ে নিয়ে যাওয়া ডাবল টু বলছিলেন,‘‘আইএসএলে খেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কথা রাখলাম। সৌদির বহুজাতিক তেল কোম্পানির সঙ্গে কথা এগিয়েও পিছিয়ে এসেছিলাম একটাই কারণে। বাঙালির ফুটবল আবেগ যদি ওরা না বোঝে! যদি দু-বছর পর চলে যায়। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা কলকাতা ফুটবলের আবেগ টা বোঝেন। ওনার পরিবারের অনেকে মোহনবাগানের সদস্য। তাই মনে হল ওনার হাতেই নিরাপদ ক্লাব।’’খুব একটা ভুল বলেননি টুটু বোস। বরং মোহনবাগান-এটিকে সংযুক্তিকরণে কলকাতা ফুটবল গতি পাবে, এটাই মনে করছে ক্লাবের এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্যরা। পরের মরশুমে দল গড়ার ক্ষেত্রেও প্রাধান্য পাবে চলতি মরশুমে কোচ-ফুটবলারদের পারফর্ম্যান্স। অ্যান্তোনিও হাবাসের সঙ্গে কিবু ভিকুনা থাকতেই পারেন কোচিং দলে। তেমনই ফুটবল দলে রয় কৃষ্ণার পাশে দেখাই যেতে পারে শুভ ঘোষ, শেখ সাহিল, বেইতিয়াদের। আইএসএলের পাশে কলকাতা লিগ, ডুরান্ডেও অংশ নেবে মোহনবাগান-এটিকে।পড়শি ক্লাবের নতুন ইনিংসে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারও। তিনি জানান, ‘‘মোহনবাগান আইএসএল খেললে, ইস্টবেঙ্গলও আইএসএল খেলবে। তবে নিজেদের ফ্যানবেসের কথা মাথায় রেখেই এগোবে ইস্টবেঙ্গল।’’সব মিলিয়ে ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে রেড লেটার ডে হয়েই থাকবে ১৬ জানুয়ারি, ২০২০।
